শিরোনাম
জোসনা রাতে নাইক্ষ্যংছড়ির আকাশে রঙ্গিন ফানুস
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৪৪
জোসনা রাতে নাইক্ষ্যংছড়ির আকাশে রঙ্গিন ফানুস
বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পূর্ণিমার জোসনা রাতে নাইক্ষ্যংছড়ির আকাশ রেঙেছে ফানুস দিয়ে। ফানুসের আলোয় আলোকিত হয়েছে পাহাড়ী পল্লীগুলো। ফানুসের আলো দূর আকাশে ছোট ছোট তারকার ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। বৌদ্ধ বিহারগুলো সেজেছে মোমবাতির আলোয়। এ যেন এক মনমুগ্ধকর দৃশ্য। ভীড় করে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ।


বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ও আকষর্ণীয় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমার উপলক্ষে উপজেলার ৩৭টি পাহাড়ী পল্লীতে সন্ধ্যার পরপরই চলে ফানুস ওড়ানোর মহোৎসব।


সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ধাবনখালী মার্মা পাড়ার বৌদ্ধ বিহার। বুধবার সন্ধ্যার পরপরই লোকে লোকারণ্য। বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙ্গিন কাগজ দিয়ে তৈরী করা ফানুস উড়ানোর দৃশ্য দেখছে। নেচে গেয়ে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীয় লোকজন ফানুস উড়াচ্ছেন। ফানুস আকাশে যত উপরে উড়বে, ততই মঙ্গল, এমনি ধারণা তাদের।


অনেক ফানুস মাঝেমধ্যে উড়ার সাথে সাথে আগুনে পুড়ে যায়। তখন তাদের সবার মুখে একপ্রকার কালো ছায়া দেখা যায়। কান্না জড়িত হয়ে দু হাত জোড় করে প্রার্থনায় পড়ে যায় সবাই। এ এক দারুণ দৃশ্য। একটু সামনে আসতেই অরফানেন্স গার্লস হোম নামক স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গনেই ধর্মীয় উৎসব পালনে ব্যস্থ। সব দিকে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে। এক একটি ফানুস উড়াচ্ছে আর বলছে ছাদু ছাদু......।


কথা হয় স্কুলের পরিচালক মংলা মার্মার সাথে। তিনি বলেন, প্রতি বৎসরের ন্যায় এ বছরও তার বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফানুস উড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নেচেগেয়ে মনের আনন্দে এসব ফানুস উড়াচ্ছেন।


তিনি আরো বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের ভেতরের অপবিত্রতা ও কলুষতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য তিন মাসব্যাপী নির্জন আশ্রমে বাস করেন। একে আশ্বিনী পূর্ণিমাও বলা হয়। এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে আকাশকে আলোকিত করতে রঙ্গিন আলোর ফানুস উড়ানো। উৎসবকে ঘিরে তৈরী করা হয়েছে অতিথিদের জন্য পিঠা উৎসবেরও।


বৌদ্ধ যুবকরা জানান, উৎসবের শেষ দিনে নর-নারীরা দানীয় ও পূজার সামগ্রী নিয়ে বৌদ্ধ বিহারে সমবেত হন। ভিক্ষুদের কাছ থেকে শীল গ্রহন করে, ভিক্ষুদের খাদ্যভোজ্য প্রদান করে এবং দান-দক্ষিনা দিয়েছেন। অনেকেই অষ্টশীল নিয়ে স্ব-স্ব বিহারে অবস্থান করেছেন। দুপুরে ধ্যান সমাধি এবং বিকেলে আয়োজিত হয়েছে ধর্মসভা। বড়রা ছোটদের আশীর্বাদ করেছেন এবং ছোটরা বড়দের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এই মিলন পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সামাজিক ঐক্য ও সংহতিকে জোরদার করে।


ধাবনখালী মার্মা পাড়ার বাসিন্দা নারিচবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মংহ্লাউয়ে মার্মা জানান, তিনদিন ব্যাপী প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে ফানুস উড়ানো ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, অতিথি আপ্যায়নসহ বিভিন্ন বর্ণিল আয়োজন করা হয় বিহারগুলোতে।


তিনি আরো জানান, বিকাল থেকে নারী-পুরুষ শিশু, যুবক-যুবতী, আবালবৃদ্ধা বনিতা নতুন পোশাক ও উন্নতমানের খাবার নিয়ে বিহারে গমন করেন। সেখানে সুখ ও শান্তি কামনায় বৌদ্ধের নিকট প্রার্থনা করেন।


বাইশারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর জানান, প্রবারণা পূর্ণিমায় পুরো উপজেলায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীয় লোকজন তাদের বৌদ্ধ বিহার গুলোতে নেচে গেয়ে ফানুস উড়িয়েছেন। এসব দেখতে অনেক বাঙ্গালীরাও অংশ নেয়। এতেই প্রমাণিত হয় পুরো পার্বত্য বান্দরবান সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে।


বিবার্তা/নয়ন/কামরুল


আরও পড়ুন- বর্ণিল আয়োজনে প্রবারণা পূর্নিমা শুরু

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com