ডেঙ্গু জ্বরের পরিস্থিতি দিন দিন মহামারি আকার ধারণ করছে।মাস খানেক আগে হঠাৎ রাজধানীতে বাড়তে থাকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। শুরুতে ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু জ্বর।ইতোমধ্যে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ঠাই হচ্ছে না ডেঙ্গু রোগীদের।ভর্তি হতে না পেরে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়াচ্ছেন রোগীর স্বজনরা।অধিকাংশ হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি করা হয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০ জন শিশুর ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ওয়ার্ডে বর্তমান রোগী ভর্তি রয়েছে ২৫০ জনের উপরে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বির্বাতাকে জানান, আসলে ডেঙ্গু রোগী যে এত হবে আমরা ধারণা করতে পারিনি।আমাদের এখানে শিশুদের ওয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা ৬০ জন।সেখানে ১০০ জনের অধিক অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশু রয়েছে।পাশাপাশি আরো ১৫৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শিশু রয়েছে।
৬০ জনের ধারণ ক্ষমতা থাকলেও সেখানে ২৫০ এর বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে।অতিরিক্ত রোগীর কারণে কোনো কোনো বেডে দুইজন করে শিশু রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় এক বেডে দুই জন শিশুর পাশাপাশি দুই বেডের মাঝে যে খালি জায়গা রয়েছে সেখানেও রোগী রাখা হয়েছে। হাসপাতালের বারান্দাসহ যে যেভাবে জায়গা করতে পারছে সে সেখানেয় রোগী রাখছে।রোগীর স্বজনরা এদিক সেদিক দৌড়াচ্ছেন একটা বেডের জন্য।
হাসপাতালের পরিচালক বির্বাতাকে বলেন, আমরা নতুন দুটি ওয়ার্ড খোলা চেষ্টা করছি।সোমবার (৫ আগস্ট) থেকে সেখানে কার্যক্রম হওয়ার কথা থাকলেও করতে পারছি না।তবে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে নতুন দুই ওয়ার্ডে কার্যক্রম শুরু হবে।নতুন ওয়ার্ডের মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০০ বেড এবং মহিলাদের জন্য ১০০ বেডের ব্যবস্থা থাকবে।নতুন দুটি ওয়ার্ড চালু হলে অন্য ওয়ার্ডে আর রোগী রাখতে হবে না।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু জ্বরের সার্বিক তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালের এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। ৯৪৫ জন রোগীকে আমরা সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছি।বর্তামানে ৩৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।তার মধ্যে শিশু রয়েছে ১৫৩ জন।গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকতে পারে বলে ধারণা করেন অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া।
এদিকে, সোমবার ভোর ৫টায় ৩১ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা শারমিন আরা শাপলা (৩২) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
পরিচালক বলেন, জয়পুরহাট থেকে এখানে রবিবার দুপুর ১টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে এসে ভর্তি হন।জয়পুরহাটে রোগীকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করে ঢাকায় পাঠায়।বিকাল ৫ টায় আইসিইউতে নেয়া হয়। সোমবার ভোর ৫টায় তার মৃত্যু হয়।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৪৩৭ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে।এদের মধ্যে ১৯ হাজার ৭৬১ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছে। শুধু চলতি মাসের প্রথম ৫ দিনে ৯ হাজার ৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে চলতি বছর ১৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।তবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এ বছর ৫০ জনেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানা যায়।
বিবার্তা/আকরাম/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]