শিরোনাম
বেপরোয়া সেই হানজালার শেষ কোথায়?
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০১৯, ১০:৪৯
বেপরোয়া সেই হানজালার শেষ কোথায়?
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

দুর্নীতি আর অনিয়মের করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা। একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়মের মধ্যেমে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।


তবে সেই হানজালা ক্ষমতা বা দুর্নীতির উৎস কোথায়? কবে এমন অপরাধ কাজ থেকে বিরত হবেন তিনি? এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভুক্তভোগীদের মনে। কিন্তু এর কোনো উত্তর জানা নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।


জানা গেছে, ১৯৮১ সালে ১২ ডিসেম্বর দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন তৎকালীন ডাইরেক্টোরেট অব পাবলিক ইন্সট্রাকশনে (ডিপিআই) সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে প্রথম সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। এক পর্যায়ে তদবির করে ১৯৯৫ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পেয়ে তৎকালিন ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন তিনি।


এখানে শেষ হয়নি, পরবর্তীতে তিনি বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতি আর অনিয়ম শুরু করেন। দলীয় ক্ষমতা ও তদবিরের মাধ্যমে বিভিন্ন দফতরে কাজ করনে তিনি।


কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রূপ পরিবর্তন করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট) বিভিন্ন জোনে কাজ করেন তিনি। এক পর্যায়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে ২০১৪ সালে প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেন। শুধু তাই নয়, একই বছর শিক্ষা প্রকৌশল অধিফতরের প্রধান প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা।


এরপর ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে চাকরির মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধি করিয়ে নেন। পরবর্তীতে একই পদ্ধতিতে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। শুধু তাই নয়, গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেটও। আর ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে থাকেন।


হানজালার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে গড়ে উঠা ওই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন তার আপন ভাই দেওয়ান মোহাম্মদ আবদুল হাই। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরেরর অধিকাংশ টেন্ডারই নামে-বেনামে নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। তার তাকে সহযোগিতা করছেন বড় ভাই, ভাতিজা, নিজের শ্যালক, ভাইয়ের শ্যালক, আপন খালাতো ভাই এবং একাধিক বন্ধু।


এছাড়াও প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মুয়াজ্জেম হোসেন, আবুল হাসেম সরদার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ওই সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে। অতীতে ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তাদের বিরুদ্ধে। উল্টো সিন্ডিকেটটি বেপরোয়া হয়ে উঠতে দেখা গেছে।


অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে অবসরপ্রাপ্ত ১৩ জন প্রকৌশলীর পেনশন ও আনুতোষিক ভাতা আটকে দিয়েছে দেওয়ান হানজালা। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী বরাবর এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বরাবর আলাদা দুইটি অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী প্রকৌশলীরা।


শুধু তাই নয়, সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোজাইকের পরিবর্তে টাইলস স্থাপন করে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে চাপ প্রয়োগ করছেন ‌‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী হানজালা।


সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের যতগুলো অনিয়ম হয়েছে, সবগুলো অনিয়মের সঙ্গেই প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা সরাসরি জড়িত। প্রত্যেকটি টেন্ডারের আর্থিক অনুমোদন তার হাতেই চূড়ান্ত হয়। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে অর্থাৎ কাজের বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রধান প্রকৌশলীর নির্ধারিত সিন্ডিকেটের লোকজন রয়েছেন। তাদের সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলীর সরাসরি যোগাযোগ আছে। কে কী করছে না করছে প্রধান প্রকৌশলী সবই জানেন। কাজে ফাঁকি, অনিয়ম-দূর্নীতি কোনো কিছুই তার নজরের বাইরে নয়। তবে এমন দুর্নীতি ও অনিয়মের শেষ কোথায় এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চান ভুক্তাভোগীরা।


এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বুধবার হানজালার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে মোবাইলে এসএমএস করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে হানজালা তার সিন্ডিকেটের লোকজন ও নিজ দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফোন ছাড়া অন্য কারো ফোন রিসিভ করেন না বলে জানিয়েছে হানজালার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।


বিবার্তা/খলিল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com