শিরোনাম
এখনো ২০০০ মানুষ নৌকায় পৌঁছায় মতিঝিল!
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০১৯, ১১:৩৯
এখনো ২০০০ মানুষ নৌকায় পৌঁছায় মতিঝিল!
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানী ঢাকার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল। এক সময়কার সুকাকু মহলের বড় দিঘি থেকে মতিঝিল বা মোতির দিঘি নামে পরিচিত ছিল এই এলাকা। যা পরবর্তীতে মতিঝিল নামে পরিচিতি লাভ করে। সেই ঝিল বা দিঘির ঐতিহ্য এখনো রয়ে গেছে মতিঝিলে। এখনো নিয়মিত ঝিল পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হয় মানুষকে।


রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুর হয়ে মতিঝিল যাতায়াত করা কর্মজীবী মানুষের প্রধান পথ মতিঝিল গুদারাঘাট, যা কমলাপুর গুদারাঘাট নামেও পরিচিত। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষ পাড় হন। এর মধ্যে ১২০০ থেকে ১৩০০ মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করেন এই ঘাট দিয়ে।
মানিকনগর, মুগদাপাড়া, গোপীবাগ, গোলাপবাগ ও দক্ষিণ কমলাপুরের শ্রমজীবী মানুষের মতিঝিল যাতায়াতের পছন্দের রাস্তা হল কমলাপুর গ্যারেজ পট্টি হয়ে সংক্ষিপ্ত পথে নৌকা পাড়ি দিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে পৌঁছান। এতে সময়ও বাঁচে, সাথে অর্থও। এই নৌকা পাড়ি দিতে লাগে দুই টাকা।


কমলাপুর গ্যারেজ পট্টি থেকে মতিঝিলের সুউচ্চ বাণিজ্যিক ভবনগুলো চোখে পড়ে। আর একেবারেই সামনে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন। রিকশায় বা গাড়িতে করে এই বাণিজ্যিক এলাকায় পৌঁছতে অনেকটা পথ ঘুরে আসতে হয়। সেই ঝামেলায় না গিয়ে দুই টাকায় নৌকা পাড়ি দিয়ে তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যেই শাপলা চত্বর!



কমলাপুর বক্স কালভার্ট রোডের বাম পাশে এই গুদারাঘাট। ছোট গলি দিয়ে ঢুকতেই চোখে জীর্ণ একটি কাঠের বাক্স সামনে নিয়ে বসে আছেন এক বৃদ্ধ, প্রায় ২০ গজ দূরে পুকুরের পাড়। সামনে দিয়ে পার হতে গেলেই তার বিনয়ী ডাক, ‘ভাই, ভাড়া দিয়ে যান।’ নিয়মিত যাত্রীরা কোনো কথা বলার আগেই ভাড়া পরিশোধ করে ছুটছেন মতিঝিলগামী নৌকা ধরতে।


কাঠের বাক্স নিয়ে বসা বৃদ্ধ খেজু মিয়া। ঘাট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, ওই ঘাট কি আর এখন আছে? ব্রিটিশ আমল থেকে জমজমাট ছিল এই ঘাট। পানিও ছিল আরো বেশি ও স্বচ্ছ।


একটু দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় তিনি বলেন, এই যে শাপলা চত্বর দেখছেন, সেখান থেকে এক সময় মুগদা-মান্ডা পর্যন্ত নৌকা চলত। আর কোনো রাস্তাও ছিল না।


খেজু মিয়া বিবার্তাকে জানান, তার এই ৭০ বছর বয়স জীবনের ৫০ বছরের উপরে কেটেছে এই ঘাট পরিচালনায়। তিনি একা নন, বর্তমানে আরো চার-পাঁচজন তার মতো দায়িত্ব পালন করেন।



তিনি বলেন, অফিস যেদিন খোলা থাকে, সেদিন তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাড়া উঠে। ছুটির দিনে একটু কম উঠে।


এই ঘাট দিয়ে দৈনিক কত লোক পাড় হয়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই টাকা করে ভাড়া, হিসেব করেন কত হয়। আর স্থানীয়রা অনেকেই তো ভাড়া দেন না। প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ লোকের ভাড়া পাই না। অনেক সময় খুচরার অভাবে দুই টাকা রাখা যায় না।


নৌকায় উঠে এই প্রতিবেদকের কথা হয় মাঝি মোখলেছ উদ্দিনের সঙ্গে। বয়স প্রায় ৬৫’র মতো। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এই ঘাটে আছেন বলে জানান তিনি। ঘাট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, সংগ্রামের পর থেকেই এই ঘাটে আছি। শুরুর দিকে ঘাটটা যেমন ছিল, এখন আর তেমন নেই। যে টুকু আছে, তা কত দিন টিকে কে জানে।
মোখলেছ উদ্দিন জানান, তিনিসহ এই ঘাটে চারজন মাঝি নৌকা চালান। মাঝে মাঝে তিনজনও চালান। সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে এই ঘাটে নৌকা চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। তার মধ্যে মাঝিরা সময় ভাগ করে নেন।



সংসার কিভাবে চলে- প্রশ্নের উত্তরে হতাশা নিয়ে মোখলেছ উদ্দিন বলেন, এই চলে কোনো মতে। এটাও আবার কখন বন্ধ হয়ে যায়।


মোখলেছ উদ্দিনের নৌকার যাত্রী সোহরাব হোসেন থাকেন মানিকনগর, চাকরি করেন দিলকুশায়। প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে পাড় হন জানিয়ে তিনি বিবার্তাকে বলেন, নৌকা দিয়ে গেলে সময় বাঁচে আবার খরচও কম, হাঙ্গামা নেই।


আরেক যাত্রী আবুল কালাম বিবার্তাকে বলেন, এই গুদারাঘাটে এলেই গ্রামের কথা মনে পড়ে, খুব ভালো লাগে। তাই নিয়মিত যাতায়াত করি।


কথা হয় পরিচালনার দায়িত্বে থাকাদের একজন আমির হোসেনের সঙ্গে। পাশে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বিবার্তাকে বলেন, ওই অফিসের অনেক কর্তা আছেন, যারা চাকরিজীবন শেষ করে ফেলেছেন কিন্তু এই গুদারাঘাট সম্পর্কে কিছু জানেন না। প্রায়ই অনেকে এসে অবাক হয়ে যান যে, ঢাকায় এখনো নৌকা চলে, তাও আবার মতিঝিলে!


বিবার্তা/আদনান/উজ্জ্বল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com