ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে রাজধানীর মার্কেটপাড়া বলে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেট। ঈদের এখনও বেশ কিছুদিন বাকি থাকলেও সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় মুখরিত এ এলাকা। কোথাও যেন পা ফেলার জায়গা নেই। সব স্থানেই মানুষ আর মানুষ। যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে এখানের ঈদ বাজার।
রবিবার সরেজমিনে নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে এ ভিড়ের মাত্রা ততই বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা।
এদিন দেখা যায়, এ এলাকায় ১০ টাকায় গহনা, দেড় শ টাকায় জুতা, আড়াই শ টাকায় সালোয়ার-কামিজ, তিন শ টাকায় শাড়ি পাওয়া যায়। আবার ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, দামি গহনা, হাজার টাকায় সালোয়ার-কামিজ, লাখ টাকার লেহেঙ্গা, শাড়িও বিক্রি হয়। শিশু-কিশোর, বয়স্ক, তরুণদের চাহিদামতো জিনিস মিলছে দোকানে দোকানে। একই সঙ্গে ঘর-গৃহস্থালির সব পণ্যও বিক্রি হচ্ছে এখানে। যা এ এলাকাকে জমজমাট করে তুলেছে।
মিরপুর থেকে আসা গৃহিণী ফারজানা ইসলাম বিবার্তাকে বলেন,কেনাকাটার জন্য এটাই সবচেয়ে বেশি পছন্দের জায়গা। কেননা, এখানে এক জায়গাতেই প্রয়োজনীয় সবকিছু পাওয়া যায়। এজন্য এ মার্কেট বেশি জমজমাট হয়।
পুরান ঢাকা থেকে আসা প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক ইউসুফ উদ্দিন বলেন, এটাই কেনাকাটার একমাত্র জায়গা, যেখানে দামদর করা যায়। শপিংমলগুলোতে সব একদরের দোকান, সেখানে কেনাকাটার পূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় না। তার মতো অনেকেই একই কারণে নিউমার্কেটে আসেন বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলমগীর বাদশা বলেন, নিউমার্কেট বেশি জমজমাট হওয়ার কারণ হলো এর উল্টো দিকেই রয়েছে গাউছিয়া, চাঁদনী চক এবং ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেট। তাই একই জায়গায় ক্রেতারা পেয়ে যাবেন অনেক কিছু, যা অন্য কোথাও সম্ভব নয়।
বিক্রেতারা জানান, এ মার্কেটে শাড়ি, থ্রিপিস, শার্ট-পাঞ্জাবি, জুতা-স্যান্ডেল, কসমেটিক্স, অর্নামেন্টস, দর্জিবাড়ি সবকিছুই আছে। মেলে ৪৫০ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা দামের শাড়ি, ২৫০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা দামের থ্রিপিস, ১০০ থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা দামের শার্ট, ২০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি, ১৫০ থেকে শুরু করে আট হাজার টাকা দামের জুতা, ১০০ থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা দামের স্যান্ডেল। স্বল্প থেকে অধিক মূল্যে পণ্য সামগ্রীর বিপুল সমারোহের কারণেই মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবার কাছেই এই মার্কেট জনপ্রিয়। তাছাড়া ঢাকার বাইরের বিভিন্ন শহর থেকে যারা ঈদের কেনাকাটা করতে ঢাকায় আসেন, তাদের কাছেও এই মার্কেট সমান জনপ্রিয় বলে জানান তারা।
বিক্রির বিষয়ে তারা বলেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, বেচাবিক্রিও ততই বাড়ছে। ফলে জমছে ঈদ বাজার।
মোহাম্মদপুর থেকে ঈদ শপিং করতে এসেছেন সুরাইয়া ও মারুফা হায়দার। কথা হয় মারুফার সাথে। তিনি বলেন, এখানে এলে সবার জন্য সবকিছু কেনাকাটা একসঙ্গে করা যায়। তাই ঘুরে ফিরে এখানেই আসি। আমরা ছোটবেলা থেকে এই মার্কেটেই কেনাকাটা করি। এখন করছি শ্বশুরবাড়ির শপিং।
আশুলিয়া থেকে আসা মোশাররফ হোসেন জানান, স্ত্রীকে নিয়ে সকাল ১০টায় তিনি নিউমার্কেটে আসেন। তবে ভিড়ের জন্য কেনাকাটায় ভোগান্তি হচ্ছে। ক’দিন পর মার্কেটে ঢোকা মুশকিল হবে। তাই আগে থেকে কেনাকাটা করে রাখছি।
বাবা-মার সাথে মার্কেটে আসা নীলক্ষেত স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসফি জাহান বলেন, আগে থেকেই পছন্দের জামা, প্যান্ট ও জুতা কিনে প্যাকেট করে রাখবে। ঈদের দিন বের করবে। এজন্য আগেভাগেই মার্কেটে এসেছে।
নিউ মার্কেটের রিয়েল এক্সপোর্টের মালিক বিল্লাল হোসেন জানান, চাকরিজীবীদের কাছে বোনাসের টাকা আসলে বেচাকেনা আরও বাড়বে। তবে এখন বেচাকেনা কম নয়।
কোনো ধরনের পোশাক বেশি চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার ছেলেরা পাঞ্জাবির পাশাপাশি জিন্স প্যান্টের প্রতি ঝুঁকছে বেশি। আর নারীদের মূল আকর্ষণ হলো স্টার প্লাসের সোয়াতিসহ বিভিন্ন সিরিয়াল এবং ভারতীয় নায়িকাদের নামে লেইস লাগানো কাপড়। এছাড়া বিভিন্ন কারুকাজ করা সুতি, সিনথেটিক, ভারতীয় জরিসহ লিলেনের মাঝে পাড় লাগানো কাপড় বেশি পছন্দ করছেন তারা।
বিবার্তা/রাসেল/আকবর
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]