
সুরা আস্-সাফের ১২ ও ১৩ নং আয়াত আমাদের সামনে দুনিয়া ও আখিরাতের এক পূর্ণাঙ্গ সফলতার রূপরেখা তুলে ধরে। সাহাবায়ে কেরাম যখন জানতে চেয়েছিলেন, আল্লাহর পথে সংগ্রাম করলে এর প্রতিদান কী? তখন আল্লাহ তাআলা জান্নাত ও গুনাহ মাফের মহাপ্রতিশ্রুতি দিলেন। আর যখন তারা জিজ্ঞেস করলেন, দুনিয়াতে কি কোনো পুরস্কার আছে? তখন আল্লাহ দিলেন সাহায্য ও বিজয়ের সুসংবাদ।
এ আয়াতগুলো প্রমাণ করে, মুমিনের জীবন শুধুমাত্র আখিরাতমুখী নয়; দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। জান্নাত হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সাফল্য, আর দুনিয়ার বিজয় হলো সেই পথে এক শক্তি ও অনুপ্রেরণা।
অতএব, মুমিনের কর্তব্য হলো আল্লাহর পথে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রামকে জীবনের লক্ষ্য বানানো। তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় সাহায্য ও আখিরাতে জান্নাত উভয় পুরস্কারই তার ভাগ্যে জুটবে।
يَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوۡبَكُمۡ وَ يُدۡخِلۡكُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ وَ مَسٰكِنَ طَيِّبَةً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍؕ ذٰلِكَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ۙ﴿۱۲﴾ وَ اُخۡرَىٰ تُحِبُّوۡنَهَا ۖ نَصۡرٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ فَتۡحٌ قَرِیۡبٌؕ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
অর্থ: (তাহলে আল্লাহ) তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন, তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যেখানে নহর প্রবাহিত হয় এবং সেখানে দান করবেন সুন্দর আবাসস্থল। এটাই মহাসাফল্য। আর (এর সাথে রয়েছে) এমন এক পুরস্কার, যেটি তোমরা ভালোবাসো— আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং নিকটবর্তী বিজয়। অতএব, মুমিনদের সুসংবাদ দাও।
এই আয়াতগুলো সাহাবায়ে কেরামদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে। আখিরাতের পুরস্কার সম্পর্কে প্রশ্ন। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর কাছে জানতে চাইলেন,হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যদি আল্লাহর পথে জিহাদ করি, তবে আমাদের জন্য কী প্রতিদান রয়েছে? তখন আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেন, يَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوۡبَكُمۡ ... (আয়াত ১২) এতে জান্নাত, গুনাহ মাফ এবং চিরস্থায়ী আবাসের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
দুনিয়ার পুরস্কার সম্পর্কিত প্রশ্ন
আনসার সাহাবীগণ আবার জানতে চাইলেন, আমরা যদি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করি, তাহলে দুনিয়াতে কি কোনো প্রতিদান রয়েছে? তখন নাযিল হয় আয়াত ১৩, وَاُخۡرَىٰ تُحِبُّوۡنَهَا ...
এখানে আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতি দিলেন, মুসলমানরা আল্লাহর সাহায্য এবং শীঘ্র বিজয় লাভ করবে। তাফসির কুরতুবি (আস-সাফ ১৩), দারিমি শরীফ (ফাযায়িলুল কুরআন)
আয়াতের গভীর তাৎপর্য
আখিরাতের সাফল্য, আল্লাহ প্রথমে মুমিনদের আসল পুরস্কার, জান্নাত, গুনাহ ক্ষমা এবং চিরস্থায়ী শান্তির ঘর, এর কথা বলেছেন।
এরপর তাঁদের মনোবল বাড়াতে আল্লাহ দুনিয়ার পুরস্কার, বিজয় ও আল্লাহর সাহায্যের সুসংবাদ দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা মদীনা যুগেই দেখা যায়। বদর, খন্দক, হুদায়বিয়া, তারপর মক্কা বিজয়ে মুসলমানরা আল্লাহর সাহায্য প্রত্যক্ষ করেছে।
১. আল্লাহর পথে সংগ্রাম করলে দুনিয়া ও আখিরাত— দুই পুরস্কারই পাওয়া যায়। ২. জান্নাতই মুমিনের আসল কাম্য, তবে দুনিয়াতেও আল্লাহর সাহায্য অবধারিত। ৩. বিজয় শুধু শক্তির কারণে নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য লাভের কারণেই আসে।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]