সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন
স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাহাড়ে অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৪, ১৯:০১
স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাহাড়ে অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতায় শঙ্কা প্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান বলেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।


১৫ মে, বুধবার দুপুরে খাগড়াছড়ির মহাজনপাড়ায় একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বাতিলের যুক্তি তুলে ধরেন। সেইসময় তিনি কেএনএফ এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।


সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের মহাসচিব আলমগীর হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুম রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মুকতাদের হোসেন, মহিলা পরিষদ এর খাগড়াছড়ি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক সালমা আহমেদসহ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


এতে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের বেপরোয়া চাঁদাবাজি, সেনাসদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা, ব্যাংক লুট, অরাজকতা সৃষ্টিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার পায়তারার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনে কেএনএফের উপস্থাপিত ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন।


দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রান্তিক অঞ্চলের অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর বিলীয়মান সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সার্বিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে কুকি-চিন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল (সংক্ষেপে কেটিস) নামে স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ গঠন করা। ভূমি ও পর্যটন বিষয়ক সংক্রান্ত সকল কর্মকাণ্ডসমূহের সর্বময় ক্ষমতা কেটিস এর উপর সম্পূর্ণভাবে অর্পণ করিতে হইবে। উক্ত অঞ্চলে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রদানসহ সকল ক্ষমতা কেটিসি এর উপর অর্পণ করিতে হইবে।


কেএনএফ-এর সশস্ত্র আন্দোলনকালীন কেএনএফ এর সশস্ত্র সদস্যসহ অন্যান্য নিরীহ ব্যক্তিদের মধ্যে যাহাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতারি পরোয়ানা, হুলিয়া জারি অথবা অনুপস্থিতকালীন সময়ে বিচারে শাস্তি প্রদান করা হইয়াছে, অস্ত্রসমর্পণ ও স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর যথাশীঘ্র সম্ভব তাহাদের বিরুদ্ধে সকল মামলা, গ্রেফতারি পরোয়ানা, হুলিয়া প্রত্যাহার করা এবং অনুপস্থিতকালীন সময়ে প্রদত্ত সাজা মওকুফ করা। কেএনএ এর কোন সশস্ত্র সদস্য বা কেএনএফ-এর নামে নিরীহ ব্যক্তিদের জেলে আটক থাকিলে তাহাদেরকেও বিনা শর্তে মুক্তি প্রদান করতে হবে।


৭১ সালের পর হইতে স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে এবং ২০২২ ও ২০২৩ সালে কুকি-চিন অঞ্চলে ব্যাপক সেনা অভিযানের ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে তথা ভারতের মিজোরাম এবং মিয়ানমারের পালেতুয়া এলাকায় পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় গ্রহণ করা কুকি-চিন শরণার্থীদেরকে স্বসম্মানে দেশে ফিরাইয়া আনিয়া পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কুকি-চিন আর্মড ব্যাটেলিয়ন (কেএবি) নামে সশস্ত্র পদাতিক ব্যাটালিয়ন গঠন করতে হবে।


সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০ জারি করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে ১৯০০ সালের ১ মে থেকে এই শাসনবিধি কার্যকর হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্যাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় প্রচলিত আইন অকার্যকর। দেশের সাংবিধানিক বিধিবিধান তোয়াক্কা না করে চলছে এই তথাকথিত শাসনবিধি বা মৃত আইন। এই কারণেই একই দেশে দুইটি আইন বিদ্যমান।


ব্রিটিশ কর্তৃক প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বা পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন (চিটাগং হিল ট্র্যাক্ট ম্যানুয়েল ১৯০০) কে আইন হিসেবে ২০১৪ ও ২০১৬ সালে পৃথক দুই মামলার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণ বেঞ্চ। যনভ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালে রাঙামাটি ফুডস প্রোডাক্ট লি. এক মামলায় হাইকোর্ট বেঞ্চ পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিকে ডেটল বা অকার্যকর আইন বলে রায় দেয়।


এ রায়ের ফলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অংশ পার্বত্য জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদসহ এবং শাসনবিধির সৃষ্ট প্রথাগত প্রতিষ্ঠানসমূহ সংকটের মুখে পড়েছিল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিমকোর্ট ২০১৬ সালে ২২ নভেম্বর শাসনবিধিকে একটি কার্যকর ও বৈধ আইন বলে রায় দেয়। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট বিচারাধীন ওয়াগ্নাছড়া টি স্টেট অপর এক মামলার ২০১৪ সালে ২ ডিসেম্বর রায় দেয়।


দুটি রায়ই শাসনবিধিকে কার্যকর বলে রায় দেয়। উপর্যুক্ত এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ করেছেন বাঙালিদের পক্ষে খাগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ আখন্দ ও আব্দুল মালেক। একাধিক আপিল শুনানির পর পরবর্তীতে রায়টি উচ্চ আদালত বাতিল করে মৃত আইন হিসেবে রায় দেয়। এই শাসনবিধি মৃত আইন হিসেবে রায়টি পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে মজবুত করে। শাসনবিধিকে আইন হিসেবে বলবৎ করার জন্য আঞ্চলিক দলগুলো সম্প্রতি বিশেষ তৎপর হয়ে উঠেছে।


পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় উপজাতি হেডম্যান-কার্বারী দিয়ে জনসমাগম করার মাধ্যমে রায়টি বলবৎ রাখার প্রচেষ্টা করছে।


এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি চিফ সার্কেল এই নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের নেতৃত্ব রয়েছে চাকমা চিফ সার্কেল ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়।


পার্বত্য বাঙালিরা নেতৃত্বহীন হওয়ার কারণে শাসন বিধির লাভ ক্ষতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। আদালত রায়টি যদি বলবৎ করে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এক বাঙালি আরেক বাঙালির বিরুদ্ধে লেগে থাকে এসব নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে দিনদিন হানাহানি, অনৈক্য ও ভেদাভেদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা দিনদিন বাড়ছে, সে সাথে বাঙালির শক্তি হ্রাস পাচ্ছে।


গত ১৩ মে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ সকাল ১০ ঘটিকায় আইনটি বলবৎ করার জন্য হাকিম আলী মার্কেট সম্মুখে জনসমাবেশ করার ঘোষণা দেয়।


পার্বত্য শাসনবিধি-১৯০০ এমন একটি মৃত আইন যেটি এ অঞ্চলের সরকার ও বাঙালিদের ভূমি অধিকার খর্ব করে এবং এ অঞ্চলের সেনাবাহিনীর কার্যক্রমের উপর প্রভাব ফেলে। তথাকথিত শাসনবিধির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ধরনের ভূমির মালিক উপজাতিরা। এই মৃত আইনের ক্ষমতাবলে হেডম্যান-কার্বারী ও সার্কেল চিফ সৃষ্টি। প্রথাগত ভূমি অধিকার


উপজাতিদের এ অঞ্চলের সব ভূমির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। এই শাসনবিধিকে আইন হিসেবে রায় বলবৎ করলে অচিরেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ধরনের ভূমির নিয়ন্ত্রণ হারাবে রাষ্ট্র, এমনটাই জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।


বিবার্তা/মামুন/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com