নির্বাচন ঘিরে বাড়ছে নারী বিদ্বেষ
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:৩৭
নির্বাচন ঘিরে বাড়ছে নারী বিদ্বেষ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এবার ভোটের মাঠে নেমেছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী। ভোটের লড়াইয়ে ৩০০ আসনের বিপরীতে ১ হাজার ৮৯৫ প্রার্থীর মধ্যে নারী রয়েছেন ৯৪ জন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নারী প্রার্থী করেছে ২০ জনকে।


ঢাকা মহানগর ও জেলা মিলিয়ে রয়েছে ২০টি আসন। এর মধ্যে কেবল ঢাকা-৪ আসনে নারী প্রার্থী দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এডভোকেট সানজিদা খানম। দুইবারের সাবেক এই নারী সংসদ সদস্য বিগত নির্বাচনগুলোতে লড়েছেন সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে।


জানা যায়, এডভোকেট সানজিদা খানম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য। শ্যামপুর-কদমতলী থানা নিয়ে গঠিত সংসদীয় এলাকা ঢাকা-০৪ এর প্রথম সংসদ সদস্য তিনি। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী আবদুল হাইকে ৪৫ হাজার ১২৭ ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১০ম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে পুনরায় সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।


এবারের নির্বাচন সামনে রেখেও সানজিদা খানমের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে ব্যক্তিগত আক্রমণ। নানা ধরনের কুৎসা রটানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। গত ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কদতমলীর পালপাড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) ড. আওলাদ হোসেনের নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ৫৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুর রহমান সাইজুল। তিনি তার বক্তব্যের একপর্যায়ে সানজিদা খানমের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু করেন। এমনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।


ভিডিও দেখা যায়, শফিকুর রহমান সাইজুল বলছেন, 'আমরা সানজিদা বেগমকে চিনতাম বাগানবাড়ির সানজিদা বেগম। উনি লুৎফুর সাহেবের বাগানবাড়িতে আসা যাওয়া করতেন। কোন মাধ্যমে আজকে ..... বনে গেছেন। উনার দরবেশরে, পীর সাহেবরে সালাম করতেন। যাই হোক আমি চিনছি উনারে যে ওই জুরাইনের বটতলার উকিল সানজিদা বেগম।


তিনি বলেন, এর মাধ্যম আস্তে আস্তে কিভাবে জানি না...। উনারে তো টকশোতে আপনারা দেখেন, উনি নাটক কীভাবে জানেন। উনি তো এত ওপরে উঠছে আজকে সেন্ট্রাল কমিটির আবার ২ বারের এমপি। এবং উনি কিছু কাজ কইরা এত টাকার মালিক হয়েছে। উনি এখন মানুষরে মানুষ মনে করেন না।' একজন নারী সংসদ সদস্য প্রার্থীকে অশালীন কথা বলার পরও সাইজুলের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে।


স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে এডভোকেট সানজিদা খানম সর্বদাই সোচ্চার মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার অপশক্তির বিরুদ্ধে। আর চেতনায় ধারণ করেছেন স্বাধীনতার মর্মকথাকে। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের এই কর্মীর সত্তায় রয়েছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।


কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর শফিকুর রহমান সাইজুলের পিতা সুরুজ্জামান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অত্র অঞ্চলের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। যার কারণে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৈনিক সানজিদা খানমকে নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের পদে থেকেও নৌকার পক্ষে কাজ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে কুৎসা রটাচ্ছেন।


৫৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তোয়াসিন আহমদ মান্না বিবার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উনি (সাইজুল) কাউন্সিলর হয়েছে। উনি নিজে কিভাবে বলে সানজিদা আপা কাগজের নৌকা পেয়েছে। বক্তব্যে উনি আপার নামে নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।


কদমতলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বিবার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সানজিদা আপাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আমাদের এই অঞ্চলের আন্দোলন, সংগ্রামে উনি সবসময় ছিলেন। ঢাকা-৫ আসন ভাগ হওয়ার পর ঢাকা-৪ আসনে প্রথমে সানজিদা আপার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সবসময় উনার হাতেই নৌকা ছিল।


তিনি বলেন, দলের ভেতরে উনার (সাইজুল) মতো যারা আছে তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য, ব্যক্তিগত লাভের জন্য কাজ করছে। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আমি সানজিদা আপাকে নিয়ে উনার (সাইজুল) এই ধরনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং বক্তব্য উইড্রো করার দাবি জানাচ্ছি।


৫৮নং ওয়ার্ড কওমী মাদ্রাসা ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মতিন বিবার্তাকে বলেন, সানজিদা আপা এমপি হওয়ার পরে সরকারি জায়গায় ইকোপার্ক করেছে। এই জায়গা শফিকুর রহমান সাইজুলের বাবার দখলে ছিল। সাইজুল তার বাবার অবৈধভাবে দখল করা সম্পত্তি রক্ষার জন্য এতোদিন আওয়ামী লীগ ট্যাগ লাগিয়ে মুখোশধারী ছিল। এবার মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। অবৈথ সম্পত্তি হাত ছাড়া হওয়ায় যাওয়ায় উল্টাপাল্টা কথা বলছে।


তিনি বলেন, সাইজুলের বাবা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল, রাজাকারের ছেলে। নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে। আপার চরিত্র নিয়ে কথা বলে অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে। সে অত্যন্ত খারাপ লোক। আওয়ামী লীগের লেবাস ধরে দুই বার কাউন্সিলর হয়েছে। আগামীতে সে ২০০ ভোটও পাবে না।


৫৮নং ওয়ার্ড আইডিয়াল স্কুল ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহসিন ভূইয়া বিবার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের চাদর গায়ে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সে এলাকায় থাকা আগের হিন্দুদের জমি দখল করে রেখেছিল। সানজিদা আপা এমপি হওয়ার পর ইকোপার্ক করেছে। এখন সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ায় উনি ক্ষিপ্ত।


এ বিষয়ে জানতে ৫৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুর রহমান সাইজুলকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।


জানতে চাইলে ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আওলাদ হোসেন (ট্রাক প্রতীক) বিবার্তাকে বলেন, নৌকার বিরুদ্ধে কেউ না। আমরা নৌকার মানুষ। নৌকার বিরুদ্ধে আমরা মন্তব্য করি না।


নৌকার মানুষ হিসেবে নৌকার বিরুদ্ধে বলতে পারি না। আমরা মুক্তিযোদ্ধার ঘরের সন্তান। আমরা কোনো জায়গায় কথা বললে মুখ থেকে কথা বের হওয়ার আগে চিন্তা করতে হয় কথা মার্জিত আছে কিনা, কেউ এটা নিয়ে বিতর্ক করে কিনা। এ ধরনের কথা বলতে হয়।


তিনি বলেন, কিন্তু সানজিদা খানমরে কে কিরকম দেখে এটা আমি বুঝি না। এখানে মন্তব্য করার কিছু নাই, ভাই।


বিবার্তা/এসএ/এসবি/এইচআর/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com