রাতে সন্তান প্রসব, সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে মা
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ১৮:০০
রাতে সন্তান প্রসব, সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে মা
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পরীক্ষার আগের রাতে অপারেশন করে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। পরের দিন চলমান এসএসসি পরীক্ষায় (দাখিল) অংশ নেন। এরপর অসুস্থ শরীর নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন কুড়িগ্রামের চিলমারীর এক কিশোরী।


অপারেশনের টেবিল থেকে উঠে পরের দিন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে সবার আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে উঠেছেন ওই পরীক্ষার্থী।


প্রসব পরবর্তী সময়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলার রাজারভিটা ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ড. মো. মিনহাজুল ইসলাম।


ওই পরীক্ষার্থীর বাবার বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে। উপজেলার পাত্রখাতা রিয়াজুল জান্নাত মাদ্রাসা থেকে এবারের দাখিল পরীক্ষায় তিনি অংশ নিয়েছেন।


গত ২৯ এপ্রিল রাতে অপারেশনের মাধ্যমে তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পরীক্ষায় অংশ না নিলে একটি বছর পিছিয়ে পড়বেন, এই আশঙ্কা থেকে তিনি পরের দিন (৩০ এপ্রিল) পরীক্ষায় অংশ নেন বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।


৩ মে, বুধবার রাজারভিটা ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের বারান্দায় ওই কিশোরীর সদ্য ভূমিষ্ট ছেলে সন্তানকে নিয়ে বসে আছেন তার মা (শিশুর নানি)। অসুস্থ থাকায় আলাদা কক্ষে বসে একক ভাবে পরীক্ষা দিচ্ছেন ওই কিশোরী। পরীক্ষা শেষে কথা হয় ওই পরীক্ষার্থীর সাথে।


তিনি জানান, পরীক্ষার আগের রাতে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। পরে উলিপুরের একটি ক্লিনিকে তাকে নেওয়া হয়। সেখানে ওই রাতেই অপারেশনের মাধ্যমে তিনি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। ছেলের মা হওয়ার আনন্দের সাথে সাথে তিনি পরীক্ষা নিয়েও
উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসকের পরামর্শ ও পরিবারের লোকজনের সম্মতি নিয়ে পরের দিন প্রথম পরীক্ষায় অংশ নেন। এখনও শারীরিকভাবে দুর্বল থাকলেও তিনি পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।


মা হওয়া এই কিশোরী বলেন,‘ দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। কিন্তু আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। স্বামী তাতে সম্মত ছিলেন। তার সহযোগিতায় আমি দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছি। পরীক্ষায় অংশ না নিলে একটি বছর নষ্ট হয়ে যাবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি।’


তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমদিন কেন্দ্রে দেরিতে পৌঁছেছিলাম। প্রথমদিন থেকেই আলাদা কক্ষে বসে পরীক্ষা দিচ্ছি। অসুস্থ থাকলেও পরীক্ষা দিতে পেরে আমার ভালো লাগছে। পরীক্ষাও ভালোভাবে দিতে পারছি। আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।’


কেন্দ্রে নাতিকে নিয়ে বসে থাকা ওই পরীক্ষার্থীর মা বলেন, ‘সন্তান সম্ভবা হওয়ায় মেয়েকে বলেছিলাম পরীক্ষা না দিতে। তাকে বলেছিলাম আগামী বছর পরীক্ষা দেওয়া যাবে। তারপরও তার ইচ্ছা সে পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে পরীক্ষার আগের রাতে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। পরে ছোট একটি অপারেশনের সাহায্যে সে বাচ্চা প্রসব করে। এরপরও সে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জেদ ধরলে তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে সম্মতি দেই।’


কেন্দ্র সচিব ড. মো. মিনহাজুল ইসলাম জানান, ‘প্রথম পরীক্ষার দিন ভেবেছিলাম ওই পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত। পরে পরীক্ষা শুরুর প্রায় ৩০মিনিট পর সে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। সাথে শিশু সন্তান। পরে আমরা আলাদা কক্ষে তার পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করি। অল্প বয়সে সন্তানের মা হলেও পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহের বিষয়টি আমাদেরকে আশান্বিত করেছে। নিয়ম অনুযায়ী আমারা তাকে প্রয়োজনীয় বাড়তি সময় দিচ্ছি।’


বিবার্তা/রাফি/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com