
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে ভয়াবহ সেশন জ্যাম। ৮ মাসেও প্রকাশিত হয়নি পূর্ববর্তী সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফল।
২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৯টি ব্যাচের সংযোজন ঘটলেও বিভাগটির ৫ম ব্যাচের (স্নাতক ফাইনাল ইয়ার) ৭ম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ নিয়ে গড়িমসি চলে আসছে অনেকদিন যাবৎ। গত মে মাসের ২৩ তারিখে এ সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হয়। একে একে সাতটি মাস পার হলেও এখনো উক্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের কোনো নির্দিষ্টতা বা সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ করা হয়নি বিভাগ থেকে।
বিভাগে বর্তমান শিক্ষারত ৫টি ব্যাচের (মাস্টার্স সহ) প্রত্যেকের সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফলসহ বাকি সকল কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রুটিন অনুযায়ী হলেও স্নাতক ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থীরাই একমাত্র রয়েছে ভোগান্তিতে। এদিকে ফাইনাল ইয়ারের ১ম সেমিস্টারের ফলাফল বিলম্বকে কেন্দ্র করে থমকে আছে এ ব্যাচের কেন্দ্রীয় ভাইভা, রিসার্চ প্রপোজাল ডিফেন্সসহ অন্যান্য ও নানাবিধ কর্মকাণ্ড।
একটি সেমিস্টারের ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সেমিস্টারে আসনগ্রহণে শিক্ষার্থীদের অনীহা থাকা সত্ত্বেও ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষাও যথারীতি সম্পন্ন হয় এ ব্যাচের। তবে স্নাতক শেষবর্ষের সকল পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পরেও এসকল পরীক্ষার ফলাফল প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এবং ফলাফলের প্রকাশিত না হওয়াকে কেন্দ্র করে বাকি কর্মকাণ্ডগুলোতেও বিলম্ব হওয়া, হীনম্মন্যতার সৃষ্টি করছে শিক্ষার্থীদের মনে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বরং স্নাতক ফাইনাল ইয়ার শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সবার আগে শেষ করে দেওয়া উচিত। যেখানে এই চূড়ান্ত বৎসরের সার্টিফিকেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিতে হয়। ৭ মাসের বিলম্ব মানে সেই ৭ মাসে প্রকাশিত সকল নিয়োগ সার্কুলারে অংশগ্রহণ করতে আমাদের অপারগতা। এভাবে চলতে থাকলে স্নাতক সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও জুডিশিয়ারি, বার কাউন্সিলসহ সকল চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো।
এছাড়াও কোনো সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু করার পূর্বে তার পূর্ববর্তী সকল পরীক্ষার( মিডটার্ম, সেমিস্টার, অ্যাসাইনমেন্ট/প্রেজেন্টেশন ও ভাইভা) ফলাফল সম্পর্কে না জেনে উক্ত পরীক্ষায় বসতেও নানাবিধ সমস্যার কথা উল্লেখ করেন এ বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী
তথ্যসূত্রে জানা যায়, এ বর্ষের ২০১৯-২০ সেশনের পরীক্ষার খাতা বিভাগ কর্তৃক মার্কিং করার পরবর্তীতে পুনঃ নিরীক্ষণের মাধ্যমে রিভিউয়ের জন্য সেকেন্ড এক্সামিনারের কাছে পাঠানো হয় যার দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাকিব মোহাম্মদ নাসিরুল্লাহ। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর পদোন্নতিতে তিনি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ায় তার রুটিন দায়িত্বে গড়িমসি শুরু হয়। এবং সেকেন্ড এক্সামিনার হিসেবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের গ্রেডশীট তার দপ্তরেই আটকে যায়।
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ব্যাপারে ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইরফান আজিজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্রুত হয়ে যাবে। এখন তো ছুটি চলছে, এক সপ্তাহ বা তার একটু বেশি সময়ে হয়ে যাবে। আমি ক্যাম্পাস গিয়ে কথা বলবো।
এ ব্যাপারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাকিব মোহাম্মদ নসিরুল্লাহ'র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আপনাদেরকে এসব খবর কে জানিয়েছে। আমি খাতা দেখি নি আমি তাহলে কথা বলছি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে। আমি তো তাদেরকে বলেছি যে আমি খাতা দিয়ে দিচ্ছি, এটা কি নিউজ করবে নাকি তারা।"
উল্লেখ্য, একই বিভাগের ৫ম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশেও যথারীতি একইভাবে বিলম্বের শিকার হয় উক্ত ব্যাচ। গ্রেডশীটে মার্ক উত্তোলনপূর্বক ত্রুটি নিয়ে দীর্ঘ ৮ মাস পর সে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। ফলাফলের এমন বিলম্বের ব্যাপারে বিভাগীয় এবং অ্যাকাডেমিক সমন্বয়হীনতাকেই দুষছেন শিক্ষার্থীরা।
বিবার্তা/বাপ্পি/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]