শিরোনাম
বদলি বাণিজ্যে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সেই হানজালা
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:৫৫
বদলি বাণিজ্যে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সেই হানজালা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েই ক্ষান্ত হননি শিক্ষা অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।


শুধু তাই নয়, শিক্ষা অধিদফতরকে নিজের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানেও পরিণত করেছেন তিনি। শিক্ষা অধিদফতর তার আপন ভাই-ভাতিজা, শ্যালকসহ পরিবারের সদস্য ও প্রভাবশালী নেতাদের দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ান মোহাম্মদ হানাজালার কোটি কোটি টাকা আয়ের অন্যতম বিরাট উৎস বদলি বাণিজ্য। বর্তমানে ঢাকা জোনে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে আছেন আবুল কালাম মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। তিনি ইতিপূর্বে ফরিদপুরে নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। সেখান থেকে ঢাকায় বদলি নিয়েছেন ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে।


সূত্র জানায়, প্রধান প্রকৌশলী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে একটি নতুন নিয়ম চালু করেছেন। সকল প্রকল্পের সংশোধিত প্রাক্কলন প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত অনুমোদন নিতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটাল প্রশাসনের যে নীতিমালা সরকার বর্তমানে চালু করেছে সেই অনুযায়ী এ কাজগুলো প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত আসার কোনো সুযোগ নেই। ঘুষের পরিমাণ বাড়াতেই তিনি সরকারি নীতিমালার বাইরে বিতর্কিত নিয়ম চালু করেছেন।


সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদনের কাজে অঘোষিতভাবে ঘুষের একটি রেটও নির্ধারণ করা হয়েছে। কলেজ, মাধ্যমিক স্কুল, মডেল স্কুল, মাদরাসাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও ঘুষ দিতে হয়। দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা ওইসব সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদন করেন। তিনি একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।


সূত্র আরো জানায়, দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার আপন ভাই-ভাতিজা, শ্যালকসহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী প্রকৌশলী এই সিন্ডিকেটের সদস্য। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মোয়াজ্জেম হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল হাসেম সরদার ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসেম। তারা প্রায় ১৫ বছর ধরে শিক্ষা ভবনে রয়েছেন।


প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা শিক্ষা ভবনে বসে সারাদেশের কমিশন বাণিজ্য, ঘুষ ও টেন্ডারের ভাগ-বাটোয়ারায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর ওইসব অপকর্মের প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার নাম ব্যবহার করেন। তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।


এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বৃহস্পতিবার শিক্ষা অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। এক পর্যায়ে মোবাইলে এসএমএস করা হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে অভিযুক্ত হানজালা তার সিন্ডিকেটের লোকজন ও নিজ দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফোন ছাড়া অন্য কারো ফোন রিসিভ করেন না বলে জানিয়েছে হানজালার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।


উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালে সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরিতে যোগদান করেন দেওয়ান মো. হানজালা। চাকরিতে যোগদানের সময় নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি না করলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সেজে যান। এমনকি ২০১১ সালে সুকৌশলে মুক্তিযোদ্ধার সনদও তৈরি করেন তিনি।


এরপর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন হানজালা। শুরু করেন বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতি। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ দিয়ে চাকরির মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধি করিয়ে নেন। পরবর্তীতে একই পদ্ধতিতে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান।


বিবার্তা/খলিল/মাইকেল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com