শিরোনাম
নিউইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ হাসিনা
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:১৬
নিউইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ হাসিনা
নিউইয়র্ক থেকে
প্রিন্ট অ-অ+

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে আগ্রহীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভোটাররা ভোট দেবেন প্রার্থীর আচার-আচরণ এবং সামগ্রিক গুনাবলী বিবেচনা করে। বড় গাড়ি, বাড়ি আর টাকা দিয়ে ভোট পাওয়া যাবে না। জনগণের মন জয় করেই নির্বাচনে জিততে হবে। গত ৮ বছরে যে অর্জন সে সব বিস্তারিতভাবে এলাকার মানুষের কাছে জানাতে হবে।’


গত ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে বিশ্বখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে হোটেল ম্যারিয়ট মারকুইসের বলরুমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা-সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন।


সমাবেশে উপস্থিত প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার এই বার্তা নিজ নিজ এলাকার নেতাদের কাছে পৌছে দিন। কারণ, সামনের নির্বাচনে সকল ভোটার তার ভোটাধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগের মধ্য দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদেরকেই নির্বাচিত করনে।’


এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার ভাগ্নি বৃটিশ এমপি টিউলিপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘জনপ্রিয়তা কীভাবে বাড়াতে হয় সে হচ্ছে তার অনন্য উদাহরণ। প্রথম নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে সে জয়ী হয়েছিল। পরবর্তী নির্বাচনে ভোটের সে ব্যবধান ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বৃটেনে ভোট চুরি করা সম্ভব নয় অর্থাৎ টিউলিপ তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে সব সময় ভোটারদের মন জয় করতে সচেষ্ট থেকেছে।’


শেখ হাসিনা আরেকটি মৌলিক প্রসঙ্গের অবতারণা করে বলেন, ‘এলাকাবাসী গভীর পর্যবেক্ষণ রাখেন তার নেতা বানানোর ক্ষেত্রে। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের সন্তানরাও যাতে প্রতিবেশীদের সাথে সৎ-সম্পর্ক এবং ভালো আচরণ করে।’



দলীয় নেতাকর্মীদের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো বলেন, ‘আমি আমার এমপিদেরও বলেছি, আপনারা দেখেন, শেখেন। কীভাবে ভোটারের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করা যায়। ওই বড় বড় গাড়ি-বাড়ি হলেই ভোটাররা ভোট দেবে না। ভোটারদের সমস্যা জানতে হবে। সেগুলোর সমাধান করতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে আপনজন ভাবতে হবে। আগামীতে নির্বাচন। এই ইলেকশনটা বিরাট চ্যালেঞ্জ, এটা মনে রাখতে হবে।’


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনেই নির্বাচন আসছে। আমাকে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে হলে জনগণের ভোট পেতে হবে। জনগণ যেন পছন্দের প্রার্থী বাছাই করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে চাই।’


জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এসেছেন।


জাতিসংঘের সাধারণ সভাসহ নিউইয়র্কে তার ব্যস্ততার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের ভালোবাসা আর উচ্ছ্বাস দেখে সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে।’
তার প্রতি প্রবাসীদের ভালোবাসার উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের এ ভালোবাসাই তাকে প্রেরণা জোগায়। এ সময় তিনি প্রবাসীদের অবদানের কথাও বিশেষভাবে স্মরণ করেন।


রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রয়োজনে এক বেলা খেয়েও নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে, কিন্তু এই শরণার্থীদের যে ফিরিয়ে নিতে হবে, সে কথা মিয়ানমারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে।



তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারকে আমরা বলেছি, আপনাদের নাগরিক, তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাদেরকে নিরাপদ রাখতে হবে। তাদের আশ্রয় দিতে হবে। তাদের ওপর জুলুম অত্যাচার চলবে না।’


কক্সবাজারে গিয়ে নিজের চোখে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তাদের সাথে কথা বলেছি। আমার কেবল নিজেদের কথা মনে হয়েছে। আমাদের তো একদিন এইভাবে ওই হানাদার পাকিস্তানিদের কারণে এ ঘর থেকে ওঘরে আশ্রয় খুঁজে বেড়াতে হয়েছে। আমাদের ঘড়বাড়ি সব জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছিল। মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।


তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষও তো আশ্রয় নিয়েছিল। ভারতে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ছিল। আজকে যখন তারা বিপদে পড়েছে, অবশ্যই তাদের জায়গা দিতে হবে।”


শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকেই প্রশ্ন করেছে, এত মানুষের খাবার দেবেন কীভাবে? আমি তাদের একটা কথাই বলেছি; ১৬ কোটি মানুষ আমাদের। এই ১৬ কোটি মানুষকে যদি খাবার দিতে পারি তাহলে এই সাত-আট লাখকে খাবার দিতে পারব না?”


বাংলাদেশের মানুষকে ‘অনেক উদার’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে তারা একবেলা খাবে। অন্যবেলার খাবার এই আশ্রিত মানুষকে তুলে দেবে সেই মানসিকতা তাদের আছে। আমরা সেখানে লঙ্গরখানা খুলে দিয়েছি, চিকিৎসা, থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতেই হবে”।


যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন এবং পরিচালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।


প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ছিলেন এ অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা। এ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইরিন পারভিন, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আব্দুর রহিম বাদশা, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, সেক্রেটারি ইমদাদ চৌধুরী, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হারুন ভ’ইয়া এবং সেক্রেটারি শাহীন আজমল, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মমতাজ শাহনাজ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান সর্দার, শ্রমিক লীগ সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকনসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য শাখার নেতারা।


বিবার্তা/খোকন/যুথি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com