নাব্যতা সংকটে ব্রহ্মপুত্র: ব্যহত নৌকাসহ ফেরি চলাচল
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৫৩
নাব্যতা সংকটে ব্রহ্মপুত্র: ব্যহত নৌকাসহ ফেরি চলাচল
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

উত্তরের দারিদ্র্যতম জেলা কুড়িগ্রামের চিলমারীকে ঘিরে রয়েছে হাজারো ইতিহাস ঐতিহ্য। শিল্পী আব্বাস উদ্দিন এর দরদ ভরা কন্ঠের ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে’ সেই গান বিশ্বের কাছে চিলমারীকে পরিচিত করলেও পরিবর্তন হচ্ছে না চিলমারীর উন্নয়ন। প্রতি বছরে কিংবা মাসে মন্ত্রী আসছে নৌবন্দর পরিদর্শনে। তাদের বক্তব্যে দিয়ে যাচ্ছে আশ্বাস। কিন্তু দ্রুত নদী খনন সহ বন্দরের কাজ করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে ঢিলেঢালা।


এদিকে, খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ এখন নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই নদের বুকে জেগে উঠছে চর। আর বর্ষা মৌসুমে চরাঞ্চলের এসব গ্রাম থাকছে বন্যা সহ নদী ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে।


বর্তমানে চিলমারী উপজেলার নৌবন্দর ঘেঁষে প্রবাহমান ব্রহ্মপুত্র নদটি নাব্যতা হারিয়েছে মরাখালে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ লোকজনই পায়ে হেঁটে ব্রহ্মপুত্র নদের চর পাড়ি দিচ্ছে। অষ্টমির চর, নয়ারহাট, করাই বরিশালচর সহ বিভিন্ন স্থানের লোকজন এবার ব্রহ্মপুত্র নদে ইরি-বোরো চাষের প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। নদে চর জেগে উঠায় বন্ধ হয়ে গেছে দুই শতাধিক পরিবারের মাছধরা ও নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ। বিশাল নদটিতে চর জেগে পরিণত হয়ে ছোট্ট একটি খালে।


নৌকার মাঝি এন্তা জানান, শুকনো নদী, অনেক দূর ঘুরে ঘুরে যাইতে হয় তাই সময় ও তেল খরচ বেশি পরে। নৌকায় পারাপারের যাত্রী দিন দিন কমে যাচ্ছে। ইঞ্জিন চালিত প্রায় সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।


নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতা এলাকার কৃষক মাহফুজার রহমান বলেন, এ বছরে নদী ভাঙ্গনের কারণে আমাদের অনেক জমাজমি ভেঙে গেছে। যেটুকু আবাদি জমি অবশিষ্ট আছে সেগুলো ইতোমধ্যে চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সেচ ব্যবহার করতে হবে। এতে চাষাবাদে আমাদের প্রতিবছর বাড়তি খরচ পোহাতে হয়।


গ্রীষ্ম মৌসুমে শুকিয়ে জেগে উঠছে হরহামেশাই চর। আর বর্ষা মৌসুমে এই ব্রহ্মপুত্র নদের গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় সামান্য পানিতেই ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আর বন্যা এই এলাকার মানুষের জন্য একটি অভিশাপ। প্রতি বছরেই বন্যার কারনে নানান সমস্যার মধ্যে পরতে হয়।


২০১৬ সালে ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিলমারীতে আগমন করেন এবং খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি উদ্বোধন কালে তিনি জানান চিলমারী নদী বন্দরকে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবে কিন্তু বছরের পর বছর গেলেও কোন কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে না বলে অভিযোগ এ অঞ্চলের জনগনের।


তারা মনে করেন নদী খনন করে গভীরতা বাড়ালেই তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। এবং চাষাবাদ করতে সেচ ব্যবহার করতে হবে না, এতে চাষাবাদে খরচ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


চিলমারী গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহ অধ্যাপক মামুন অর রশীদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নদীর উপরও পড়ছে। তাই গ্রীষ্ম মৌসুমে শুকিয়ে যাচ্ছে আর বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও নদী ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করা না হলে চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়ন ও পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের অনেক গ্রাম বর্ষা মৌসুমে বন্যা কবলিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।


ব্রহ্মপুত্র নদ শুকিয়ে যাওয়ায় এসব গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি না থাকায় গাছপালা ও কৃষি উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। তাছাড়া চরাঞ্চলের এসব আবদি জমিতে শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ কমে যাচ্ছে। দ্রুত নদী খননের ব্যবস্থা করে নাব্যতা সংকটসহ সব ধরনের সমস্যা সমাধান করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।


ব্রহ্মপুত্র নদের সংস্কার না হলে বর্ষা মৌসুমে চরম হুমকির শিকার হবে উপজেলার চরাঞ্চলের এসব গ্রামগঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর নাব্যতা হারিয়ে বেকার হয়ে যাবে নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবন যুদ্ধ করা নৌকার মাঝির প্রায় দুই হাজার পরিবার।


এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ প্রধান পাইলট মাহবুবুর রহমান বলেন, এ সময় গুলোতে একটু নাব্যতা সংকট হবে তবে আমরা ফেরি চলাচলের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় একটি চ্যানেল ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। নৌকাগুলা ভিন্ন ভিন্ন পথে না গিয়ে। ফেরির জন্য ড্রেজিং করা নির্দিষ্ট পথে চললে নাব্যতা সংকটের সম্মুখীন হতে হবে না।


তাছাড়া নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যহত আছে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।


বিবার্তা/রাফি/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com