
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী মৌমিতা পরিবহনের বাসের হেলপার দ্বারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় ওই পরিবহনের ১৬ টি বাস আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
১৫ মে, বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরী গেট) এলাকায় ঢাকা- নবীনগরগামী মৌমিতা পরিবহনের বাসগুলো আটক করে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় সাভার থেকে টিউশন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনার জেরে বুধবার সকাল আটটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরী গেট) এলাকায় ঢাকা- নবীনগরগামী মৌমিতা পরিবহনের ১৬ টি বাস আটক করে শিক্ষার্থীরা। তবে আটককৃত বাসের চালক ও হেল্পারদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন বাস কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, আমি মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ব্যাংক টাউন থেকে টিউশন করিয়ে মৌমিতা বাসে করে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে আসছিলাম। বাস চলাকালে হেল্পার ভাড়া চাইলে আমি তাকে ১০০ টাকার একটি নোট দেই। হেল্পার বলে তার কাছে ভাংতি নাই, পরবর্তীতে আমাকে ভাংতি টাকা ফেরত দিবে। কিন্তু বাস রেডিও কলোনির কাছাকাছি আসার পর হেল্পার জানায় বাস আর সামনে যাবে না। বাসের যাত্রীরা সবাই তখন নেমে চলে যায়। আমি তখন হেল্পারকে ভাংতি টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বললে হেল্পার বলে আপনাকে ঢাকা নিয়ে যাই।
ভুক্তভোগী তার অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, বাসে মাত্র তিনজন লোক ছিল। বাসের চালক, হেল্পার এবং ওদের সাথের একজন। ঢাকা নিয়ে যাবে বলেই, তারা আমাকে বাজেভাবে ইঙ্গিত দেয়। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। তাড়াহুড়ো করে বাস থেকে নামতে চেষ্টা করলে বাস ছেড়ে দেয়। আমি কিছু না ভেবে বাস থেকে লাফ দেই এবং হাঁটুতে প্রচুর ব্যথা পাই। এই ঘটনার পরে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমার ব্যাচমেটদের বিষয়টি জানালে ওরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বন্ধু বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা জানান, গতকাল মঙ্গলবার আমাদের বান্ধবীর সাথে একটা খারাপ ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদে আমরা মৌমিতা পরিবহনের বাস আটক করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার ও আশুলিয়া থানার পুলিশকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সব সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও ৬.১০ থেকে ৬.১৮ পর্যন্ত সময়ের কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
আটক করে রাখা একটি বাসের চালক মোজাম্মেল ও হেল্পার বাবলু জানান, সকাল সাড়ে আটটা থেকে বাসগুলো ছাত্ররা আটক করতে শুরু করে। ঠিক কোন কারণে আটকানো হয়েছে তা জানতেন না তারা। এসময় ছাত্ররা বাস আটকে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া মোবাইল নেয়ার সময় প্রতিবাদ করলে একজনকে চড় মারা হয় বলে অভিযোগ করেছেন এই চালক ও হেল্পার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, ছাত্ররা ও আশুলিয়া থানার পুলিশসহ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা কিছু শনাক্ত করতে পারি নাই। আমরা বাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি দ্রুত ওই বাসের হেল্পার ও চালককে শনাক্ত করে আমাদের জানাতে। পুলিশ ও চেষ্টা করছে তাদেরকে শনাক্ত করার জন্য।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মনির উদ্দিন শিকদার বলেন, আমরা আশুলিয়া থানার পুলিশ সহ ছাত্রদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কিন্তু সিসিটিভি দেখে কোনো ঘটনা শনাক্ত করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বাদী হয়ে মামলা করবেন। ঘটনা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বাসগুলো এখানেই থাকবে।
তবে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, উত্তেজিত অবস্থায় ছাত্ররা এ কাজ করেছে। পরে আমি উপস্থিত হয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে মোবাইলগুলো ফিরিয়ে দিয়েছি। আমরা বাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি দ্রুত ওই বাসের হেল্পার ও চালককে শনাক্ত করে আমাদের জানাতে। পুলিশও চেষ্টা করছে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]