সংবাদ প্রকাশের পরও বন্ধ হয়নি মাটি ব্যবসা
বালুখেকোদের তাণ্ডবে হুমকিতে বাঁধ ও প্রকল্প
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৩০
বালুখেকোদের তাণ্ডবে হুমকিতে বাঁধ ও প্রকল্প
এস এম রাফি, কুড়িগ্রাম চিলমারী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের ডানতীর রক্ষা বাঁধের সামনে থেকে ও আবাদী জমির পাড় ঘেঁষে সদ্য জেগে ওঠা চরে অবৈধভাবে ট্রাক্টর দিয়ে কেটে নেয়া হচ্ছে মাটি ও বালু। এতে হুমকির মুখে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর উপজেলা সেচ ব্যবস্থার ৫ কিউসেক সোলার সেচ নির্মাণ প্যানেল, শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ব্রহ্মপুত্র ডান তীর রক্ষা প্রকল্প, বিভিন্ন স্থাপনা, নদীর তীরবর্তী জনপদ ও সরকার ঘোষিত নৌ-বন্দর পুনঃস্থাপনের পরিকল্পনা। এনিয়ে এর আগেও দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও আমলে নেয়নি প্রশাসন। কয়েকমাস থেকে ব্রহ্মপুত্রের বালু ও মাটি কেটে ব্যবসা করছে প্রভাবশালী বালুখেকোর দল। তবে সম্প্রতি বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এসেছে। প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযানে না নেয়া হয় আইনি পদক্ষেপ, না করা হয় জরিমানা। এতে করে ওই এলাকার মানুষের মাঝে দেখা গেছে চরম ক্ষোভ। তবে, এবার জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।


খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার রাজারভিটা এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে চর থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে। এতে হুমকির মুখে পড়বে কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর সোলার সেচ ব্যবস্থা নির্মাণ প্রকল্পের সোলার প্যানেল পাম্প, শত কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্প, রাজার ভিটা ফাজিল মাদ্রাসাসহ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন স্থাপনা, নদী তীরবর্তী জনপদ এবং আবাদি জমি। অবৈধভাবে মাটিকাটা বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে কয়েক দফা আবেদন করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে রাজার ভিটা গ্রামের মানুষ।


সরেজমিন দেখা গেছে, থানাহাট ইউনিয়নের রাজার ভিটা এলাকায় পাউবো বাঁধের ভিতরে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের সামনে ৩টি জায়গায় নদীর তীর কেটে সারিবদ্ধ ট্রলিতে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকায় নদীর তীর সংলগ্ন এলাকা নদীর পানির সমান হয়ে যাচ্ছে। এতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে এসব জমি নদীর সাথে মিশে গোটা এলাকা নদীতে পরিনত হবে মর্মে এলাকাবাসীর অভিযোগ।



নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বিবার্তাকে জানান, একটি পয়েন্টে আশাদুর রহমান, শামিউল আলম স্বপ্নিল, মিঠু মিয়া ও বিদ্যুৎ মিয়া তাদের ভট ভটি (ট্রলি) দিয়ে মাটি কেটে অবাধে বিক্রি করছে।


স্থানীয় ইউনুছ আলীসহ বেশ কয়েকজন বিবার্তাকে বলেন, নদীর তীরটি আমাদের গ্রামের প্রটেকশন হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও সরকারিভাবে দেয়া সোলার সেচ ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন রকম ফসল উৎপাদন করছিলাম। এভাবে তীর থেকে মাটি কেটে নিলে নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারনসহ হুমকীর মুখে পড়বে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর কুড়িগ্রাম জেলা সদর, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলে পোর্টেবল সেচ বিতরণ সেচ ব্যবস্থা নির্মানের মাধ্যমে সেচ এলাকা সম্প্রসারণ কর্মসূচীর আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৫ কিউসেক সোলার সেচ নির্মাণ প্যানেল, শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ব্রহ্মপুত্র ডান তীর রক্ষা প্রকল্প, বিভিন্ন স্থাপনা, নদীর তীরবর্তী জনপদ ও সরকার ঘোষিত নৌ-বন্দর পুনঃস্থাপনের পরিকল্পনা।


উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. মাহফুজার রহমান বিবার্তাকে বলেন, এই এলাকায় সরকারি ভাবে কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য তিনটি সোলার সেচ প্রদান করা হয়েছিল। প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত সোলার সেচ তিনটি রক্ষক আশাদুজ্জামান, ডালিম ও স্বপ্নিল। তারা নিজেরাই মাটির ব্যবসায় নিয়োজিত। এখান থেকে মাটি কাটার ফলে সোলার তিনটিসহ ডান তীর রক্ষা প্রকল্প হুমকির মুখে রয়েছে।



মাটি ব্যবসায়ী মো. বিদ্যুৎ মিয়া বিবার্তাকে জানান, চরটি নদীতে ভেঙ্গে যেতে পারে, তাই আমাদের জমি থেকে একটি পয়েন্টের মাধ্যমে মাটি বিক্রি করছি।


শামিউল আলম স্বপ্নিল বিবার্তাকে বলেন, আমার গাড়ি ভাড়া নিয়ে মানুষ মাটি বিক্রি করে। আমার কোন পয়েন্ট নেই, বিদ্যুৎ চাচার পয়েন্ট আছে।


এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বিবার্তাকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/রোমেল/জেএইচ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com