শিরোনাম
ডেঙ্গু আতঙ্কে জবি শিক্ষার্থীরা: নিশ্চুপ প্রশাসন, ক্ষোভ
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০১৯, ১৭:২৭
ডেঙ্গু আতঙ্কে জবি শিক্ষার্থীরা: নিশ্চুপ প্রশাসন, ক্ষোভ
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শতাধিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার বলছে একশ’র বেশি। নির্দিষ্ট সংখ্যা তারা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।


এদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।


রবিবার (৪ আগস্ট) পর্যন্ত আক্রান্ত ৯৭ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে আইন বিভাগের ১১ জন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৭ জন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৬ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৫ জন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫ জন, ফার্মেসি বিভাগের ৪ জন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪ জন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৪ জন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪ জন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৩ জন, ইতিহাস বিভাগের ৩ জন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৩ জন, গণিত বিভাগের ৩ জন, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২ জন, মার্কেটিং বিভাগের ২ জন, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২ জন, নাট্যকলা বিভাগের ২ জন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২ জন, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ২ জন, অর্থনীতি বিভাগের ২ জন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২ জন, ইংরেজি বিভাগের ১ জন, সমাজকর্ম বিভাগের ১ জন, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ১ জন, সংগীত বিভাগের ১ জন, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ১ জন, রসায়ন বিভাগের ১ জন, বাংলা বিভাগের ১ জন, অনুজীব বিজ্ঞানের ১ জন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের ১ জন, দর্শন বিভাগের ১ জন, মাইক্রোবায়োলজিতে ১ জন, বায়োকেমিস্ট্রিতে ১ জন, সিএসই বিভাগের ১জন ও পরিসংখ্যান বিভাগে ১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন।


শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই চিকিৎসা নিচ্ছেন মিটফোর্ড হাসপাতাল, ক্যাম্পাসের পাশের সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। শিক্ষার্থীদের একাংশের পক্ষ থেকে ছুটির আবেদন করা হলেও নাকচ করে দেন উপাচার্য।


বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসা কর্মকর্তা মিতা শবনম বলেন, ‘প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী জ্বর নিয়ে আসছেন। যাদের মধ্যে ডেঙ্গুর জ্বরের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাদের পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছি। আক্রান্তের সংখ্যা একশ’র বেশি।’


ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ আছে কি জানতে চাইলে সবনম বলেন, ‘এখানে প্যাথলজিস্ট নেই। তাই রক্ত পরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও প্যাথলজিস্ট নিয়োগের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।’


কিছুদিন পূর্বে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অমিত কুমার বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য আমার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে পারলে অন্তত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণটা কম হতো।’


শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ অনাবাসিক হওয়ায় পুরান ঢাকায় ক্যাম্পাসের আশেপাশে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে থাকতে হয় তাদের। পুরান ঢাকায় অপরিচ্ছন্নতা ও জলাবদ্ধতার কারণে ডেঙ্গু আতঙ্কে রয়েছে জবির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে প্রতিসন্ধ্যায় মশা নিধনে স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু, ক্যাম্পাসের অধিকাংশ স্থান অপরিচ্ছন্ন ও বিভিন্ন স্থানে পরিষ্কার পানি জমে থাকতে দেখা যায়।


হল না থাকায় বাড়তি খরচ করে বাসাবাড়িতে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে দ্বিমুখী সংকটে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার। শিক্ষার্থীরা বলছে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেন্টার থাকলে চিকিৎসা খরচ কম হতো তাদের।


ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সুমনা হাসপাতালে ভর্তি আছেন পরিসংখ্যান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ।


রাজু আহমেদ বলেন, ‘সারাদিনই ক্যাম্পাসে থাকা হয়, ক্যাম্পাসের অধিকাংশ জায়গা অপরিচ্ছন্ন, প্রায় জায়গায় পরিষ্কার পানি জমে থাকে। ক্যাম্পাস থেকেই আক্রান্ত হয়েছি বলে মনে হচ্ছে।


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও কোনো যোগাযোগ বা সহয়তা পাইনি এখন পর্যন্ত। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণে সব পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে আইন বিভাগ।


সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় গ্রিন লাইফ হাসপাতালের আই সি ইউ তে ভর্তি আছেন ১০ম ব্যাচের ভুগোল বিভাগের শিক্ষার্থী রিজভি খান। জবি উপাচার্য তাকে দেখতে গিয়ে সমবেদনা জানান ও তার চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেন।


এ প্রসঙ্গে আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সরকার আলী আককাস বলেন, ‘আমার বিভাগের সব মিড টার্ম পরীক্ষা কান্সেল করে দিয়েছে।আমরা কিছুদিন পরও পরীক্ষা নিতে পারবো। কিন্তু, পরীক্ষা নিতে গিয়ে কারো ক্ষতি হয়ে গেলে কী করবো।’


উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘জবিতে কোনো মেডিকেল সেন্টার নেই, যেটা আছে সেটা প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। কারো ভর্তি করার প্রয়োজন হলে আমরা ন্যাশনাল মেডিকেলে ভর্তি করি।আজকেও যারা আমার কাছে এসেছিল, তাদের বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি।’


বিবার্তা/আদনান/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com