শিরোনাম
চীন দেশের ‘সবজির ডাক্তার’
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৩৯
চীন দেশের ‘সবজির ডাক্তার’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

চীন দেশের মানুষ তিনি। পেশা সবজির ‘চিকিত্সা’ করা। তাই তিনি ‘সবজির ডাক্তার’ বলে পরিচিত। তার নাম চাং ইয়ানসিয়াং (৩৫)। এই ডাক্তার ভিডিওর মাধ্যমেও কৃষকদের অসুস্থ সবজির চিকিত্সা দেন। তাঁর ক্লিনিক পূর্ব চীনের শানতুং প্রদেশের শৌকুয়াং শহরে অবস্থিত।


শানতুং প্রদেশের শৌকুয়াং শহরের একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন চাং ইয়ানসিয়াং। ছোটবেলায় তাঁর বাবা মারা যান। ফলে তিনি মায়ের হাতেই বড় হন। তাঁর পরিবারে কাজ করার মানুষের অভাব বলে প্রতি বছর তারা সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন ভাতা গ্রহণ করতে বাধ্য হতেন।


গত শতাব্দীর আশির দশকের আগে সেখানে সবজি চাষ একেবারেই হতো না। আশির দশকের শেষ দিক থেকে শৌকুয়াং শহর শীতকালে প্লাস্টিকের আবরণ ব্যবহার করে সবজি চাষ করতে শুরু করে। কৃষকরা এতে উপকৃত হন।


চাং ইয়ানসিয়াংও নিজেও এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর তাঁর চাষ করা টম্যাটো ফলনের আগেই আগাছা ও কীটপতঙ্গে আক্রান্ত হয়। অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি এর প্রতিকার করতে পারেননি। ফলে সব টম্যাটো নষ্ট হয়ে তার প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়।


এ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চাং ইয়ানসিয়াং সবজি চাষের পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি বলেন, সবজি চাষে সফল হওয়ার জন্য বিশেষ জ্ঞান ও প্রযুক্তি থাকা দরকার। ভালোভাবে সবজি চাষ করার জন্য আমি মাধ্যমিক স্কুলের কৃষিবিজ্ঞানের বইগুলো আবার পড়েছি। এর পর আমার সবজি চাষের আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কৃষিবিজ্ঞান পড়ছি।


দ্বিতীয় বছর চাং ইয়াংসিয়াং দু'টি আবরণের নিচে টম্যাটো ও শসা চাষ করেন। সে বছর তিনি প্রচুর ফলন পান। এর পর তিনি চাষাবাদের পাশাপাশি লেখাপড়াও করতে থাকেন। বাস্তব অনুশীলন ও পড়াশোনার মাধ্যমে সবজির ভেতরে জন্মানো আগাছা ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তাই স্থানীয় সরকার তাকে "সিনিয়র কৃষিবিদ" খেতাবে ভূষিত করে।


আবরণের নিচে সবজি চাষের এ পদ্ধতিতে আগাছা ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এখনো দুর্বল। এদিকে সরকার কৃষি প্রযুক্তিবিদদেরকে কৃষিকাজে সেবা দেয়ায় উত্সাহ দিয়ে আসছে। চাং ইয়ানসিয়াং এর মধ্যে বিপুল বাণিজ্যিক সুযোগ দেখতে পেয়েছেন। তিনি একদিকে কৃষকদের সবজি চিকিত্সা করেই ব্যাপক আয় করতে পারেন, অন্য দিকে কৃষকরা আগাছা ও কীটপতঙ্গের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। এ দুই কারণে চাং ইয়ানসিয়াং সবজি চাষীদের জন্য "সবজির ডাক্তার" হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।


২০০২ সালে স্থানীয় সরকারের সাহায্যে শৌকুয়াং শহরে প্রথম "সবজির হাসপাতাল" স্থাপন করেন চাং ইয়ানসিয়াং । হাসপাতালে এসে চিকিত্সা নেয়া কৃষকদের সংখ্যা বিপুল। তাদের মধ্যে কিছু কৃষক অনেক দূর দূরান্ত থেকে এখানে আসেন। ফু সুয়েলিয়াং নামের একজন কৃষক বলেন, ডাক্তার চাং-এর হাসপাতালটি আমাদের খুব সুবিধা করে দিয়েছে। সবজির যে কোনো সমস্যায় এখান থেকে চিকিত্সা নিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।


২০০৪ সালে শৌকুয়াং শহরে সবজির আগাছা ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। চাং ইয়াসিয়াং এ সমিতির চেয়ারম্যান। সমিতির বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে সবজির চিকিত্সা করেন, আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষিপ্রযুক্তি ও জ্ঞান প্রচার করেন। তা ছাড়া এ সমিতি নিয়মিত সবজির কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ক্লাস নেয় এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলা ও ব্যবহার দ্রুততর করে।


২০০৫ সালে চাং ইয়ানসিয়াং শানতুং প্রদেশের কৃষি বিভাগের বিনিয়োগ করা এক লাখ রেনমিনপি ব্যবহার করে কম্পিউটার, অণুবীক্ষণযন্ত্র, ভিডিক্যামেরাসহ কিনেছেন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে "সবজির দূরপাল্লার চিকিত্সা ব্যবস্থা" চালু করেছেন। এভাবে তিনি সারা দেশের বিভিন্ন জায়গার সবজিচাষীদের জন্য সবজির ডাক্তার হিসেবে কাজ করছেন।


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com