শিরোনাম
গোদাগাড়ীতে ১০ টাকার চাল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০১৬, ১২:৫৯
গোদাগাড়ীতে ১০ টাকার চাল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দশ টাকার চাল বিতরণে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দেয়ার পাঁচদিন পরও ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এক মাসের চাল দিয়ে দুই মাসের টিপসই ও স্বাক্ষর নেয়ার প্রমাণ মিলেছে সরেজমিন তদন্তে। বিশেষ করে নিরক্ষর হতদরিদ্র আদিবাসী পল্লীগুলোতে এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে।


গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের গড়ডাইং গ্রাম। শতঘর আদিবাসীর এই গ্রামে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড পেয়েছেন ৭ জন। গ্রামের মন্ডল জুয়েল সরেন বাবু বলেন, গোগ্রাম ইউনিয়নের দুই জন ডিলারের একজন মিজানুর রহমান সোলাব ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার ওয়ার্ডের কার্ডধারীদের গত ২৭ সেপ্টেম্বর কার্ড হস্তান্তর করা হয়েছে। কার্ড হস্তান্তরের সময় কার্ডগুলোতে সেপ্টেম্বর মাসের চাল উত্তোলন দেখানো হয়েছে। গত ৪ অক্টোবর আদিবাসীদের কার্ড প্রতি ৩০ কেজি চাল দিয়ে কার্ডে টিপসই নিয়েছেন। কিন্তু আদিবাসীদের কার্ডগুলো চেক করতে গিয়ে তারা ডিলারের জালিয়াতি ধরতে পারেন। কারণ সেপ্টেম্বর মাসে কোনো কার্ডধারীকে চাল দেয়া হয়নি।


গড়ডাইং আদিবাসী পল্লীর বাসিন্দা নিমাই সরেন (কার্ড নং-৯৬৪) বলেন, তিনি লেখাপড়া জানেন না। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাকে কার্ড হস্তান্তর করেন ডিলার। ওইদিন কোনো চাল দেয়া হয়নি। কার্ড হস্তান্তরের সময় কার্ডে তিনি টিপসই দেননি। হস্তান্তরের সময় ডিলার সেপ্টেম্বর মাসে চাল বিতরণ দেখিয়েছেন এটা তিনি বুঝতে পারেননি। গ্রহীতার ঘরে শুধু লেখা রয়েছে নিমাই। অন্যদিকে গত ৪ অক্টোবর ৩০ কেজি চাল দিয়ে কার্ডের গ্রহীতার ঘরে নিমাইয়ের টিপসই নিয়েছেন। গ্রামের মণ্ডল কার্ডটা চেক করতে গিয়ে ডিলারের জালিয়াতি ধরতে পেরেছেন।


একইভাবে পরমেশ্বর মারান্ডি (কার্ড নং-৯৬৩), মঙলা উঁরাও (কার্ড নং-৯৪৬), অনিল টুডুর (কার্ড নং-৯৬২), ক্ষেত্রেও একই ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। তারা জানান, তারা সই করতে পারেন না।


আদিবাসী গ্রামের মণ্ডল আরো বলেন, এখানকার বাসিন্দারা লেখাপড়া জানেন না। স্বাক্ষর দেয়ারতো প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু তাদের কার্ডগুলোতে সেপ্টেম্বর মাসের চাল বিতরণ দেখিয়ে কার্ডে গ্রহীতার ঘরে স্বাক্ষর করা দেখানো হয়েছে।


জুয়েল বলেন, প্রতিটি আদিবাসীর ক্ষেত্রে ডিলার এমন জালিয়াতি ও দুর্নীতি করেছেন। সেপ্টেম্বর মাসের চাল তুলে বাইরে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।


সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু আদিবাসী নয়- অন্যদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের জালিয়াতি করেছেন ডিলাররা।


গড়ডাইং এর পার্শ্ববর্তী বলিয়ার ডাইং গ্রামের বাসিন্দা জুলফিকার নাঈম (কার্ড নং-৮৯৬) বলেন, তার কার্ডেও একই কারচুপি করেছে ডিলার। শুধু তিনি নন, তার গ্রামের সব কার্ডের সেপ্টেম্বর মাসের চাল না দিয়ে ডিলার কাল্পনিক সই স্বাক্ষর দেখিয়েছেন। তবে তিনি অক্টোবর মাসের চাল পেয়ে স্বাক্ষর করেছেন কার্ডে। জুলফিকার নাঈম ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৬ অক্টোবর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।


জানা গেছে, গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়নের দুই ডিলারের একজনের নাম তৌহিদুল ইসলাম। তিনি ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক। অন্যজন মিজানুর রহমান গোগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি।


ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা নিজেও একটি কার্ড পেয়েছেন। তাকেও একইভাবে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।


মাসুদ জানান, গোগ্রাম ইউনিয়নে হতদরিদ্র মানুষের এই কার্ডের সংখ্যা এক হাজার ৬৩৫টি। এই ইউনিয়নের এক মাসের বরাদ্দ প্রায় ৪৯ টন।


হতদরিদ্ররা জানান, সেপ্টেম্বর মাসের পুরো বরাদ্দ তুলে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন দুই ডিলার। এই পরিমাণ চালের বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে সরকারি মূল্য পাঁচ লাখ টাকা।


এদিকে ডিলার তৌহিদুল ইসলাম ও মিজানুর রহমানের দাবি, তারা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর দুই মাসেরই চাল দিয়েছেন।


কার্ডে এক মাসে স্বাক্ষর ও অন্যমাসে টিপসইয়ের বিষয়টি জানতে চাইলে, দুই ডিলারই এই প্রতিবেদককে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে বলেন।


গোদাগাড়ী উপজেলার ৯ ইউনিয়নে কার্ড সংখ্যা ১৪ হাজারের কিছু বেশি। ৯ ইউনিয়নে মোট ১৮ জন ডিলার রয়েছেন। প্রতি মাসে ১৮ ডিলার ৪২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাচ্ছেন। উপজেলার প্রায় সব এলাকা থেকেই ১০ টাকার চাল বিতরণে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আসছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে। তবে এক মাসের চাল দিয়ে দুই মাসের স্বাক্ষর ও টিপসই নেয়ার ঘটনা প্রত্যেক ইউনিয়নে ঘটেছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ নেওয়াজ বলেন, গোগ্রাম ইউনিয়নে চাল বিতরণে ডিলারের জালিয়াতির মৌখিক অভিযোগ পেয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠানো হয়েছে ঘটনা দেখতে। প্রমাণ পেলে ডিলারের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/রিমন/নাজিম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com