বিজয়ের ৫২: সারা বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১২
বিজয়ের ৫২: সারা বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল বাংলার মানুষ। সেদিন পৃথিবীর বুকে নতুন করে আঁকা হয় একটি দেশের মানচিত্র। লাল সবুজের পতাকায় নতুন পরিচয় পায় বাঙালি জাতি। ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়, নাম তার বাংলাদেশ। সেই থেকে সুন্দর আগামীর স্বপ্নে পৃথিবীর বুকে নতুন করে পথচলা শুরু।


সময়ের পরিক্রমায় সেই বাংলাদেশ আজ বিজয়ের ৫২ বছর পার করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে লড়াই করে শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার দিনটি বাঙালি জাতির জন্য ইতিহাসের এক বড় অর্জন। বছর ঘুরে আসে গৌরবোজ্জ্বল ১৬ ডিসেম্বর, আর দেশের মানুষ নতুন আশায় বুক বাঁধে, নতুন করে স্বপ্ন বুনে।


১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিচয় ছিল তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪৬তম বড় অর্থনীতির দেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। সেখানে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। স্বাধীনতা অর্জনের সময়ে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৪ ডলার। আজ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৮০০ ডলার ছাড়িয়েছে। ২০১৮ সালে ‘স্বল্পোন্নত’ দেশের তালিকা থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। কেবল অর্থনীতি নয়; সময়ের সাথে সাথে প্রায় প্রতিটি খাতেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ।


বিজয়ের ৫২ বছর পর বাংলাদেশের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে সম্প্রতি বিশিষ্টজনদের সাথে কথা বলেছে বিবার্তা। তারা বলছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে প্রতিটি সেক্টরে মজবুত ভীত গড়ে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যদিও দেশ স্বাধীনের সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয় বাঙালির স্বপ্ন যাত্রা। ২১ বছর ক্ষমতা দখলের ক্যু, পাল্টা ক্যু‘র কারণে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মাধ্যমে পাল্টে যেতে থাকে দেশের অর্থনীতির চেহারা।


বিশেষ করে ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিস্ময়কর উন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে আবির্ভূত হবে।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বিবার্তাকে বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের প্রথম প্রাপ্তি হলো আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছি। জাতির পিতা স্বাধীন রাষ্ট্র, জাতীয় পতাকা দিয়ে গেছেন এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এরপর আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির দরকার ছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা এই দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছেন।


তিনি বলেন, বিজয়ের ৫২ বছরে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিয়ে বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে।


আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, বাংলাদেশ ছিল একসময় অবহেলিত, দারিদ্র্যপীড়িত। পশ্চিমা বিশ্ব উপহাস করত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সুদক্ষ, সৃজনশীল ও সাহসী নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। যে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিলো শূন্য হাতে, সেই বাংলাদেশ এখন মহাশূন্যে উপগ্রহ পাঠায়, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানায়। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে দেশটি যাত্রা শুরু করেছিলো, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেই বাংলাদেশ এখন তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের চোখে এক বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন; সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিবার্তাকে বলেন, জা‌তির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিবুর রহমা‌নের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শ‌হীদ এবং প্রায় ৩ লাখ মা-‌বোনের সম্ভ্রমের বি‌নিম‌য়ে আমরা এই বাংলা‌দেশ অর্জন ক‌রে‌ছি। স্বাধীন দেশে আমরা স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছি। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আমাদের জন্য আর কিছু হতে পারে না।


তিনি বলেন, স্বাধীন দেশ পাওয়া একটা জাতির জন্য বড় প্রাপ্তি- সেই প্রাপ্তি আমাদের হয়ে গেছে। সেই প্রাপ্তির পর দেশকে সমৃদ্ধ করা, উন্নত করা আমাদের কাজ। দেশের মানুষের যে মৌলিক অধিকার আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে যেগুলো আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়ে গেছেন সেগুলো বাস্তবায়ন করা, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এগুলোর সুযোগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করার কাজগুলো করতে হবে। এবং সেই কাজগুলো পর্যায়ক্রমে করা হচ্ছে। দেশের মানুষ সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের স্পর্শ পাচ্ছে, এটি হচ্ছে আমাদের বিজয়ের সুফল। এই সুফল যাতে বাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করা উচিত।


মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বিবার্তাকে বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর বেঁচে ছিলেন। এই স্বল্প সময়ে দেশকে এগিয়ে নিতে যা যা করা সম্ভব তিনি তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করে সেটি করেছেন। কিন্তু যারা দেশটাকে ভালো চোখে দেখেনি তারা তাঁর প্রচেষ্টার অগ্রযাত্রাকে স্তদ্ধ করে দিয়েছিল। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ নতুন করে জীবন পেয়েছে। সেই নতুন অভিযাত্রায় আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। সারা পৃথিবীতে চমক লাগিয়ে দেয়ার মতো কাজ করেছি। আজ বাংলাদেশ দুই পায়ের ওপর ভর করে অনেক গর্ব করে বলে আমরা বাঙালি জাতি।


তিনি বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা যে রাষ্ট্রটা রেখে গেলাম এ রাষ্ট্রের জন্য এই দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়েছিল। সেই রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেশপ্রেম নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। যারা পেছনে হঠাতে চায় তাদেরকে লড়াই করে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। তাহলে আমাদের বাংলাদেশ সুন্দর বাংলাদেশ হবে। আশা করি ভবিষ্যত প্রজন্ম উদ্দীপ্ত হয়ে দেশকে আরো যোগ্যতম দেশ হিসেবে বিশ্বে উপস্থাপিত করতে পারবে।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com