সুষ্ঠু ভোট করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২০
সুষ্ঠু ভোট করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২৭টি দল অংশ নেয়ায় অনেকটাই নির্ভার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ও ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করা নিয়ে এই মুহূর্তে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে দলটি। আর তাই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়ানো ও দেশজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।



আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বেশির ভাগ দলের অংশগ্রহণের ফলে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করা সহজ হবে। এছাড়া বিএনপি বিহীন নির্বাচনে উৎসবমুখর ভোটগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের ভালো পরিবেশ আছে। মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে এবং নিজেদের ভোটার অধিকার শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করবেন।



তারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর ছক সাজিয়ে এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী কৌশলের সবকিছুর মূলে রয়েছে ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। নির্বাচনে বেশির ভাগ দলকে আনতে পারা আওয়ামী লীগের প্রথম ধাপের সাফল্য। এখন সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদান কার্যক্রম শেষ করা। যে দলগুলো নির্বাচনে এসেছে তাদের নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন করতে পারলে নির্বাচন দেশে-বিদেশে অনেকটাই গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আর এতে করে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে বড় চাপ কমে যাবে


দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বদ্ধ পরিকর। যার কারণে সভা, সমাবেশে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদেরও কড়া নির্দেশনা দিচ্ছেন।


গত ২১ ডিসেম্বর তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা ও খাগড়াছড়ির নির্বাচনী জনসভায় যুক্ত হন শেখ হাসিনা। পরে এসব জেলার নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন এবং সে নির্বাচনে জনগণ অবাধে ভোট দেবেন। ভোটের মালিক জনগণ, এটা তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা চাই নির্বাচনে জনগণ তাঁদের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করবেন। যাঁকে খুশি বা যাঁকে পছন্দ, তাঁকে ভোট দেবেন এবং তিনি জয়ী হয়ে আসবেন। কেননা, গণতন্ত্রকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। এর যেন কোনো ব্যত্যয় না ঘটে।


প্রধানমন্ত্রী অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার লক্ষ্যে কাজ করতে দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনারা আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এমনভাবে কাজ করবেন, যাতে নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে।


তিনি বলেন, আমরা এটা (নির্বাচন) উন্মুক্ত করেছি, আমাদের নৌকার প্রার্থীও আছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে এবং অন্যান্য দলের প্রার্থীও রয়েছে। নির্বাচনে কোনো রকমের সংঘাত বা মারামারি, কোনো কিছুই আমি দেখতে চাই না। কোনো সংঘাত হলে, সংঘাত যদি আমার দলেরও কেউ করে, তাদের কিন্তু রেহাই নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। সেটা মনে রাখবেন।


নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে অংশ নিতে মোট ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহার শেষে নির্বাচনে দেশের ২৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আওয়ামী লীগ সূত্র জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে ২৬৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা প্রায় প্রতিটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।


এদিকে দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা এবং ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর সে নির্দেশনা অনুসারে নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ইতোমধ্যে নৌকার প্রার্থীদের নিশ্চিতে কাজ করার জন্য ১৭৮ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করেছে যুবলীগ। আসনভিত্তিক সমন্বয়ক কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ।


জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিবার্তাকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হবে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।


তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবার আমাদের দলের অসংখ্য প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। দেশের মানুষের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে, এটাই আমরা চাই।


এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বিবার্তাকে বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে এবং নিজেদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করবেন। সাধারণ মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসা রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের দায়িত্ব। ভোটাররা যেন ভোট কেন্দ্রে আসেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি বিএনপি নির্বাচনে না থাকলেও ভোটের মাঠে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।


বিবার্তা/সোহেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com