হিলিতে বৃষ্টির অভাবে জমির পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আমন চাষিরা
প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ১৫:৪৪
হিলিতে বৃষ্টির অভাবে জমির পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আমন চাষিরা
হিলি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

খাদ্য শস্য ভরপুর দেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুর। দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলি উপজেলার শ্রমিক ও কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন সোনালি ফসল আমনে চারা রোপণে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলার কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানান কৃষক। চলতি মওসুমের বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগিয়ে চারা রোপণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এ এলাকার কৃষকরা। গত এক সপ্তাহ টানা বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জমির পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে। কারণ আকাশের পানি ছাড়া জমিতে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হলে গুনতে হবে বাড়িতে টাকা। তবে এখন পর্যন্ত এলাকায় কোনো জমিতে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।


উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, একটি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নে মোট ৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হবে। এ বছর ৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৫’শ ৯২ মেট্রিক টন।


২০ জুলাই, বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন মাঠ সরেজমিনে দেখা গেছে চলতি বর্ষা মৌসুমে জমিতে আমন ধানের চারা রোপণে যেমন ব্যস্ত শ্রমিকরা তেমনি জমি তৈরি, জমিতে সার ছিটানোসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে এখানকার কৃষকরা। তবে এবারে আমন মৌসুমে শ্রমিক সংকট তেমন কোথাও দেখা যায়নি বললেই চলে।


উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের কোকতাড়া গ্রামের আমন চাষি মিজানুর রহমান, আবু রায়হান ও আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এবার বর্ষার শুরুতেই পর্যাপ্ত আকাশের পানি ও শ্রমিকের সংকট না থাকায় এবার চারা রোপণ করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে কোন বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠের উঁচু জমির পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছি। দুই এক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে জমিতে গভীর নলকূপ থেকে সেচ দিতে হবে। আর এতে গুনতে হবে বাড়তি খরচ। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই চারা রোপণের কাজ শেষ হয়ে যাবে।


ওই এলাকার শ্রমিক ফরমান আলী, শুশীল রবিদাস ও মঙ্গলা চন্দ্র মহন্ত বলেন, মাঠের উঁচু জমির পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের এই এলাকায় জমি গাড়ার ধুম পড়েছে। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা নিচ্ছি। আমাদের দলে আমরা ১২ জন লোক কাজ করতেছি। প্রতি দিন প্রায় ৬-৭ বিঘা জমি গাড়ি। এতে ৫০০-৬০০ দিন হাজিরা পাচ্ছি। এখন আমাদের দম ফেলার ফুরসত নাই। তবে আগামী এক দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রায় জমি গাড়া শেষ হবে বলে জানান তারা। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার ফ্রি পেয়ে খুশি তারা।


উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের খাট্রাউচনা গ্রামের আমন চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার নিজের ১০-১২ বিঘা জমি আছে। জমি ও বীজতলা নিজেই তৈরি করেছি। নিজেদের মাটির টিলার দিয়ে আগে জমি চাষ করে তৈরি করে নিয়েছি। গত দুই তিনদিন আগে থেকে জমি রোপণ শুরু করেছি।


এখন পর্যন্ত জমিতে পানি সেচ দিতে না লাগায় অনেক ভালো আছি। যদি আর এক সপ্তাহ পানি না হয় তাহলে জমিতে পানি সেচ দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। তাই মাঠের উঁচু নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। পানি সেচ দিতে হলে গুনতে হবে বাড়তি টাকা। এবার উপজেলা থেকে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার ফ্রি পেয়েছি।


পৌর শহরের চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক রিপন বসাক বলেন, এবার ১৫-২০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করতেছি। ইতিমধ্যে সুন্দর করে বীজতলা তৈরি করে নিয়েছি। প্রথমে ট্রাকট্রর (মেসি) দিয়ে জমি চাষ করে নিয়েছি। এখন জমি আস্তে আস্তে তৈরি করতেছি এবং রোপণ করা শেষ করতেছি প্রতি বিঘা জমি রোপণ করতে শ্রমিকেরা নিচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকা (৩৩ শতাংশ)।


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. আরজেনা বেগম বলেন, চলতি আমন মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় রোপা আমন চাষে কৃষকের আগ্রহ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য কৃষি প্রণোদনা হিসেবে ৫২০ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। এবার আমন মৌসুমে ১টি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নে ৮ হাজার ১’শ ১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ধাব উৎপাদন এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭৫৯২ মে. টন।


২১ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত উপজেলায় ১৫% শতাংশ জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


তিনি আরও বলেন, আমাদের মাঠ কর্মীরা সবসময় কৃষকের পাশে থেকে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করছি, সময়মতো নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।


বিবার্তা/রব্বানী/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com