যে দোকানে ২ টাকায় মেলে চা-নাস্তা
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:১৬
যে দোকানে ২ টাকায় মেলে চা-নাস্তা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মানুষের উপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘোটক। প্রতিনিয়ত সে বাজারের রশি টানছে। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষ এখন মহা ভাবনায় হাবুডুবু খাচ্ছে। প্রতিটি জিনিসের দাম আকাশচুম্বী। আগের তুলনায় দ্রব্যের মূল্য কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। লাগামহীন মূল্যে নিম্ন আর মধ্যম আয়ের মানুষের জীবন যেখানে বিপর্যস্ত সেখানে ২ টাকা কাপ চাসহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের এক দোকানে।


দুই দশক থেকেই ২ টাকার খাবার বিক্রি করে আসছেন নুরুল ইসলাম ও হাসিনা দম্পতি। তাদের এই ২ টাকার চা ব্যাপক সারা ফেলেছে। ২ টাকার চা খেতে স্থানীয়দের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই।


জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের জামালপুর ইউনিয়নের চরঙ্গী বাজারে চায়ের দোকান করেন নুরুল ইসলাম দম্পতি। টিন সেডের এই চায়ের দোকানে ২০ বছর থেকেই এই ব্যবসা তাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে অবিশ্বাস্য হলেও আজও আদি আমলের সেই ২ টাকা দামেই বিক্রি করছেন দুধ চা, পেঁয়াজু, খুরমা সহ বিভিন্ন খাবার। এলাকায় এখন এই দোকান ২ টাকার দোকান নামেই পরিচিত।


একটি সময় শুধু চা বিক্রি করলেও গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে সেদ্ধ বুট, খুরমা, সেমাই, বড়া সহ বিভিন্ন খাবার তৈরি করেন তারা। এরই মধ্যে তাদের তৈরি দুই টাকার এক কাপ চা সারা ফেলেছে ব্যাপকভাবে। দোকানের আয় দিয়েই সংসার চলছে কোন রকমে। যেখানে দিনের পর দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েই চলছে সেখানে আজও সেই আদি আমলের দাম এখনো ধরে রেখেছেন নূর ইসলাম দম্পতি।


বিষয়টি হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাদের দোকানে ছুটে যেতে শুরু করেন দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই। প্রতিদিন বিকাল হলে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসে মানুষ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ৪০০/৫০০ কাপ চা বিক্রি হয়। পাশাপাশি বিক্রি করেন অন্য খাবারও। প্রতিটি খাবারের দামই ২ টাকা। বর্তমান সময়ে ২ টাকার চা অনেকটাই অবাক করার মতো। সেই সাথে অন্য চা দোকানের চেয়ে স্বাদে-গুণে কোনো অংশেই কম নয় বলে জানান চা খেতে আসা ব্যক্তিরা।


প্রতিবেশী তানু বলেন, আমি ছোটো থেকেই দেখে আসছি এই চাচা ২ টাকা কাপ চা ও অন্যান্য নাস্তা বিক্রি করে। এখন যে সময় দুধ, চিনির যে দাম। এই অবস্থায় তারা কিভাবে এত কম দামে বিক্রি করে মুনাফা পাচ্ছে এটাই আমি বুঝতে পারি না।


হিমেল নামের শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা ছাত্র, আমাদের কাছে তেমন টাকা থাকেনা। তাই দুইটার চা নাস্তায় আমাদের জন্যে অনেক সুবিধা হয়েছে। আমরা সবাই এই দোকানে নিয়মিত আসি।


চা বিক্রেতার স্ত্রী হাসিনা বেগম জানায়, সব জায়গা দাম বাড়ছে। আমিও বাড়াতে চাইছিলাম। বারবার জানাইছি, তবুও আমার স্বামী দাম বাড়াইতে রাজি হয়নি। বলছে আমার মৃত্যুর আগে দাম বাড়বে না। নিজের দোকানের চায়ের দাম বাড়াতে চাইলেও দাম বাড়াতে রাজি হয় না স্বামী নুরুল ইসলাম।


বেঁচে থাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানোর আর ইচ্ছা নেই বলে জানান ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি সেই স্বাধীনতার পর থেকেই চায়ের দোকান করি। একটা সময় ২ টাকা কাপ চা বা অন্যান্য খাবার স্বাভাবিক ছিল। তবে সময়ের সাথে সবাই দাম বাড়ালেও আমি আর বাড়াতে চাইনি। সেই চেষ্টা থেকেই এখনও ২ টাকায় চা বিক্রি করছি। চিনির কেজি যদি ১০০০ টাকা হয়, তবুও আমার চা ২ টাকাই থাকবে।


বিবার্তা/মিলন/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com