নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ মানুষ
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৩, ১৩:২৯
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ মানুষ
কিরণ শেখ
প্রিন্ট অ-অ+

রমজানের আগেই দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। মাছ-গোশত-মুরগি, চাল, চিনি, আটা এবং ময়দার দাম বেড়েছে। বেড়েছে ডাল এবং ছোলার দামও। যার ফলে নিম্ন ও নিম্নবিত্তরা মাছ-মাংস ছুঁয়েও দেখতে পারছেন না। আর এসবের বাইরে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। যা সংসারের ব্যয়ের চাপকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় নিম্ন ও নিম্নবিত্তদের বেঁচে থাকাই দুস্কর হয়ে পড়েছে। আর একারণে নিম্ন এবং নিম্নবিত্তরা ক্ষুব্ধ।


গত ৯ মার্চ রাজধানীর কয়েকটি বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম গত মাসে প্রতি ডজন ১২৫ টাকায় কেনা যেত। তা এখন কিনতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে। কিন্তু মুদিদোকানে গেলে দাম আরও বেশি দিতে হয়।


এদিকে গত চার সপ্তাহ ধরে অস্থির ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। গত বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন ২৪০-২৫০ টাকা দরে এবং সোনালি মুরগি প্রতি ৩৫০-৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা দরে এবং খাসির মাংস প্রতিকেজি ১১'শ টাকা দরে হচ্ছে বিক্রি হচ্ছে।


কারওয়ান বাজারে কথা হয় মুরগি বিক্রেতা শুভর সাথে। তিনি বিবার্তাকে জানান, প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন ২৪০-২৫০ টাকা দরে এবং দেশি মুরগি প্রতি ৩৫০-৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


রমজানে দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুরগির দাম এখনই বেড়েছে। রমজান শুরু হলে আবারও দাম বাড়বে। কিন্তু কতটা বাড়বপ এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে অবশ্যই মুরগির দাম বাড়বে।


এসময় পাশে থাকা সুলতান নামে এক ক্রেতা বিবার্তা বলেন, আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আমাদের মতো মানুষ আর মাংস কিনে খেতে পারবে না। আর মাছের দামসহ সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। আমরা কিভাবে খেয়ে বেঁচে থাকব, সেই চিন্তাই করছি।


অন্যদিকে উত্তাপ দেখা গেছে মাছের বাজারেও। ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি পদের মাছের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। বেড়েছে চালের দামও। '২৮ চাল প্রতিকেজি ৬০ টাকা, '২৮ নতুন চাল প্রতিকেজি ৫৫ টাকা দরে, গুনি মনা প্রতিকেজি ৫৫ টাকা দরে, নাজির শাইল প্রতিকেজি ৯০-৯২ টাকা দরে এবং সুগন্ধি প্রতিকেজি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


এবিষয়ে ফার্মগেটে মুদিরদোকানদার রুবেলের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, প্রতিকেজি চাল ৪ থেকে ৫ টাকা দাম বেড়েছে। আসন্ন রমজানে চালের দাম আরও বাড়তে পারে।


বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. মনির হোসেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বিবার্তাকে বলেন, যে বেতন পাচ্ছি তাতে করে টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আগে বাবা-মা’র জন্য গ্রামে কিছু টাকা পাঠাতাম। কিন্তু এখন আর পাঠাতে পারি না। এমনকি এখন সংসার চালানোও কঠিন হয়ে পড়ছে!


এদিকে রমজানকে সামনে রেখে বেড়েছে খেজুরেরও দাম। প্রতিকেজি মাশরুক ৪০০ টাকা দরে, তিউনিশিয়া প্রতিকেজি ৮০০-১০০০ টাকা দরে, মরিয়ম প্রতিকেজি ৮০০-১০০০ টাকা দরে, ইরানি প্রতিকেজি ৭৫০-৮৫০ টাকা দরে, মেদজুল প্রতিকেজি ৯০০-১২০০ টাকা দরে এবং আজওয়া প্রতিকেজি ৭০০-৯০০-১১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


হঠাৎ করে দাম বাড়ার বিষয়ে কথা হয় খেজুর বিক্রেতা মো. মামুনের সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, খেঁজুরের দাম এখন কিছুটা বেড়েছে। তবে রমজানে এই দাম বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই। এই রকমই দাম থাকতে পারে।


অন্যদিকে বাজারে তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ বেশকিছু পণ্যের দামও বেড়েছ। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকা দরে, বুটের ডাল ৯৫-১০০ টাকা দরে এবং মাসকলাইয়ের ডাল ১৫৫-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ১২০ টাকা দরে।


এছাড়া বেড়েছে সবজির দামও। প্রতিকেজি বেগুন ৮০ টাকা, মরিচ ৮০-১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, শিম ৫০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, পটল ১২০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, পেঁয়াজ ৩২ টাকা, বসুন ১৩০ টাকা ও আদা ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।


দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে সবজি বিক্রেতা শেখ আবদুল রশিদ বিবার্তাকে বলেন, রমজানের সময়ও আলু, পেঁয়াজ, বসুন এবং আদাসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। আর গত কয়েকদিন আগে থেকেই পণ্যের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেড়েছে।


কারওয়ান বাজার রিকশাচালক সোহেল হায়দারের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ক্ষুধা মিটাতে ঢাকায় এসেছি। আমি রিকশা চালাই। কিন্তু সবকিছুর দামে যেভাবে বাড়ছে তাতে করে বেঁচে থাকাই বড় কষ্ট হয়ে দাঁড়াবে।


রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে যদি কোনো ব্যবসায়ী অবৈধ মজুত ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রমজানে কোন পণ্যের সংকট হবে না, মূল্যও বৃদ্ধি পাবে না। এজন্য সরবরাহ, মজুত ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।


জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বিবার্তাকে বলেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। কারণ রমজানে চাহিদা বাড়বে। আর চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বেই। তবে সরকার সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। কারণ সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আর বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা আমাদের আছে।


বিবার্তা/ কিরণ/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com