শিরোনাম
নৃশংস হামলার শিকার ব্যবসায়ী: মামলা নিচ্ছে না পুলিশ
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:৪০
নৃশংস হামলার শিকার ব্যবসায়ী: মামলা নিচ্ছে না পুলিশ
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে লোহার রড ও পাইপ দিয়ে নিষ্ঠুর কায়দায় পিটিয়ে দুই পা গুড়িয়ে দেয়ার ১৯ দিন পরও থানায় মামলা করতে পারেননি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস। উপরন্তু সন্ত্রাসীদের ভয়ে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেননি। কুদ্দুসের ওপর নৃশংস হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ক্ষমতার দাপট এতোই বেশি, হুমকিতে কুদ্দুসের পরিবারও এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।


বর্তমানে কুদ্দুস রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।


ওয়ার্ডের চিকিৎসক সাজেদুর রহমান জানান, কুদ্দুসের দুই পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষত ও জখম হয়েছে। শরীর ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের কোপও আছে। আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত মনে হলেও জ্বর হচ্ছে। তাই সেরে উঠতে সময় লাগছে। তবে আঘাতের কারণে শরীরের ভেতরে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না সেটা জানতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।


ব্যবসায়ী কুদ্দুস জানান, সন্ত্রাসীরা এর আগে দুই ভাই, চাচা ও চাচাত ভাইসহ তার পরিবারের চারজনকে নৃশংসভাবে খুন করে। এসব মামলায় হত্যাকারীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও হয়েছে। তবে রায় ঘোষণার পর খুনীরা তাকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে একাধিকবার। আর সেই আতঙ্কে তিনি জমি-জমা চাষবাস ফেলে বছর তিনেক আগে গ্রাম থেকে আত্রাই উপজেলা সদরে এসে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য কাঠ আর খড়ির ব্যবসা করেন। কুদ্দুস শ্রমিক লীগের স্থানীয় কমিটির সদস্যও।


কুদ্দুসের অভিযোগ, সন্ত্রাসীরা কিছুদিন ধরে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল।



স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, গত ৮ অক্টোবর দুপুরে আত্রাই উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে শ্রমিক লীগের সভা ছিল। ওই সভায় অন্যদের সঙ্গে কুদ্দুসও অংশ নেন। সভার চলার এক ফাঁকে সে দলীয় অফিসের সামনের চায়ের দোকানে গিয়ে চায়ের কথা বলেন। এ সময় আত্রাই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী আফসার আলীর ছেলে নাঈম (২৬), রাজ্জাকের ছেলে রাব্বী (২৫) বারিকের ছেলে, শরিফ (২৬) ও আবুল প্রামাণিকের ছেলে এনামুলসহ (২৮) আরো ছয়/সাতজনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী আকস্মিকভাবে কুদ্দুসের ওপর হামলা করে।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ত্রাসীরা লোহার রড ও পাইপ ছাড়াও ধারালো হাসুয়া ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে। সন্ত্রাসী দলটি এক পর্যায়ে কুদ্দুসকে আওয়ামী লীগ অফিসের পেছনে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে আরেক দফা বেপরোয়া নির্যাতন করে। পরে সন্ত্রাসীরা কুদ্দুসকে মৃত ভেবে ফেলে গেলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দ্রুত উদ্ধার করে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে।


পরে সন্ত্রাসীদের হুমকি ও কুদ্দুসের অবস্থার অবনতি হলে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে কুদ্দুস রামেকে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরদিন লোক মাধ্যমে কুদ্দুস একটি এজাহার দিলেও আত্রাই থানা পুলিশ নৃশংস এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি তার এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ডও করেনি।


প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, কুদ্দুসের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসী দলটির অন্যতম সদস্য নাঈমের বাবা আফসার আলী স্থানীয় এমপি ইস্রাফিল আলমের ঘনিষ্ঠ। কয়েক বছর আগে বিএনপির সাবেক নেতা আফসার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপজেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক হন। আত্রাই থানা পুলিশও এই আফসারের হাতের মুঠোয় থাকেন। আর বাবার সঙ্গে পুলিশের দহরম মহরমের কারণে আফসারের দুই ছেলের সন্ত্রাসে জর্জরিত আত্রাই উপজেলার অনেক আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। কেউ ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। অন্যদিকে পুলিশও আফসারের কথায় উঠেবসে বলে অভিযোগ দিলেও কোনো লাভ হয় না।


স্থানীয়রা করে অভিযোগে বলেন, বছর দুয়েক আগে আফসারের নির্দেশে শ্রমিক লীগ নেতা কালুকে এই আওয়ামী লীগ অফিসের সামনেই পিটিয়ে হত্যা করেছিল আফসারের দুই সন্ত্রাসী ছেলে ও সহযোগী সন্ত্রাসীরা। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।


আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নাম প্রকাশ না করে আরো বলেন, অজ্ঞাত কারণে আফসারের মতো বিতর্কিত একজন লোকের প্রতি স্থানীয় এমপি ইস্রাফিল আলমের নিরঙ্কুশ আস্থা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে টেন্ডারবাজি থেকে ইজারাসহ লাভজনক সব কাজেই আফসারের কথেই শেষ কথা। আর এ কারণে তার ছেলেরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। ব্যবসায়ী কুদ্দুসের ওপর হামলার পরও এসব সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। এমনকি তারা নিয়মিত থানাতেও যাতায়াত করছে।


ব্যবসায়ী হামলার ঘটনায় দেয়া এজাহার মামলা হিসেবে রেকর্ড না করার বিষয়ে জানতে চাইলে আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বদরুদ্দোজা বলেন, তিনি এমন এজাহার পাননি। এমনকি কুদ্দুসের ওপর হামলার ঘটনাও শোনেননি। তবে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাওয়ায় তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজ নেবেন।


বিবার্তা/রিমন/জেমি/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com