দৌলতপুরের প্রাগপুর হেমাশ্রমে অনুষ্ঠিত হলো সাধুসঙ্গ
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:১০
দৌলতপুরের প্রাগপুর হেমাশ্রমে অনুষ্ঠিত হলো সাধুসঙ্গ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

'এসো হে অপারের কাণ্ডারি, আর কি বসবো এমন সাধ বাজারে' লালন সাঁইজির এই আধ্যাত্মিক বাণীকে প্রতিপাদ্য করে ফরাসি নাগরিক ফকির দেবরাহ্ জান্নাতের গুরুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন প্রাগপুর হেমাশ্রমে অনুষ্ঠিত হলো সাধুসঙ্গ।


আত্মশুদ্ধি, জ্ঞানযোগ আর গুরুকর্মের মধ্যদিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় হেমাশ্রমে এ সাধুসঙ্গের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।


সাধুসঙ্গের আয়োজক ফকির দেবরাহ্ জান্নাতের আমন্ত্রণে এতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধু, লালন ভক্ত ও অনুসারীরা যোগ দেন। সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠানে ফকির লালন সাঁইজির গীতজ্ঞান সুধা পরিবেশন করেন দেশ ও বিদেশের শিল্পী ও বাউল-সাধুুবৃন্দ।


প্রবীণ সাধু দরবেশ ফকির নহির শাহের মতে দরবেশ লালন সাঁইজির পথ ও মত ছিল প্রকৃতিবাদী। প্রকৃতিবাদী হয়ে প্রকৃতি সাধনের মাধ্যমে নিজের আত্মসংস্কার করে একজন সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার যে মাধ্যম তা হলো সাধুসঙ্গ। আর সাধুসঙ্গের মাধ্যমে লালন সাইজির আত্মদর্শন লাভ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। তাই নানা দেশ ঘুরে সুদূর ফরাসি থেকে আসা দেবরাহ্ জান্নাত নিজেকে চেনা ও জানার জন্য সাঁইজির পথ ও মতকে বেছে নিয়েছে। দীক্ষা নিয়েছে গুরুবাদী ধর্মের। এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো সাধুসঙ্গ।


সাধুসঙ্গ মানে সর্ব মানুষের মিলনের একটা ক্ষেত্র। আমরা পৃথিবীতে আছি বিভিন্ন ধর্ম, গোষ্ঠী, মতবাদ ও জাতি বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু সাধুসঙ্গের আসরে সবাইকে একসঙ্গে মেলানো হয় এবং সবার সঙ্গে ভাববিনিময়ের একটা সুযোগ হয়। মানুষ হিসেবে আমাদের করণীয়টা কি এবং কীভাবে মানুষ হয়ে উঠতে পারি, সেই শিক্ষাটাই সাধুসঙ্গের ভিতর দিয়ে আসে। তাই পথ ও মত নিয়ে লালন সাঁইজিকে জানতে হলে নিজেকে ত্যাগ করতে হবে। আর যিনি ত্যাগ করতে পারেন তিনি হলেন সাধাক।


ফরাসি থেকে আগত দেবরাহ্ জান্নাত নিজেকে ত্যাগ করে মহিরুহ লালনের দীক্ষা নিয়েছেন। তাই আজ তার গুরুবার্ষিকী দিবসে হেমাশ্রমে সাধুসঙ্গের আয়োজন করেছেন, এটা বাংলাদেশি হিসেবে নিশ্চয় আমার কাছে গৌরবের বলে মনে করেন সাধুসঙ্গে আসা বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া।


সাধুসঙ্গের আয়োজক ফরাসি নাগরিক ফকির দেবরাহ্ জান্নাত জানান, সাঁইজির কৃপায় সাধুসঙ্গের আয়োজন করতে পেরে নিজেকে যেমন ধন্য মনে করছি, তেমনি তার গুরু যেমনভাবে সাধুসঙ্গের আয়োজন করেন বা তার গুরুর গুরুরা যেমনভাবে করেছেন ঠিক সেইভাবে সাধুসঙ্গের আয়োজন করেছি, এমনিভাবে প্রতিবছর যেন করতে পারি এমন আশা ব্যক্ত করেন তিনি। গুরুর কৃপায় সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান আয়োজনে কোন সমস্যা হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।


সত্যকে সাগর মনে করেন সাধুরা। আর এ সত্যসাগরে সবার পক্ষে সাতাঁর কাটা সম্ভব নয় বলে প্রয়োজন হয় সাধুসঙ্গের। আবার সাধুদের মতে আত্মশুদ্ধি, আত্মতত্ত্ব রক্ষা ও সাদা মনের মানুষ হতে হলে গুরুভক্তির মাধ্যমে সেটা সম্ভব। আর এজন্য প্রয়োজন সাধুসঙ্গের। তাই সত্যিকারের সাদামনের মানুষ সাধুদের কাছ থেকে দেখে, সহজ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে প্রয়োজন সাধুসঙ্গের। যেটা দেবরাহ জান্নাত করেছেন এমন অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন সাধুসঙ্গে আসা প্রবীণ সাধু রওশন ফকিরসহ অনেকে।


আজ বিকেলে পূর্নসেবার মধ্য দিয়ে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান শেষ হলেও হেমাশ্রমে আসা সাধু ও দর্শনার্থীদের অনেকে রয়ে যাবেন আরো কয়েকদিন। আবার অনেকে আত্মশুদ্ধি নিয়ে ফিরে গেছেন নিজ নিজ ধামে। এর আগে সকালে গোষ্ঠলীলা, বাল্যসেবা ও লালন সাঁইজির বানী পরিবেশন করা হয়।


বিবার্তা/শরিফুল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com