বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যতিক্রমী শিক্ষা সফর সানজিদা খানমের
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৯
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যতিক্রমী শিক্ষা সফর সানজিদা খানমের
এস এম রিয়াদ রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচনী এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম। নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-৪ এর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জাতির পিতার জন্মের পূণ্যভূমি টুঙ্গিপাড়ায় শিক্ষা সফরে গিয়ে তাঁর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।


৫ ফেব্রুয়ারি, রবিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ঢাকা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানমের উদ্যোগে এই শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। এর আগে কোনো সংসদ সদস্য বা সাবেক সংসদ সদস্য এমন ব্যতিক্রম শিক্ষা সফরের আয়োজন করেননি।



সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আসতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা। তারা বলেন, এর আগে কোনো জনপ্রতিনিধি এভাবে এতো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে নিয়ে শিক্ষা সফরে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আসেননি।



নানা কৌতূহল নিয়ে সমাধিস্থলের আশপাশে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অভিভাবকরা ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক হিজলতলা ঘাট, বঙ্গবন্ধুর বাল্যকালের খেলার মাঠ, পুরনো বাড়ি, শেখ পরিবারের ঐতিহ্যবাহী বড় তালাব ও জাদুঘর দেখেছেন।



ঢাকা-৪ নির্বাচনী এলাকার ১৪টি স্কুল ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অভিভাবক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ মিলে প্রায় ২ হাজার মানুষ এই শিক্ষা সফরের অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো- দোলাইরপাড় উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা কটন মিল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, জুরাইন আশ্রাফ মাস্টার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, মুরাদপুর সমীরণ নেসা উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদবাদ আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পূর্ব জুরাইন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ভাষা প্রদীপ উচ্চ বিদ্যালয়, শ্যামপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, মুরাদপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা, ঢাকা মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদরাসা, পূর্ব জুরাইন-শ্যামপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (সাআউবি), পূর্ব জুরাইন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, নতুন জুরাইন খন্দকার মোহাম্মদ (কেএম) মাঈনউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও ডা. আবুল হোসেন কলেজ।



বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শিক্ষা সফরে এসে জুরাইন আশ্রাফ মাস্টার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. তানভীর আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, আমার খুব ভালো লাগছে। আমাদের এলাকার সব স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার সবাই এসেছে। সবাইকে এমন সুযোগ করে দিয়েছেন এডভোকেট সানজিদা খানম। ধন্যবাদ আপাকে।


তিনি বলেন, এমন আয়োজন দেশের সকল প্রতিনিধিদের করা দরকার। এতদিন আমরা যা বইতে পড়েছি, আজ তা নিজ চোখে দেখলাম। আজ আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আমরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবার জন্য আমরা দোয়া করেছি।


মুরাদপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ছাত্র মো. শামসুল আলম বিবার্তাকে বলেন, এমন সুযোগ আগে কখনও পাইনি। আমার খুবই ভালো লাগছে। সবসময় ভাবতাম কবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে যাব। আজ স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পুরনো বাড়ি, পুকুর, হিজলতলা ঘাট, জাদুঘর ঘুরে দেখলাম। যা আমার জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি হয়ে থাকবে।



জুরাইন আশ্রাফ মাস্টার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকন মোহাম্মদ নুরুল হক বিবার্তাকে বলেন, এ আয়োজনের জন্য প্রথমে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম আপাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ এ শিক্ষা সফরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একত্রিত হয়েছে। যা একটি ব্যতিক্রম শিক্ষা সফর। আমরা ঢাকা-৪ এর সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একত্রিত হতে পেরেছি।


তিনি বলেন, এ শিক্ষা সফরে সব মিলিয়ে এক দারুণ অনুভূতি তৈরি হয়েছে।  বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা খুবই খুশি, যা বলে বোঝানো যাবে না।


দোলাইরপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ মোল্লা বিবার্তাকে বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের এমন উদ্যোগ ভাবা যায় না। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করা দরকার। এতে শিশুদের মেধা বিকাশে ভূমিকা রাখে।


তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা আমরা অনেকগুলো স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একসাথে হতে পেরেছি। যা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। আমরা নিজেরা চাইলেও এমনটা সম্ভব হতো না। কিন্তু সানজিদা আপার কারণে এটা সত্যি হলো। এমন উদ্যোগ সকল জনপ্রতিনিধির নেওয়া প্রয়োজন।



এ নিয়ে কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বিবার্তাকে বলেন, আমাদের কোমলমতি সন্তানরা, শিক্ষকরা, অভিভাবকরা যারা আছেন, তাদের সবাইকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শিক্ষা সফরে আসা একটি মহৎ কাজ। বঙ্গবন্ধুকে যারা দেখেনি- এই পবিত্র ভূমিতে এসেছে তাদের নতুন উপলব্ধি হয়েছে। যে বঙ্গবন্ধুর সমাধি দেখব, বাড়ি, জাদুঘর দেখব। আশপাশের পরিবেশ দেখব। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের সন্তানরা আনন্দিত। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি, আমি নিজে দেখেছি। আমার মনে হচ্ছে  বঙ্গবন্ধুকে দেখার আনন্দ যেনো কোমলমতি শিশুদের মাঝে জেগে উঠেছে এই মিলনমেলায়।


তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে কোনোদিন দেখি নাই যে, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি তার এলাকার সব স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সফরে গিয়েছেন। এখানে প্রায় ২ হাজারের মতো লোক এসেছে। কতটুকু ভালো মনের মানুষ হলে এমন মহৎ কাজ করা সম্ভব।


শিক্ষা সফর নিয়ে ঢাকা-৪ নির্বাচনী এলাকার ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন বিবার্তাকে বলেন, সানজিদা আপা অনেক বড় মনের মানুষ। শ্যামপুর-কদমতলীর সমস্ত স্কুল এবং মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে এসেছি। এখানে কোমলমতি শিশুরা আছে। আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধুকে দেখতে এসেছে তারা। এখানে আসতে পেরে তারা খুবই উদ্বেলিত। এতদিন তারা যা ইতিহাসে পড়েছে, আজ তা নিজের চোখে দেখল।



শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাইকে বাসে ওঠানো থেকে শুরু করে সব কাজে রোভার স্কাউটের একদল প্রতিনিধি সার্বিক সহযোগিতা করছেন। শিক্ষা সফরে সকালে নাস্তা ও দুপুরে পোলাও, রোস্ট, গরুর মাংস, কোমল পানীয় ও মিনারেল ওয়াটারের ব্যবস্থা ছিল।


রোভার স্কাউটের সদস্য মো. শিশির বিবার্তাকে বলেন, আমরা এ আয়োজন গাইড করছি। যাতে কোনো সমস্যা না হয়। যারা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে এসেছেন, সবাই আগ্রহের সাথে পুরো এলাকা ঘুরে দেখছে। বঙ্গবন্ধুর নানা বিষয়ে জানার চেষ্টা করছে।  এডভোকেট সানজিদা খানম ম্যাডামকে ধন্যবাদ । এমন একটি আয়োজন করার জন্য।


গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিসৌধে দায়িত্বরত মো. রুবেল হাসান বিবার্তাকে বলেন, এর আগে কোনো এমপিকে এমন করে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসতে দেখিনি। আজ সমাধিসৌধ ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।


এডভোকেট সানজিদা খানম বিবার্তাকে বলেন, ঢাকা-৪ নির্বাচনী এলাকা থেকে আমি ২০০৮ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর একটা স্বপ্ন ছিল, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যেখানে চির নিদ্রায় শায়িত রয়েছেন, সেখানে নিয়ে যাব। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। উচ্চাভিলাষী বিপদগামী কিছু সেনা কর্মকর্তা আর ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করে। ওরা বাংলাদেশের ইতিহাসকে মুছে ফেলবার চেষ্টা করেছিল। বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস স্বচক্ষে দেখানোর জন্য  তরুণ প্রজন্মকে এখানে নিয়ে এসেছি। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।


তিনি বলেন, জাতির পিতার সমাধিসৌধ যারা পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে, সবার সহযোগিতা পেয়েছি। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২০০০ জন জাতির পিতার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছি। সবার সহযোগিতায় এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।



ঢাকা- ৪ এর সাবেক এই সাংসদ আরো বলেন, আমি অনেক কৃতজ্ঞ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। ধন্যবাদ জানাই আজকে এই আয়োজনে যারা সহযোগিতা করেছেন। এত লোকের আয়োজন সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।   আমরা ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। এ জন্য আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাই। এ ছাড়াও গভর্নিং বডি, ম্যানেজিং কমিটি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকেও ধন্যবাদ জানাই, তারা এতদূরে এই যাত্রায় আমার সাথে সামিল হয়েছেন।



এই শিক্ষা সফরের মাধ্যমে নতুুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু সর্ম্পকে জানবে, বাংলাদেশের ইতিহাস জানবে এমন মন্তব্য করে এডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, এটাই আমার প্রত্যাশা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে যে মন্তব্য বহি আছে তাতে আমি লিখে এসেছি, যারা এবার যেতে পারেনি, তাদেরকে নিয়ে আবার বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে যাবার ইচ্ছা আছে।


বিবার্তা/রিয়াদ/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com