
নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁগুলোর ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এই সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’ এবং ‘ব্যবসাবিরোধী ও দেশবিরোধী’ অভিহিত করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। অন্যথায়, আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ, সড়ক অবরোধ এবং প্রয়োজনে দেশব্যাপী রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়ার মতো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়। মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি এবং মহাসচিব ইমরান হাসানের স্বাক্ষরিত ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডিএসসিসি একতরফাভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের আগাম নোটিশ, আলোচনা বা যৌক্তিক সময়সীমা না দিয়ে হঠাৎ ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বিবেচনাহীন, অমানবিক, ব্যবসাবিরোধী ও দেশবিরোধী।
বহু বছর ধরে আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমাদের এই সেক্টর অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং পর্যটন শিল্পে বিশাল অবদান রেখেছে। অনেক রেস্তোরাঁ মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
রেস্তোরাঁ মালিকরা জায়গার লিজ ও রিনোভেশনে যে বিনিয়োগ করেছেন, তা পরিশোধের আগেই আমাদের ব্যবসা বন্ধের মুখে পড়েছে যা আমাদের জন্য চরম আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে। অথচ ডিএসসিসি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হাজারো ব্যবসায়ীর পরিবারকে পথে বসানোর আয়োজন করেছে। প্রশাসনের এই বেআইনি ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের ফলে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ধ্বংস হবে, কর্মসংস্থানের মারাত্মক সংকট তৈরি হবে এবং রাজধানীর ভোক্তা সেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত অচল হয়ে পড়বে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, যদি ডিএসসিসি তাদের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দ্রুত আলোচনায় না বসে, তবে দেশের সব রেস্তোরাঁ মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ, সড়ক অবরোধ ও দেশব্যাপী রেস্তোরাঁ বন্ধের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।
আমরা চাই দ্রুত একটি সমঝোতামূলক নীতিমালার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান। অন্যথায়, সব ধরনের নাগরিক অসন্তোষ ও অস্থিতিশীলতার দায়দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকেই বহন করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে ব্যবসা শুরু করতে হলে ১৪টি সংস্থার অনুমতি লাগে। এতগুলো সনদ নিতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। তারপরেও অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এখন রেস্তোরাঁ ব্যবসায় মনোযোগী হচ্ছেন। তাতে দিন দিন বড় হচ্ছে এ ব্যবসার পরিধি। বছরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে রেস্তোরাঁ রয়েছে ৪ লাখ ৮১ হাজারের বেশি। এ শিল্পে কর্মরত ৩০ লাখের বেশি শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের রেস্তোরাঁ শিল্পে আয় ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ২ লাখ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে এখাতে। ভবিষ্যতে দেশের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষকে রেস্তোরাঁর খাবারের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। রেস্তোরাঁ খাত আজ দেশের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত। কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং লাখো মানুষের জীবিকা সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে ডিএসসিসি জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কতিপয় আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের অভ্যন্তরে রাজউক থেকে অনুমোদিত নকশার রেস্টুরেন্ট না থাকলেও বিধি বহির্ভূতভাবে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ভবনের ছাদে অবৈধভাবে রুফটপ রেস্টুরেন্ট পরিচালিত হচ্ছে, যা জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বিধি বহির্ভূতভাবে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করায় এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় সম্পদ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনৈতিক উপায়ে করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই অবস্থায় সম্পদ ও জানমালের ক্ষতির ঝুঁকি এড়াতে নকশাবহির্ভূত সব রেস্টুরেন্ট এবং ভবনের ছাদে স্থাপিত রুফটপ রেস্টুরেন্টের ট্রেড লাইসেন্স বিজ্ঞপ্তি জারির তারিখ থেকে বাতিল ঘোষণা করা হলো। বাতিল করা লাইসেন্স দিয়ে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]