কুমিল্লা মুক্ত দিবস আজ
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০৮
কুমিল্লা মুক্ত দিবস আজ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ৮ ডিসেম্বর। কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এদিনে পাক হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয় কুমিল্লা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মুক্ত হয় এ অঞ্চল।


হানাদারদের পরাজিত করে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীসহ সর্বস্তরের জনগণের উল্লাস ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কুমিল্লা।


মিত্রবাহিনীর ১১ গুর্খা রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আর কে মজুমদারের নেতৃত্বে কুমিল্লা বিমানবন্দরের ৩ দিক থেকে আক্রমণ পরিচালনা করেন।


৭ ডিসেম্বর রাতে বিমানবন্দরের পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটিঁতে আক্রমণ করা হয়। এই হামলায় মিত্রবাহিনীর ৬১ ব্রিগেডের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল মাহেন্দ্রপাল সিং, বাংলাদেশের মেজর আইন উদ্দিন, ক্যাপ্টেন আশরাফ, লে. হারুন ও মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান বুলবুল, মো. শাহ আলম ও সফিউল আহমেদ বাবুল নেতৃত্ব দেন। বিমানবন্দরের পাক সেনাদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। রাতের মধ্যেই পাক সেনাদের প্রধান ঘাঁটির পতন হয়। অনেক পাক হানাদার সেনা নিহত হন।


আক্রান্ত হওয়ার পর পাকিস্তানি বাহিনী তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য অদূরবর্তী ময়নামতি সেনানিবাস থেকে অতিরিক্ত সেনা এবং গোলাবারুদের মজুত বৃদ্ধি করে প্রাথমিক আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু মিত্র বাহিনীর আক্রমণের তীব্রতায় আর মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের মরণপণ আক্রমণে পাকিস্তানি দখলদার সেনারা তাদের পরিণতি বুঝতে পারে। শেষ রাতে পাকিস্তানি আর্মি তাদের প্রতিরোধ পরিখাগুলো দ্রুত পরিত্যাগ করে ১১ কিলোমিটার দূরে ময়নামতি সেনানিবাসে আত্মগোপন করে।


ফলে ভোরে সূর্যের আলো না ফুটার আগেই থেমে যায় বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণের শব্দ।


এ সময় এয়ারপোর্ট সংলগ্ন গ্রাম নেউরা, রাজাপাড়া, ঢুলিপাড়া লক্ষ্মীপুর, চৌয়ারা এলাকার বাসিন্দারা পাকসেনাদের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ১৯৭১ সালে কুমিল্লা শহরে বসবাসকারী ঝাউতলা এলাকার একজন জানান, সারারাত প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ আর ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি আর্মির বহু সাজোয়া গাড়ি যেতে দেখেছেন কুমিল্লা এয়ারপোর্টের দিকে। ভোরে অনেকের সঙ্গে শিশু-কিশোর ও নারীরাও রাস্তায় নেমে আসেন কুমিল্লা মুক্ত হবার আনন্দে।


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তথ্যানুসারে, সীমান্তবর্তী বিবির বাজার দিয়ে লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল এবং অপর দুটি দল গোমতী নদী অতিক্রম করে কুমিল্লা শহরের ভাটপাড়া দিয়ে এবং চৌদ্দগ্রামের বাঘেরচর দিয়ে এসে বিমানবন্দরের পাকসেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। রাতভর পাকবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরাজিত পাকিস্তানি সেনারা বিমানবন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে কুমিল্লার বরুড়ার দিকে ও ময়নামতি সেনা ছাউনিতে আত্মগোপন করে এবং কয়েকজন আত্মসমর্পণ করে। ভোরে পাকসেনাদের বিমানবন্দরের প্রধান ঘাঁটি দখল করেন মুক্তিসেনারা।


কুমিল্লা মুক্ত হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হচ্ছে, এই বিজয় উল্লাসে তখন গ্রামগুলো থেকে এবং শহরের মানুষেরা রাস্তায় নেমে আসেন।


এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আলম বাবুল বলেন, একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর ভোরে কুমিল্লা হানাদার মুক্ত হয়। আগরতলা সোনামুড়া থেকে সেদিন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে কুমিল্লায় প্রবেশ করি। অগ্রবর্তী দল হিসেবে ছিল নবম বেঙ্গলের মুক্তিসেনারা। আক্রমণের নেতৃত্বে ছিল ১১ গুর্খা রেজিমেন্ট। কুমিল্লার আপামর জনতা মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মুক্তির উল্লাসে বরণ করে নেন।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com