
চলতি রবি মৌসুমে সারের চুয়াডাঙ্গার জীবননগর বাজারে সরকারি (বিসিআইসি) সার বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে সারের সংকট দেখা দিয়েছে। সার ডিলাররা বলেছেন, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম।তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবি, খোলা বাজারে সারের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। তবে দাম বেশি। সার ডিলাররা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে গোপনে সার বিক্রি করছেন। মৌসুমের শুরুতেই সারের কৃত্রিম সংকটের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথে যোগাযোগ না রেখে বরং সার ব্যাবসায়ীদের সাথে গড়ে তুলেছেন সখ্যতা। আর এতে করে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাদের।
মিনাজপুর গ্রামের হাসানুজ্জামান বলেন, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছি। বীজ লাগানোর সময় বিসিআইসি কিংবা বিএডিসি ডিলারদের কাছ থেকে কোন সার পাইনি।
তিনি বলেন, বাঁকা ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা বিসিআইসি সার ডিলার পয়েন্টে গেলে ম্যানেজার বলে ডিএপি সার নেই। এই ইউনিয়নের বিএডিসি সার ডিলারের কাছে গেলে সে বলে ইউরিয়া ও কয়েক বস্তা এমওপি সার ছাড়া তাদের কাছে অন্য কোনো সার নেই।
হাসানুজ্জামান আরও বলেন, ফসল বাঁচাত বাধ্য হয় খুচরা বাজার থেকে বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। খুচরা বাজার থেকে প্রতি বস্তা ডিএপি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হয়েছি।
কর্দপপুর গ্রামের কৃষক মোফাজ্জেল বলেন, বিসিআইসি সার ডিলারের কাছে গেলে বলে সার নেই। দুই তিন দিন যাওয়ার পর এক বস্তা এমওপি আর এক বস্তা টিএসপি সার দিয়েছে। আমার তো লাগবে ১৫ থেকে ২০ বস্তা। সেখানে এক বস্তা সার নিয়ে কি হবে।
তথ্য অনুযায়ী, জীবননগর উপজেলায় অনুমোদিত বিসিআইসি সার ডিলার ১০ টি ও বিএডিসি নিবন্ধিত ২০ টি সার ডিলার আছে। আবার বিসিআইসি ১০ জন সার ডিলাররা বিএডিসির মাধ্যম বরাদ্দ পেয়ে থাকেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ৫৯২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের চাষ রয়েছে। যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সবজি ২ হাজার ৮৫০ হেক্টর, ভূট্টা ৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর,ভগম ২৩০ হেক্টর, সরিষা ৩৯৭ হেক্টর, আলু ৮৯০ হেক্টর, মসুর ১৫০ হেক্টর, শীতকালীন পেঁয়াজ ১৮০ হেক্টর ও রসুন আবাদ হয়েছে ৫৫ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কষি বিভাগ জানায়, জীবননগর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সার ১৫ হাজার ৯৮৭ ম্যাট্রিক টন, টিএসপি ৬ হাজার ২৯৮ মেট্রিক টন, ডিএপি ৬ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন ও এমওপি ৭ হাজার ৯৬১ মেট্রিক টন চাহিদা রয়েছে।
সার সংকট মোকাবেলায় অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত ইউরিয়া ১ হাজার ৬১০ মেট্রিক টন, টিএসপি ১ হাজার ১০৬ মেট্রিক টন ও ডিএপি ৫৩৯ মেট্রিক টনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ পাওয়া গেছে- ৮ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন ইউরিয়া, টিএসপি ২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন, ডিএপি ৪ হাজার ৫৭৭ মেট্রিক টন ও এমওপি ৩ হাজার ১৫ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
সরেজমিনে জীবননগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত প্রতি বস্তা ডিএপি সারের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ শ' থেকে ১৬শ' টাকায়। ১ হাজার টাকার এমওপি সার বিক্রি হচ্ছে ১১ শ' টাকা ও টিএসপি ১ হাজার ৩৫০ টাকা।
এছাড়া ডিএপি( মরক্কা) ১ হাজার ৫০০ টাকায়, ডিএপি পতঙ্গা- বাংলা ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করছে। ডিলাররা বাংলা টিএসপি নিজেদের গোডাউনে না রখ অন্য গোডাউনে মজুত করে চুপিসারে বিক্রি করছেন।
এ প্রসঙ্গে বিসিআইসি সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোসাবুল ইসলাম লিটন বলেন, বরাদ্দের যে সার পাওয়া যাচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় কম। এ বছর মাঠে আলু ও ভূট্টার আবাদ বেড়েছ সেই সাথে ডিএপি, এমওপি ও টিএসপি সারের চাহিদা বেড়েছে। যা বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য বাজারে সার পাওয়া যাচ্ছে না।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে সারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। ডিলাররা সময়মতো সারের সরবরাহ পাচ্ছেন না। যার কারণে আলু ও ভুট্টা আবাদে কিছুটা সারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিং করছে।
এ প্রসঙ্গে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল আমিন বলেন, সার কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। আনুপাতিক হারে ছোট ইউনিয়ন থেকে বরাদ্দ কেটে বড় ইউনিয়নে বিভাজন করে উত্তরণের চেষ্টা চলছে। বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিং করতে কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিবার্তা/আসিম/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]