শিরোনাম
মালদ্বীপে ভিনদেশী শ্রমিকরা যেমন আছে
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৪৩
মালদ্বীপে ভিনদেশী শ্রমিকরা যেমন আছে
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারত মহাসাগরের অথৈ জলরাশির মাঝখানে হাজারখানেক ছোট ও মাঝারি দ্বীপ নিয়ে ''ভেসে আছে'' যে দেশটি, তার নাম মালদ্বীপ। সম্পদ বলতে প্রায় কিছুই নেই দেশটির - সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও পর্যটন ছাড়া। কিন্তু অবাক করার মতো হলেও সত্য, সে-দেশটিও ১৩০,০০০ হাজার বিদেশী শ্রমিকের কর্মসংস্থান করেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে, ২০১৬ সালে এ শ্রমিকরা মালদ্বীপ থেকে ৩৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স (প্রবাস আয়) নিজেদের দেশে পাঠিয়েছে।


মালদ্বীপে এসব শ্রমিক কেমন আছে জানতে অনুসন্ধান চালায় মালদ্বীপ ইনডিপেনডেন্ট। জবাবে বিদেশী শ্রমিকরা বলেছে, ওখানকার জীবন খুবই কঠিন ও শ্বাসরুদ্ধকর।


কথা হয় সাইফুল ইসলাম (২৬) নামে এক বাংলাদেশীর সঙ্গে। সাইফুল এদেশে আছেন দু'বছর হলো। কাজ করেন থিলাফুসি দ্বীপে। ওই দ্বীপটিতে আসলে আবর্জনা ফেলা ও পোড়ানো হয়। সাইফুলও এ কাজেই জড়িত। বেতন পান ২৫০ মার্কিন ডলার।


এ বেতনে চলাই সম্ভব হয় না সাইফুলের। দেশে তার বৌ আর তিন ছেলেমেয়ে আছে, তাদের জন্যও টাকা পাঠাতে হয়। তাই টাকা বাঁচাতে ঘর ভাড়া না-নিয়ে একটি কনস্ট্রাকশন সাইটে রাত কাটান তিনি। কারণ এদেশে একটি রুম ভাড়া নিলেই অনেক টাকা বেরিয়ে যাবে। অবশ্য সাইফুল একা নন, এরকম আরো অনেকেই থাকেন ওখানে।


মালদ্বীপের রাজধানী মালে-তে থাকেন নাগরী মুহাম্মদ। ২৯ বছর বয়সী এ মানুষটি এসেছেন নেপাল থেকে। পেশায় নির্মাণশ্রমিক। মাসিক আয় ২৯১ ডলার।


বাংলাদেশী সাইফুলের মতো তাঁর কাহিনীও দুঃখে ভরা। তিনি বলেন, এক বছর আগে আমার মা ক্যান্সারে মারা যান। তাঁকে কেমো দেয়ার সময় আমি টাকা পাঠাতাম। মা চলে যাওয়ার পর সংসারে আমার বৌ ছাড়া আর কেউ নেই। একটা ছেলে ছিল, সেও দুর্ঘটনায় মারা গেছে।


নাগরীর সঙ্গে তার নিয়োগকর্তা ও কম্পানি বেশ ভালো আচরণই করে। তবু তাঁর মনের কষ্ট যায় না। তিনি ভাবেন পরিবারের জন্য তাঁর আরো বেশি কিছু করা উচিৎ ছিল, কিন্তু করতে পারছেন না।


মালেতেই গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন নেপালী নারী নিরাজা। ৪০ বছর বয়সী এ নারী গত নয় বছর ধরে মালদ্বীপে আছেন। দেশে তাঁর দু' সন্তান আছে।


স্বামী? নিরাজা বলেন, আমার স্বামী মদ্যপ ও মাদকাসক্ত। আমার বাচ্চারা থাকে আমার দেবরদের সঙ্গে। ওদের দেখাশোনা বাবদ দেবররা আমার কাছে অনেক টাকা দাবি করে। বছরে একবার আমি বাচ্চাদের দেখতে দেশে যাই।


স্থায়ীভাবে দেশে যাওয়ার ইচ্ছা আছে কি না জানতে চাইলে পরিষ্কার দিভেহি ভাষায় (মালদ্বীপের ভাষা) নিরাজা বলেন, চাই। কিন্তু ওখানে আমার মদ্যপ স্বামীটা আছে, তাই যেতে মন টানে না।


নিরাজা জানান তাঁর মালিক তাঁকে দেশে যাওয়ার সুযোগ দেন আর যে বাড়িতে তিনি কাজ করেন তারাও তার ভালো-মন্দের খোঁজ রাখে, তাঁর বাচ্চাদের জন্যও টাকা দেয়।


মালদ্বীপে বছরখানেক ধরে আছেন মোহাম্মদ খাইরু (২০)নামে এক বাংলাদেশী। এ সময়ে নানা সেক্টরে কাজ করেছেন তিনি - কনস্ট্রাকশন, ক্যাটারিং, পেইনটিং। অনর্গল ইংরেজি বলতে পারেন খাইরু। তিনি বলেন, আমি দেখেছি আমার চাচারা কিভাবে কাজ করতেন, আমার বাবা কিভাবে কাজ করতেন। আমাদের পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে বা অথবা আমার নিজের ভবিষ্যতের জন্য একটা জবই যথেষ্ট নয়।


বাংলাদেশী এ তরুণ ও-লেভেল কমপ্লিট করেছেন। তিনি বলেন, আমার বয়স যখ ১৮, তখন আমি এদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিই। লেখাপড়া জানা থাকায় আমার বেশ সুবিধা হয়েছে। তবে আমি উচ্চশিক্ষা নিতে পারিনি, কারণ আমার টাকা লাগবে। এখন এভাবেই আমি টাকা কামাই করছি।


মালদ্বীপে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। এদিন প্রবাসী শ্রমিকরা ভিড় জমান রাজধানী মালে-র রিপাবলিক স্কয়ারে। জমে ওঠে আড্ডা। ওখানে বসেই কেউ-কেউ দেশের বাড়িতে ফোন করে স্বজনদের সাথে কথা বলেন। আল শাওকার (২৫) নামে এক বাংলাদেশী বলেন, চারপাশে যেসব বন্ধুবান্ধব আছে তারা কেউই খারাপ না, কিন্তু সবচাইতে বেশি মিস করি পরিবারকে।


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com