‘বাঙালি জাতির গণজাগরণের রূপকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু’
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৩, ১২:৪৮
‘বাঙালি জাতির গণজাগরণের রূপকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু’
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

বাঙালি জাতির কাছে অবিস্মরণীয় এক দিন ১৭ মার্চ। কেননা, ১৯২০ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে মুক্তির প্রভাকর রূপে জন্ম নিয়েছিল একটি শিশু। ‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে।


স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের এই মহানায়কের জন্মদিন ঘিরে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা বলছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রটির জন্ম হতো না। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। আর তিনিই বাংলার গণজাগরণের রূপকার। আমরা বাঙালি আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর জন্য।


বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ঘিরে ভাবনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ঘিরে আমার ভাবনা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা এ বাংলাদেশে বসবাস করতে পারতাম না। এটা মনে রেখে আমাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।


তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মনেপ্রাণে লালন করলে, পালন করলে, সেই মানুষগুলোর দ্বারা কখনো অনিয়ম, দুর্নীতি, অপরাধ সংগঠিত হতে পারে না। আমরা কিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করবো? এটি কঠিন কাজ নয়। প্রত্যেককে নিজের জায়গা থেকে নিজের কাজটুকু সঠিকভাবে পালন করতে হবে। এটাই বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা।


বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালোবাসতেন, মানুষের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়গুলো আমাদের ধারণ করতে হবে। তাছাড়া, আরেকটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের দিন কিন্তু জাতীয় শিশু দিবসও। কাজেই এ দিনের মাধ্যমে শিশুদের এ দেশের প্রকৃত ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর অবদান জানিয়ে তাদেরকে সেভাবে গড়তে হবে। তাহলে তারা আগামীতে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে, এদেশের হাল ধরবে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমদ বিবার্তাকে বলেন, আমাদের মতো ধন্য জাতি আর কেউ নেই, যারা বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মানুষ পেয়েছি। কিন্তু আমরা আবার সেই অভাগা জাতি, কারণ সেই আমরাই তাকে নিজের হাতে শেষ করেছি। এই যে দুঃখ ও কষ্ট, এটা কখনো ভুলে যাবার নয়। যতদিন বাংলা, বাংলাদেশ ও আমরা বাঙালিরা থাকবো, ততদিন আমাদের এ গ্লানি বয়ে বেড়াতে হবে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বিবার্তাকে বলেন, বাঙালি জাতির গণজাগরণের রূপকার ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ ‍মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন পর্ব ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর্যায়ে তিনি ইতিহাসের সাথে আমাদেরকে এগিয়ে দিয়েছেন। পরাধীন ও শঙ্কিত জাতিকে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর স্বপ্ন ছিল এই রাষ্ট্রকে সোনার বাংলা হিসেবে বিনির্মাণ করা, যেখানে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মানুষেরা সবকিছু পায়, যাতে তারা সুখী ও সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে পারে।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর এ স্বপ্ন সফল করে যেতে পারেননি। কারণ, স্বাধীনতা বিরোধীরা ও আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্তের ফলে তিনি নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।


অধ্যাপক সামাদ বলেন, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমরা তাকে প্রবলভাবে অনুভব করবো। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুকে আমরা "আন‌ন্দিত চিত্তে" স্মরণ করি, অন্যদিকে "‌বেদনার্ত চিত্তে" তাঁর অনুপস্থিতিকে স্মরণ করি।


"মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি" এই পঙক্তির রচয়িতা কবি মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরও এগিয়ে যাবে। আমাদেরও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে হবে।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ বিবার্তাকে বলেন, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।


তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে, তা আরও বেগবান করতে এই প্রজন্মকে দেশমাতৃকার প্রতি গভীর মমত্ববোধ নিয়ে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে দ্রুত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে হবে।


উল্লেখ্য, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রাত আটটায় ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ পরিবারের আদরের ‘খোকা’। তাঁর পুরো নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন।‍ ছয় ভাইবােনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। বাবা-মা তাকে ডাকতেন খােকা বলে। আর এই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী। যিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির ‘মুজিব ভাই’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু’। তাঁর হাত ধরেই আসে বাঙালির স্বাধীনতা, জন্ম নেয় বাংলাদেশ। এভাবে তিনি হয়েছিলেন বাঙালি জাতির জনকও। তাঁর নেতৃত্বে বাঙালির বহু বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙেছে। শুধু তাই নয়, তাঁর সুদূরপ্রসারী বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ নামের নতুন একটি জাতিরাষ্ট্র।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com