শিরোনাম
আসলে সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই (২য় পর্ব)
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৩১
আসলে সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই (২য় পর্ব)
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের সাথে চিটিংবাজি করা নতুন কিছু নয়।তাই যাত্রীরা সিটিং সার্ভিস না বলে চিটিং সার্ভিস বলতেই যেন বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য, স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো, ঠেসে-গেঁদে দাঁড়ানোর জায়গাটিও বোঝাই করা এদের নিত্যদিনের সাধারণ ঘটনা। বিষয়টা নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই।


রাজধানীর নগর পরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য বহুদিনের। লোকাল বাসের রুটপারমিট নিয়ে গেইটলক, ডাইরেক্ট ও সিটিং সার্ভিসের নামে দফায় দফায় ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। কিন্তু বিষয়টা যেন কেউ তোয়াক্কাই করছে না।



বাসে ওঠার লড়াইয়ে যাত্রীরা


সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, সু-প্রভাত ও বঙ্গবন্ধু নামের লোকাল বাস আবার যাত্রী চাপ দেখলেই লোকাল থেকে সিটিং সার্ভিস ঘোষণা দিয়ে আদায় করছে নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ। ফলে হয়রানির শিকার সাধারণ যাত্রীরা। ভোগান্তিতে স্বল্প আয়ের মানুষ। আর অসহায় যাত্রীরাও বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করেন তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে।


একই চিত্র দেখা গেছে, গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জ, শনির আখড়া, ডেমরা, সাইনবোর্ড যাওয়া বাসগুলোর ক্ষেত্রে। দিনের অন্য সময় লোকাল যাত্রী ও স্টুডেন্ট ভাড়া নিলেও সকাল ৮-১০টা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তারা নাম মাত্র সিটিং সার্ভিস চালু করেন। প্রতিটি বাসে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠা পর্যন্ত বাস ছাড়া হয় না।


জানতে চাইলে এসব বাসের হেলপার ও চালক কোনো কথা বলতে রাজি হননি। নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেমরাগামী এক বাসের লাইনম্যানের সাথে কথা বললে তিনি বিবার্তাকে বলেন, সব কিছুই মালিকের কথা মত হয়। আমরা কর্মচারী, আমাদের যেভাবে বলেন আমরা সেভাবেই করি। আর প্রতিটি বাসে মাস চুক্তিতে চাঁদা দিতে হয়। সেই টাকা পুষিয়ে নিতেই এভাবে বাস চালাতে হয়।


কাকে, কেন চাঁদা দিতে হয় জানতে চাইলে তিনি মুচকি হেসে বলেন, এত কিছু বলতে পারব না ভাই। নিজের বুদ্ধি দিয়ে বুঝে নেন। এসব নিয়ে কথা বললে আমার নিজের সমস্যা হবে।


২০১৮ সালের বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক জরিপে দেখা গেছে ৯৬ শতাংশ গণপরিবহনই ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চলাচল করলেও সবাই যাত্রীদের সাথে সিটিংয়ের নামে চিটিং সার্ভিস দিয়ে আসছে।



জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠার লড়াই


আজিমপুর নিউমার্কেট থেকে মিরপুর রুটে চলাচলকারী মিরপুর লিংক, বিকল্প পরিবহন, বিকাশ, রমজান, বিহঙ্গ, মেট্রো সার্ভিস, সেফটি, উইনার, ভিআইপি পরিবহনের সবগুলোই এখন ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চলছে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী এমনকি সাভার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী পরিস্থান, প্রজাপতি, মিরপুর লিংক, রবরব, নূরে মক্কা, আকিক, চিটাগাং রোড থেকে ফ্লাইওভার হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলাচলরত রজনীগন্ধা, মনজিল, নিলাচল, ঠিকানা, লাব্বাইক, এম এম লাভলী, তালুকদার, মনজিল, অনাবিল পরিবহন ও উত্তরা থেকে চলাচলরত সব বাস ‘সিটিং সার্ভিস’ রূপ ধারণ করে চলাচল করছে। ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে। তারপরও সব বাসেই প্রায় সমানসংখ্যক যাত্রী দাঁড়ানো অবস্থায় বহন করা হচ্ছে।


রাজধানীর আজিমপুর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ‘ভিআইপি-২৭’ নামের একটি বাসসেবা দীর্ঘদিন থেকে চালু আছে। কোম্পানিটির বাসসেবা মূলত চালু আছে ‘কাউন্টার সার্ভিস’ নামে। বাসটির সর্বনিম্ন ভাড়া ৬০ টাকা। কোনো যাত্রী যদি আজিমপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় যেতে চান তা হলে তাকে ৬০ টাকার টিকিট কাটতে হবে।


এছাড়া মিরপুরের কালশী থেকে বিশ্বরোডের দূরত্ব ফ্লাইওভার দিয়ে মাত্র ৫ কিলোমিটারের একটু বেশি। বিআরটিসির বেঁধে দেয়া প্রতি এক কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা হারে এ পথে মোট ভাড়া ৯ টাকা। কিন্তু এ রুটে চলাচল করা বাসগুলো সিটিং সার্ভিসের নাম দিয়ে ৯ টাকার জায়গায় আদায় করছে ৩০ টাকা। যা তিনগুণের বেশি।



যাত্রীঠাসা বিআরটিসি বাসে আরো যাত্রী ওঠার চেষ্টা


গাবতলী, আগারগাঁও, মিরপুর ১০ ও আনসার ক্যাম্প থেকে আব্দুল্লাহপুর কিংবা বাড্ডা, গুলশানে চলাচল করছে প্রজাপতি, বসুমতি, মধুমতি, জাবালে নূর, আকিক, নূরে মক্কা, অছিমসহ অনেক গাড়ি। সিটিং সার্ভিসের নামে চলা এসব গাড়িতে যে কোনো দূরত্বের জন্য নেয়া হচ্ছে সর্বনিম্ন ২৫ থেকে ৩০ টাকা।


এ প্রসঙ্গে বাস-মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, বাস-মালিকেরা সিটিং বাস চালু করেন যাত্রীদের চাহিদার কথা ভেবেই। ভালো সার্ভিস দেয়ার লক্ষ্যেই, তবে বেশি ভাড়া নেয়াটা অনিয়ম।


বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ড. মো. কামরুল আহসান বিবার্তাকে মুঠোফোনে বলেন, পরিবহন সেবা খাতে নানা অনিয়ম বন্ধ করতে বর্তমানে রাজধানীতে চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালন করে বাস-মালিক, চালক এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।



পুরুষ যাত্রীদের সাথে বাসে ওঠার লড়াইয়ে নারীরাও


বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন , সরকার নির্ধারিত ভাড়ায়, নির্ধারিত স্টপেজ অনুযায়ী সিটিং সার্ভিস বাস চালাতে হবে, সিটিং সার্ভিসে মালিকদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় ও স্টপেজ নির্ধারণ করা যাবে না, মালিকগণ চালকদের কাছে দৈনিক চুক্তিতে বাস ইজারা দেয়া যাবে না, প্রতিটি সিটিং সার্ভিসের বাসের আসন থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, প্রতিটি সিটিং সার্ভিস বাসে নিবন্ধনে অনুমোদিত আসনের অতিরিক্ত আসন থাকতে পারবে না, প্রতিটি সিটিং সার্ভিস বাসে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী যাত্রীর ও অসুস্থ যাত্রীদের উঠানামায় অগ্রাধিকার থাকবে । আরো ১ বছর আগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে এগুলোসহ মোট ১২ দফা দাবি সুপারিশ করা হয়েছে।


বিবার্তা/আদনান/উজ্জ্বল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com