শিরোনাম
কোয়েটায় বই ব্যবসার দিন শেষ !
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৭:৫২
কোয়েটায় বই ব্যবসার দিন শেষ !
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সাজিদ বালুচ (২২) পাকিস্তানের বেলুচিস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্র। তিনি ক্যাম্পাসের বুক পয়েন্টে এসেছেন কিছু ডিসকাউন্টে বই কেনার আশায়। দুটি বই কিনবেন তিনি।
বুক পয়েন্টের মালিক মোহাম্মদ এশা হাসিখুশি মানুষ। তাঁর বয়স মাত্র ৩৫ হলেও এর মধ্যে মাথায় বিশাল টাক গজিয়েছে। তা ঢাকার জন্য মাথায় টুপি পরে থাকেন।


সাজিদকে ২৫ ভাগ কমিশন দিতে রাজি হলেন মোহাম্মদ এশা। ছাত্রদের ছাড় দেয়ার পক্ষপাতী তিনি। এই সাজিদের মতো ছাত্ররাই তার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে। এটাকে নিজের সৌভাগ্যই মনে করেন মোহাম্মদ এশা। নিউজউইক টাইম বুকল্যান্ডের মতো বইয়ের দোকানগুলোর এই সৌভাগ্য হয়নি।


আরেক বইবিক্রেতা সোহাইল আহমদ। ৭২ বছর বয়সী এ মানুষটি তাঁর শিশুসুলভ হাসিমাখা মুখের জন্য পরিচিত ও জনপ্রিয়। তিনি কোয়েটার সবচেয়ে প্রাচীন একটি বইয়ের দোকানের মালিক। নাম নিউ কোয়েটা বুক স্টল। ১৯৩৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত। তার জায়গাটি ভাড়া নেয়ার জন্য ব্যাংকগুলো ৫ লাখ রুপি দিতে রাজি। কিন্তু তিনি দোকান গুটিয়ে ফেলতে নারাজ। তিনি যে কোনো মূল্যে বইয়ের দোকানটি চালু রাখতে চান।


তিনি বলেন, ‘নিউজউইক টাইম বুকল্যান্ডের মালিক সালিম বুখারি আমাকে বলেছেন যেন কোনোভাবেই দোকানটি বন্ধ না করি। তবে বুখারি সাহেব নিজে এ ব্যবসার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি তার দোকানটি বিক্রি করে দিতে চান।’


এসব কথা বলতে-বলতে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন সোহাইল আহমদ। নিজে নিজেই বলেন, এছাড়া তিনি (বুখারি) আর কীই বা করতে পারেন। তিনি নিজে বুড়ো হয়ে পড়েছেন। তার ছেলেদের একজন ইংল্যান্ডে, আরেকজন লাহোরে থাকেন। তার স্ত্রী মারা গেছেন। তবে সবচেয়ে বড় কথা, বই বিক্রি করে চলা যায় না।


সোহাইল আহমদের দোকানটি কোয়েটা নগরীর একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। অথচ দোকানে ক্রেতা আসার ঘটনা বিরল।


তারপরও কয়েকটি কারণে এখনো দোকানটি চালিয়ে চালিয়ে যেতে চান সোহাইল সাহেব। একটি কারণ হলো, দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার বাবা মোহাম্মদ আইয়ুব। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ারও আগে। ফলে এই দোকানটি তার পারিবারিক ঐতিহ্য। এই দোকানেই তার পুরনো বন্ধুরা আর সহকর্মীরা আসেন দেখা-সাক্ষাৎ করতে। এই কারণেই তিনি ব্যাংকের প্রলোভনেও ধরা দেননি।


এক সময় বেলুচিস্তানের বিভিন্ন অংশ থেকে ছাত্ররাও আসতো এই দোকানে। এখন তাদের সাক্ষাৎ পাওয়া বিরল ব্যাপার।


আসলে বেলুচিস্তানে পাঠাভ্যাস কমে যাওয়ায় বই বিক্রিও কমে গেছে।


তবে বিষয়টি মানতে নারাজ ড. শাহ মোহাম্মদ মারি। তিনি উর্দু ভাষায় কয়েকটি বই লিখেছেন। তার মতে, লোকজন পড়ে ঠিকই, তবে তাদের পড়ার ধরণটি বদলে গেছে। লোকজন এখন ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পড়াশোনা করে। এগুলোই এখন বইপুস্তকের নতুন উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।


তবে স্বীকার করেন, বইয়ের দোকানের জন্য এখন কঠিন সময়। বেলুচিস্তানে বই বিক্রি কমে যাওয়ার জন্য তিনি তিনটি কারণের কথা বলেন। একটি হলো আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, দ্বিতীয়ত বইয়ের বিকল্প উৎস হিসেবে ইন্টারনেটের মতো অনেক মাধ্যমের আবির্ভাব এবং তৃতীয়টি হলো বইয়ের মূল্য বেড়ে যাওয়া।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com