রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডসংলগ্ন সড়কগুলোতে বন্ধ হচ্ছে না ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ পার্কিং। বিশেষ করে রাতে সবগুলো রাস্তা থাকে এসব গাড়ির দখলে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এসব সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর তেজগাঁওয়ে ট্রাক স্ট্যান্ডসংলগ্ন সড়কের ওপর থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে সড়ক ‘পার্কিংমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। এরপর শ্রমিকরা সড়কের ওপর থেকে ট্রাক সরিয়ে টার্মিনালের ভেতরে রাখতে শুরু করে।
সড়কে চলাচলে নগরবাসীর স্বস্তি ফিরে আসে। তবে এখন মাঝে-মধ্যে দিনের বেলা সড়কে পার্কিং করতে দেখা গেলেও রাতে পুরোপুরি দখলে থাকে। তবে স্ট্যান্ডের জায়গা প্রয়োজনের তুলনায় সংকট থাকায় সড়কের ওপর পুরোপুরি পার্কিং বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানায় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি।
মালিক সমিতি জানায়, প্রতিদিন কারওয়ান বাজার, সিএসডি গোডাউন, কেন্দ্রীয় ওষুধ গুদাম, বিজিপ্রেস ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির বহু গাড়ি মালামাল লোড-আনলোড করা হয়। এর মধ্যে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার গাড়ি এক রাতে আসে অন্য রাতে যায়। এসব গাড়ি রাস্তা ছাড়া অন্য কোথাও রাখার জায়গা নেই। এছাড়া তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজারের বেশি গাড়ি চালান নেয়ার জন্য আসে। অথচ এ স্ট্যান্ডে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই হাজার গাড়ি রাখা যায়।
ঢাকার রাস্তায় রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলাচলে নিয়ম থাকায় এ সময় এসব গাড়ি চালান নিতে আসে। আর তখন বাধ্য হয়ে কিছু সময়ের জন্য রাস্তায় গাড়ি রাখা হয়। তবে রাত ১০টার পর থেকে কিছু গাড়ি রাস্তায় থাকলেও সকাল ৮টার আগেই চলে যায়।
এদিকে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালক শ্রমিকরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় স্ট্যান্ডের জায়গা খুবই সংকট। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করতে হচ্ছে। তাদের দাবি, বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। অথচ পরিবহন খাতে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। আর বিশেষ করে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের দিকে সরকার কোনো নজর দিচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড মূল সড়কের পাশাপাশি সাত রাস্তাসংলগ্ন পাশের সড়কগুলোতে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ রাখা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে কোথাও এক লাইন, কোথাও দুই লাইন করে ট্রাক পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এ কারণে পাশে বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর পর্যন্ত সৃষ্টি হয় যানজট। সিএসডি গুদামের দুই নম্বর গেট, সিএসডি ভাঙা গেট মোড় হয়ে পুরনো এফডিসি সড়কের পুরোটাই এখন ট্রাকের দখলে। গাড়ি পার্ক করা এসব সড়কের মাঝে যে জায়গা আছে তাতে একটি গাড়ি বা রিকশা কোনোমতে চলতে পারে। তবে দুটি যানবাহন একসঙ্গে গেলে জটলা বেধে যায়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি ও বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রুস্তম আলী খান বিবার্তাকে বলেন, ট্রাফিক নিয়মে রাতে ট্রাক কাভার্ডভ্যানগুলো চলাচল করতে পারে। প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি তেজগাঁওয়ের আশপাশে ঢোকে। অথচ এসব গাড়ি রাখার জন্য তেমন জায়গা নেই।
তিনি বলেন, স্ট্যান্ডের জন্য ভেতরে জায়গা পেয়েছি ঠিকই। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের জন্য ঢাকার কয়েকটি স্থানে স্ট্যান্ড করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়নে কোনো লক্ষণ নেই।
ডিএনসিসি প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইনলাম বিবার্তাকে বলেন, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের সিটি করপোরেশনের না। রেলওয়ে মন্ত্রণালয় এ জায়গার মালিক। আমরা চাইলেই এখানে কাঠামোগত কোনো উন্নয়ন করতে পারি না। সিটি করপোরেশনের একটি ট্রাকস্ট্যান্ড করা আছে আমিনবাজারে। সেটা বাউন্ডারি দেয়ালসহ চালকদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য আবাসন সুবিধাসহ আরো কিছু স্থাপনা করা আছে। খুব শিগগির স্থাপনাগুলো উন্নয়ন করে সংস্কার করা হবে।
বিবার্তা/আদনান/উজ্জ্বল/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]