শিরোনাম
২৫ বছরেও স্থায়ী বেড়িবাঁধ পায়নি উপকূলবাসী
প্রকাশ : ২৪ মে ২০১৬, ১৪:৩২
২৫ বছরেও স্থায়ী বেড়িবাঁধ পায়নি উপকূলবাসী
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

অরক্ষিত উপকূলে স্থায়ী বেড়িবাঁধের আশায় আশায় দিন যায় উপকূলবাসীর, কিন্তু তাদের সে আশা ২৫ বছরেও পূরণ হয়নি। ১৯৯১ সালের সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে চট্টগ্রামের উপকূলবাসী স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছে। বারবার দুর্যোগ আসে, আর সোচ্চার দাবি ওঠে স্থায়ী বেড়িবাঁধের। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দও আসে। কিন্তু অপর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সাগরের তাণ্ডবে মুহূর্তের মধ্যেই মাটির সে সব বাঁধ বিলীন হয়ে যায়। আর ঘরবাড়ি ও সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে উপকূলবাসী।
১৯৯১ সালে বেড়িবাঁধের ভয়াবহ ভাঙনের ফলে অকালেই প্রাণ হারাতে হয়েছিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীর অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ বছরেও স্থায়ী বেড়িবাঁধ না হওয়ার অভিশাপে বারবার উপকূলীয় জনগণকে সহায়সম্বলহীন হতে হয়েছে বঙ্গোপসাগরের তাণ্ডবের কাছে। যার ফলে বাঁশখালীর উপকূলীয় খানখানাবাদ, গণ্ডামারা, ছনুয়া, সরল, সাধনপুর, পুকুরিয়াসহ উপকূলীয় এলাকাবাসীর কষ্টের কোন সীমানা থাকে না। বার বার ভাঙনের কবলে পড়ে হারাতে হয় বসত ভিটা ও প্রাণ। এরই ধারাবাহিকতায় কয়দিন আগে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে আবারো কাঁদতে হচ্ছে বাঁশখালীর উপকূলবাসীকে। এই তাণ্ডবের ফলে বাঁশখালীর খানখানাবাদ, ছনুয়া, গন্ডামারা এলাকার ৯ জন হারালেও অসংখ্য গরু, ছাগল, হাঁস মুরগী মারা পড়েছে। প্রায় ১০ সহস্রাধিক বাড়ি ঘর সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় সাধারণ জনগণকে বাঁচাতে উপকূলীয় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বারবার জোর দাবি করে আসলেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাঁশখালীর সাংসদ অর্থ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রচেষ্টায় বাঁশখালীর উপকূলীয় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ২১০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ায় বাঁশখালীবাসী এবার বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে এই আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়াসহ পূর্বের মূল্যে ঠিকাদাররা কাজ না করায় ওই ২১০ কোটির বাজেটকে পুনরায় রিভাইজ করে ২৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। তবে সেই কাজও শুরু করা হয়নি। বেশ কিছু স্থানে মাটির কাজ করা হলেও সেগুলোও ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ছনুয়া, গণ্ডামারা, খানখানাবা এছাড়াও শেখেরখীল, সরল, কাথরিয়া, বাহারছড়া, সাধনপুর, পুকুরিয়া, পুঁইছড়ি সব মিলিয়ে সাগর এবং উপকূলীয় অভ্যন্তরীণ এলাকায় প্রায় ৪৪.৪৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


এদিকে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে আনোয়ারা উপকুলে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে অন্তত ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এই এলাকায় সাগরতীরে ৭৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ থাকলেও মাত্র এক কিলোমিটার ছাড়া পুরোটাই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিইউএফএল থেকে বারো আউলিয়া সাগর প্রান্ত পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার, বারো আউলিয়া থেকে বরুমচড়া শঙ্খের মুখ পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার, বরুমচড়া থেকে কৈনপুরা মহতরপাড়া পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রযেছে। স্থায়ী সংস্কারের অভাবে এসব বাঁধের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক ফাটল।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবের পর এক রকম বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে রায়পুরের ৬ কিলোমিটার, জুইদন্ডির দুই কিলোমিটার ও বরুমচড়া-বারখাইনের দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। অবস্থা এখন এমন যে, সাগরের জোয়ারে লবণ পানি ঢুকে যাচ্ছে বাড়ির পুকুরে।
ঘূর্ণিঝড়ের পর রায়পুরের মালিপাড়া, তেলিপাড়া, বারো আউলিয়া, ঘাটকূল প্রভৃতি পয়েন্টে বেড়ি বাঁধে বড় ধরনের ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এর চেয়েও শংকার খবর হলো, জলোচ্ছ্বাসে রাযপুরের ঘাটকূল ও বাইন্যাপুকুর এলাকায় দু’টি খালের সৃষ্টি হয়েছে। সাগরের মোহনায় সাংগু নদী হয়ে অনায়াসে জোয়ারের পানি ঢুকে যাচ্ছে খাল দু’টিতে। তাতে জোয়ারে পানিবন্দী হয়ে যাচ্ছে রায়পুর।
জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে শুধুমাত্র রায়পুরে বেড়িবাঁধে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার সংস্কার কাজ করা হয়েছে। অস্থায়ী মাটি ভরাটের এই কাজ শেষ না হতেই বৃষ্টি ও জোয়ারে তা সাগরে ভেসে গেছে।
পানি উন্নযন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী কায়সার উদ্দিন জানান, জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে আনোয়ারাবাসীকে রক্ষা করতে হলে বেড়িবাঁধের স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন। বেড়িবাঁধ সংস্কারে ২৮০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেটি হয়ে গেলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্ভব হবে।
এদিরকে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে পেকুয়াকে। উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে ৪ ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ধুমড়ে মুছড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপনা, চিংড়িঘের ও লবণমাঠ। ভেঙ্গে পানির সাথে মিশে গেছে কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এতে করে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সাগরতীরবর্তী ৩টি ইউনিয়ন।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ চৌধুরী রাজু জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে মুহূর্তের মধ্যেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সাগরতীরের বেড়িবাঁধগুলো। এতে গত তিনদিন ধরে জোয়ার-ভাটা চলছে উপজেলার রাজাখালী, মগনামা, উজানটিয়া ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আংশিক এলাকায়। এই অবস্থায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো তছনছ হয়ে পড়ায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাছাড়া বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সেই দুর্ভোগ আরো চরমে পৌঁছেছে এসব ইউনিয়নে।
বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com