
একটি হাতি। নাম লাদেন। গ্রামের মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কের আর এক নাম। তারাই 'লাদেন' নামটি দিয়েছেন। ‘লাদেন’কে ধরতেই হবে। মন্ত্রী মশাইয়ের নির্দেশ। কিন্তু লাদেন যে অধরা। আছে শুধু তার নিত্যনতুন হামলার চিহ্ন। অতর্কিতে হানা দিয়ে ফের গায়েব হয়ে যাচ্ছে লাদেন। ‘পাইক-বরকন্দাজ’ নিয়ে কাজ না হওয়ায় ‘লাদেন’কে ধরতে এবার বিশেষজ্ঞদের তলব করল ভারতের আসাম সরকার।
‘লাদেন-রহস্য’ জানতে গতকাল শনিবার মুঠোফোনে আসামের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে। শিলচর থেকে মুঠোফোনে তিনি জানান, ‘লাদেন’ আসলে একটি বুনো পুরুষ হাতি। হাতিটির অতর্কিত হামলায় গ্রামবাসী আতঙ্কে থাকে। গ্রামবাসীই হাতিটির নাম দিয়েছে ‘লাদেন’। হাতিটিকে ধরতে বিশেষজ্ঞ বাহিনী আনা হচ্ছে।
বনমন্ত্রী জানান, আসামের মেঘালয় সীমান্তবর্তী গোয়ালপাড়া জেলায় পাঁচ মাস ধরে পাহাড় থেকে নেমে গ্রামবাসীকে অতিষ্ঠ করে বেড়াচ্ছে হাতিটি। ইতিমধ্যে হাতিটির আক্রমণে পাঁচজন মারা গেছেন। বহু জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। দরিদ্র মানুষের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে। পাহাড় থেকে এসে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ফের পাহাড়ি জঙ্গলে ফিরে যাচ্ছে হাতিটি।
এর আগে আসামের এক বনাধিকারিক রাজ্য বনদফতরের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, 'লাদেন'কে rogue অর্থাত্ 'পাজি' ঘোষণা করা হোক। গোয়ালপাড়া বনাঞ্চলের ৩৬৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থান করছে লাদেন। ৩৭ জনকে সে একাই পিষে-আছড়ে মেরেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। যার শেষতম ঘটনাটি ঘটেছে গত ১ জুন। ভোররাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মনোজ হাজং নামে জনৈক এক ব্যক্তিকে আছড়ে মারে।
মনোজের এক তুতো ভাই সঞ্জয়ের কথায়, ভোররাত সোয় ৪টা হবে। বাইরে আওয়াজ পেয়ে বেরিয়ে এসে দেখি, লাদেন চলে যাচ্ছে। ওই আলোআঁধারির মধ্যে নজর পড়ে দাদার নীথর দেহ পড়ে রয়েছে। সঞ্জয়ই জানালেন, অন্য হাতির তুলনায় আকারে বড় বলেই আমরা তার নাম দিয়েছি লাদেন।
অ্যাসিস্ট্যান্ট কনজার্ভেটর অফ ফরেস্ট নয়নজ্যোতি রাজবংশী জানান, মেঘালয়ের গারো পাহাড় থেকে নেমে এসে অসমের গোয়ালপাড়া জঙ্গলে ডেরা বেঁধেছে হাতিটি। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে দৌরাত্ম্য।
হাতিটিকে জীবিত ধরার প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, হাতিটিকে ঠেকাতে এবার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ যাচ্ছে আসাম সরকার। রাজ্যের দুই হস্তী বিশেষজ্ঞ কুশল কুমার শর্মা ও কৌশিক বড়ুয়াকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাদের পরামর্শ নিয়ে হাতিটিকে জীবিত ধরার চেষ্টা করবে বন দপ্তর।
কিন্তু যতক্ষণ ‘লাদেন’ ধরা না পড়ছে, ততক্ষণ কী হবে? মন্ত্রী জানালেন, গোয়ালপাড়ায় জারি থাকছে বিশেষ সতর্কবার্তা। গ্রামবাসীকে স্পর্শকাতর এলাকায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আসামের ৫৬টির মধ্যে মেঘালয় সীমান্তবর্তী গোয়ালপাড়াতেই রয়েছে ৪৭টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ফসল পাকলেই হাতির আনাগোনা লেগেই থাকে। কিন্তু দলছুট এই দাঁতাল হাতি রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে সেখানে।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]