
মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান। ইসলামে মসজিদের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে। মূলত মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় নামাজ ও জিকিরের জন্য। তাই মসজিদকে দুনিয়াবী কথাবার্তা ও কাজকর্মের স্থান বানানো অথবা এ উদ্দেশ্যে মসজিদে জমায়েত হওয়া নাজায়েজ। রাসুলুল্লাহ (স.) মসজিদে বেচা-কেনা বা হারানো বস্ত্ত খুঁজে পাওয়ার এলান করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ: ১০৭৯)
আরেক হাদিসে এ বিষয়ে কঠিন ধমকি এসেছে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, কাউকে মসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখলে বলো- ‘তোমার বেচা-কেনা লাভজনক না হোক। তেমনিভাবে কাউকে যদি মসজিদে হারানো বস্ত্তর এলান করতে দেখো তাহলে বলো- আল্লাহ তোমার হারানো বস্ত্ত ফিরিয়ে না দিন (অর্থাৎ এ কাজটি খুবই নিন্দনীয়)। (জামে তিরমিজি: ১৩৩৬; সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১৩০৫)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মসজিদ প্রসাব, নাপাকি ও আবর্জনার উপযুক্ত নয়। বরং মসজিদ হল আল্লাহ তাআলার জিকির ও কোরআন তেলাওয়াতের জন্য। (মিশকাত: ৪৯২) মসজিদে কথা বলা সম্পর্কে হাদিস
তবে কোনো দ্বীনি কাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার পর প্রসঙ্গক্রমে দুনিয়াবী কোনো বৈধ কথাবার্তা বলা জায়েজ। এর বৈধতা রাসুলুল্লাহ (স.) এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। (দ্রষ্টব্য সহিহ বুখারি: ১/৬৩, ৬৪, ৬৫; রদ্দুল মুহতার (শামী): ১/৬৬২; আললু’লুউল মারসু: ৭৮, সহিহ মুসলিম: ২৮৫)
এছাড়াও মসজিদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিচার-ফয়সালা করা বৈধ। (বুখারি: ৬৩, ৪৫৯) ধর্মীয় পাঠদান ও শিক্ষাগ্রহণ বৈধ। (মুসলিম: ২৮৫; মুসনাদে আহমদ: ১২৯৮৪; ইবনে মাজাহ: ২২৭) এসব কাজ মূলত জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। তাই এগুলো মসজিদে করলে সমস্যা নেই। এছাড়াও প্রয়োজনে মসজিদে অবস্থান ও খাওয়াদাওয়া করা বৈধ। (আবু দাউদ: ৩১০১) বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানোও যাবে। (বুখারি: ৪৭৫, ৪৪০) তবে, মসজিদের পবিত্রতার আদবগুলো যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
অনেকে মসজিদে দুনিয়াবি কথাবার্তা বলার বৈধতা প্রমাণের জন্য এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যেন কথাবার্তা বলার জন্যই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তা সঠিক নয়, বরং শুদ্ধ ও সঠিক হলো- জিকিরের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার পর দুনিয়াবি কোনো বৈধ কথা বললে সেটি নাজায়েজ নয়, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে মসজিদকে দুনিয়াবি কথা ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলার আসর বানানো জায়েজ নয়।
মসজিদে কথা বলা নিয়ে কিছু জাল বর্ণনা প্রচলিত রয়েছে। যেমন- ‘মসজিদে (দুনিয়াবী) কথাবার্তা নেকিকে এমনভাবে খতম করে, যেমন আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে।’ এরকম আরেকটি বর্ণনা হলো- ‘মসজিদে কথাবার্তা নেক আমল খায়, যেরূপ পশু ঘাস-খড় খায়।’ এধরণের আরও বানোয়াট বর্ণনা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এসব বর্ণনা কোনো হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায় না।
প্রসঙ্গত, মসজিদ ছাড়াও যেকোনো স্থানে অযথা কথা ও আল্লাহর জিকির ছাড়া বৈঠক শেষ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি: ২৩১৮) পবিত্র কোরআনে প্রকৃত মুমিনদের পরিচয় বর্ণিত হয়েছে এভাবে— ‘তারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ৩) মসজিদে নিষিদ্ধ কাজ, মসজিদে হেলান দিয়ে বসা যাবে কি
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মসজিদের আদব রক্ষার ব্যাপারে সচেতন থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]