অসহযোগ আন্দোলনে কেন্দ্রে আশা, তৃণমূলে ধোঁয়াশা
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১:৫০
অসহযোগ আন্দোলনে কেন্দ্রে আশা, তৃণমূলে ধোঁয়াশা
মাইদুর রহমান রুবেল
প্রিন্ট অ-অ+

দেশব্যাপী ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দেয়ার পর, ফাঁকে ফাঁকে হরতাল-অবরোধ পালন করছে বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ৭ জানুয়ারি ভোটের সাত দিন আগে ‘গণকারফিউ’ কর্মসূচির পথেও দলটি হাঁটতে পারে- রাজনীতির মাঠে রয়েছে এমন গুঞ্জন।


তবে বিএনপির হাইকমান্ড জানিয়েছে, গণকারফিউ কর্মসূচির বিষয়ে দলীয় ফোরামে এখনো হয়নি আলোচনা। পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে আন্দোলনের গতি কেমন হবে।


বিএনপির নেতারা জানান, শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচনের প্রতি জনগণের অনাস্থা আনতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তারা। হরতাল অবরোধের পাশাপাশি কী ধরনের কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে কাবু করা যায় তা নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নানামুখী আলোচনা চলছে। শরিকদের সঙ্গেও চলছে শলাপরামর্শ।


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানানোর পর পর্যায়ক্রমে পুরো দেশ অচল করে দিতে চায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত এ কর্মসূচি নিয়ে অনেকটা আশাবাদী কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে আন্দোলনের সেই হাওয়া পুরোপুরি লাগেনি তৃণমূলের গায়ে। হরতাল-অবরোধসহ আগের কর্মসূচি ও শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা দেখে অসহযোগ কর্মসূচিতেও আশার আলো দেখছে না তৃণমূল।


গত বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ভিডিওবার্তার মাধ্যমে অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পরে তাকে উদ্ধৃত করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচিটি আবার ঘোষণা দেন।


জানা গেছে অসহযোগ কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। যার অংশ হিসেবে চলছে পেশাজীবী বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করার জোর তৎপরতা । বড়দিনের পর থেকে টানা গণসংযোগ করার কথা। জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে আরও ইতিবাচক পরিস্থিতি দৃশ্যমান হবে মনে করছে বিএনপি নেতারা। ইতোমধ্যে ১ জানুয়ারি থেকে শ্রমিকদের কাজে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতা নজরুল ইসলাম খান।


গত ১৫ বছরে সাংগঠনিকভাবেও আরও শক্তিশালী হয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেশিরভাগই ঘরবাড়ি ছাড়া, কেউ আছেন আত্মগোপনে অথবা কারাগারে। প্রত্যেক নেতাকর্মীর কাঁধে মামলা-হামলার আতঙ্ক। এ পরিস্থিতিতে অসহযোগ কর্মসূচি কতটুকু হালে পানি পাবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরের জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, আমার সাথে কেন্দ্রের কোনো কথা হয়নি এখনো, হয়তো নির্দেশনা পাবো । আত্মগোপনে থাকলে কেন্দ্র আমাকে খুঁজে পাবেই বা কী করে। আন্দোলনের খবর টেলিভিশন, পত্রিকা, ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে জানতে পারে তৃণমূল, এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই ।


নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বিবার্তাকে বলেন, গতকালই জেল থেকে বের হয়েছি, জেলার নেতাদের সাথে কথা বলেই আন্দোলন সফল করতে সমর্থনের শতভাগ চেষ্টা করবো। অতীতে রাজপথে ছিলাম, রাজপথে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো । দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যা করা যায় সবই করবো। দল যেমন নির্দেশনা দেবে তা বাস্তবায়নে সব সময় প্রস্তুতি নিয়েই থাকি আমরা ।


বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন বিবার্তাকে বলেন, বিএনপির আন্দোলন জনগণ কেন্দ্রীয়, জনগণই আমাদের আন্দোলন সফল করতে কাজ করবে। আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন একটি রাজনৈতিক দল তাদের কোনো রাজনীতি নেই। তারা একটা সিন্ডিকেট ।সব ধ্বংস করে এবার করেছে নির্বাচন সিন্ডিকেট। এই নির্বাচন সিন্ডিকেটের কাজ জোর করে ভোট করা। অন্যদলের নেতাকর্মীদের বিচ্ছিন্ন করা। এতে কোন রাজনীতি নেই এটা অপরাজনীতি। তাদের শক্তি পুলিশ তাদের দলীয় কর্মী নাই, রাজনীতি নাই।


বিএনপির এই নেতা বলেন, তৃণমূল এবার সোচ্চার । জনগণ সোচ্চার, নির্বাচন সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি চায় দেশের মানুষ। কেন্দ্র থেকে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, প্রচারপত্র লিফলেট বিতরণ করছে বিএনপি । দুঃশাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সরকারকে সব ধরনের অসহযোগিতার আহ্বান জানানো হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।


প্রশাসনের ভয়ে গ্রেফতার এড়াতে কেন্দ্রের সাথে তৃণমূলে যোগাযোগ কৌশলী ভূমিকা অবলম্বন করছে বিএনপি, তাদেরকে তো বিপদের মুখে ফেলে দেয়া যায় না বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ নীরব সংগ্রাম চলছে । সময় মতোই এর ফল দেখতে পাবেন।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, অসহযোগের ডাক দিয়েছে বিএনপি । জনগণকে বুঝানো হচ্ছে তারা যাতে সরকারকে অসহযোগিতা করে। দেখতেই তো পারছেন পরিবেশ অনুকূলে নাই আমাদের। কেন্দ্র কাজ করছে, তারপরও তৃণমূল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তাদের মতো করেই।


বিএনপির এবারের আন্দোলন অসহযোগই থাকবে না ‘গণ কারফিউতে’ রূপ নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতি বলে দেবে আন্দোলন কোন দিয়ে যাবে। ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন হয় না, সময় ঠিক করে দেয় কী করা হবে। তবে এখনই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।


অসহযোগ আন্দোলনের বিষয়ে তৃণমূলে এখনো পরিষ্কার বার্তা পৌঁছেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দ্বায়িত্ব দেয়া হচ্ছে কীভাবে অসহযোগ পালন করবে তৃণমূল। প্রত্যেক বিভাগের সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা দেয়া হবে। তারা সেই অনুসারে বাস্তবায়ন করবে। ধাপে ধাপে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে দায়িত্ব । তাছাড়া অনেকে আত্মগোপনে থাকায় দ্রুত সময়ে বার্তা পৌঁছানো যাচ্ছেনা বলে মনে করেন তিনি।


সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি ওপেনলি ঘোষণা দিয়েই আন্দোলন করছে, এখনো লুকাচুরি করার তো কিছু নাই।


নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, আপনার কি মনে হয় নির্বাচনের কিছু বাকি আছে এখনো? নির্বাচন তো হয়েই গেছে । ফলাফল কাগজে কলমে তৈরি, ঘোষণা দেয়া বাকি।


তিনি বলেন, বিএনপির কাছে তো নির্বাচন ঠেকানোর কোনো অস্ত্র নেই। সকল অস্ত্র, প্রশাসন তো সরকারের কাছে। আমরা জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি নির্বাচন বর্জনের জন্য। এছাড়া আমাদের আর কী-ই বা করার আছে?


এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি হতাশ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের এই নেত্রী বলেন, বিএনপির কোনো হতাশা নেই । বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির লক্ষ্য এই সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়া সেই লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।


অসহযোগ ‘গণকারফিউ’ রূপ নিতে বিএনপির পুরোনো মিত্র জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রয়োজনে তাদেরকেও সাথে নেয়া হবে। তবে তা ঠিক করবে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম। তিনি বলেন, জামায়াত তো সরকার পতনে জামায়াতের মতো করে আন্দোলন করছে ।


গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে কয়েক দফায় হরতাল-অবরোধ চলছে ঢিলেঢালাভাবে । এসব কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, নেতাকর্মীদের মধ্যে ততই বাড়ছে হতাশা । আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পুলিশি তৎপরতায় জ্যেষ্ঠ নেতারা মাঠে যদি নামতে না পারেন সেক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামার প্রেরণা হারাবে।


অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের আদালতে হাজিরা না দেওয়া কিংবা সরকারকে সব ধরনের ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল এবং অন্য প্রদেয় স্থগিত করার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও অন্ধকারে তারা। জনসাধারণ তো দূরের কথা, দলের অলংকৃত নেতারাও সেটা মানতে পারবেন না বলে মনে করেন তারা।


বিবার্তা/রুবেল/এসবি/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com