শিরোনাম
রাজধানীতে প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে ১০৭ জন
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০১৯, ১০:৪৪
রাজধানীতে প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে ১০৭ জন
আকরাম হোসেন
প্রিন্ট অ-অ+

হঠাৎ করে রাজধানীতে বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ভিড় করছে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্দান হাসপাতাল মেডিকেল হাসপাতাল, পপুলার হাসপাতাল, ইবনে সিনা, মিডফোর্ডসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী দেখা গেছে।


রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। যা প্রতি ঘণ্টায় চারজনেরও বেশি মানুষের শরীরে নতুন করে এ জ্বরের জীবাণু প্রবেশ করছে। চলতি জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ৭৪৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রাজধানীর ৩০টি হাসপাতাল থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।


তবে প্রকৃতপক্ষে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার বিবার্তাকে বলেন, আক্রান্তের সংখ্যা এর থেকে বেশি হতে পারে। কারণ সবাই তো আর হাসপাতাল আসেন না। অনেকেই বাসা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা হাসপাতালে আসেন, ভর্তি হন তাদের সংখ্যাটা এখানে আছে। অনেকে বাইরে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান তাদেরটা তো হিসেব করা সম্ভব না।



তিনি বলেন, তাছাড়া রাজধানীর মাত্র ৩০ থেকে ৩২টা হাসপাতাল থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। অন্য হাসপাতালগুলো আমাদের কাছে তথ্য দেয় না। তাই বলা যায়, প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি।


সাধারণত এপ্রিল ও জুন মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের দিকে। এরপর ধীরে ধীরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে থাকে। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম শুরুর দিকেই এর ভয়াবহতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।


চলতি বছর জুন মাসে এ রোগের আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭৩৩ জন। যা গত বছরের জুন মাসের তুলনায় প্রায় ৬ গুণ বেশি। গত বছর জুলায় মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয় ৯৪৫ জন। অন্য দিকে এ বছরের জুলাই মাসের প্রথম সাতদিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৭৪৬ জন।


মৌসুম শুরু আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আয়শা আক্তার বিবার্তাকে জানান, ডেঙ্গুর মৌসুমটা বর্ষাকাল। জুন-জুলাই মাসে থেকে শুরু করে আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বিশেষ করে যে সময়টাতে বৃষ্টি-বাদল হয়ে থাকে। এবছর আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মার্চ মাসে আমরা দেখেছি অনেক বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টি হওয়ার কারণে এডিস মশা আগেই বৃদ্ধি পেয়েছে।


নর্দান মেডিকেল হাসপাতালে কর্তব্যরত কর্মকর্তারা বিবার্তাকে জানান, কিছুদিন যাবৎ ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বেড়েছে। এক মাস বা তার আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ছিল না। এখন প্রতিদিন একাধিক রোগী আসছে। এদের মধ্যে কেউ চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ এখানে ভর্তি আছেন।



তবে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কমেছে। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। চলতি বছরে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।


এ ব্যাপারে আয়শা আক্তার বিবার্তাকে বলেন, এখন তো মাত্র ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়েছে। মৃত সংখ্যা কম হলেও এ সংখ্যাটা বাড়তে পারে। তারপরও গত বছর বেশি মৃত্যুর কারণে মানুষকে সচেতন করার জন্য আমার অনেক প্দক্ষেপ নিয়েছিলাম। যার কারণে মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। জ্বর হওয়ার সাথে সাথে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চিকিৎসা শুরু থেকে নিচ্ছেন। আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা নিলে মৃত্যুর সংখ্যাটা কমে আসে।


রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে জ্বরে আক্রান্ত বাবাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছেন জামাল। এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তিন-চার দিন আগে বাবার জ্বর আসে। জ্বর ভালো না হওয়ায় দুইদিন আগে এখানে (ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল) নিয়ে আসি। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পরে বুঝতে পেরেছি বাবার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে।


অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকাতে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর বেশি হয় জানিয়ে আয়শা আক্তার বলেন, এডিস মশা নোংরা পানিতে ডিম পারে না। পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। বাসা বাড়িতে, ফুলের টপে, বালতির পানিতে, এসির পানিতে, ফ্রিজের নিচের পানিতে, ডাবের খোলা, গাড়ির টায়ারের পরিষ্কার পানিতে এ মশা ডিম পাড়ে। পানি তিনদিন জমে থাকলে সেখানে এডিস মশা হয়।



এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও সকলে মিলে কাজ করলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব জানিয়ে আয়শা আক্তার বলেন, এখন মৌসুমটা ডেঙ্গুর। সামনের সময়ে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে ব্যাপারটা এমন নয় যে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। খুব যে বাড়বে তা নয়। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবাই কাজ করছে। সকলে মিলে কাজ করলে আশা করছি তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।


নিয়ন্ত্রণে কি ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য জানুয়ারি মাস থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চলতি মাসের ৪ তারিখে আমার মিটিং করেছি। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সিটি করপোরেশনে এ ব্যাপারে প্রতি সপ্তাহে একটি করে মিটিং করছেন। তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। শহরজুড়ে মশা নিধনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।


বিবার্তা/আকরাম/উজ্জ্বল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com