বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর ২০০ মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় বিএসএমএইউ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৮০ জন এমবিবিএস ও ২০ জন বিডিএস চিকিৎসক চাওয়া হয়। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলীর ৮এ উল্লেখ ছিল, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৩২ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। শর্তাবলীর ৯এ উল্লেখ ছিল, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলী ৮ ও ৯ এ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুসরণের কথা থাকলেও চূড়ান্ত তালিকা থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। শনিবার (২ নভেম্বর) বিএসএমএইউ কর্তৃপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বাদ দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিণ্ডিকেটে পাস করায়। রবিবার (৩ নভেম্বর) নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের এমন অনিয়মের সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক ও তাদের অভিভাবকরা।
মুক্তিযোদ্ধা মশিয়র রহমান (মুজিব বাহিনী) এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর এবং কর্তৃপক্ষের সিন্ডিকেট সদস্যদের বরাবর আবেদন করেছেন। এতে তিনি দাবি করেন, তার মেয়ে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে, মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ না করে, তার মেয়েকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যদি মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করা হয়, তাহলে তার সন্তান বঞ্চিত হয় না। কারণ যেখানে কোটা অনুসরণ করলে ৬০ জন লাগে, সেখানে মাত্র লিখিত পরীক্ষায় ২৪ জন পাস করেছেন।
আবেদনে তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ওই বিজ্ঞপ্তির যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করা হবে উল্লেখ ছিল, কিন্তু কেন অনুসরণ করা হলো না, তার কোনো সদুত্তর পাইনি।
সূত্র জানায়, এ নিয়োগ পরীক্ষায় ইতোপূর্বেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। মেডিকেলের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার ছেলেসহ কয়েকজনের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। আর এ অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগ থেকে বাদ পড়লে সবারই বাদ পড়ার কথা। কিন্তু উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার ছেলে সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিয়োগের তালিকায় এসেছেন। একই অভিযোগে বাকিরা বাদ পড়লেও ভিসির ছেলে কিভাবে চূড়ান্ত তালিকায় আসলেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরীক্ষায় অংশ নেয়া চিকিৎসকরা বিবার্তাকে বলেন, ভিসির ছেলে নিয়োগে প্রার্থী থাকায় ভিসিরও নিয়োগ বোর্ডে থাকার কথা না। তারপরেও তিনি সবকিছুতে হস্তক্ষেপ করছেন। স্বজনপ্রীতি করে নিজের ছেলেকে চূড়ান্ত তালিকায় এনেছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তও মানছেন না তিনি।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বিবার্তাকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের তো বাদ দেয়া হয়নি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করার কথা বলা আছে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি নীতিমালাতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা যোগ্যতায় টিকেছে তারা তো আছেন।
তিনি বলেন, কোটার বিষয়ে সরকারি নীতিমালার ব্যাপারে আমরা অ্যাটর্নি জেনারেল, লয়ারসহ সবার সাথে কথা বলেছি। সবাই বলেছে, এখন এটার আর ব্যালিড নাই। যেহেতু পরীক্ষা হয়েছে ২০১৯ সালের মার্চে।
ইতোপূর্বে আপনার ছেলেসহ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদের ব্যাপারে আপনারা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা মেরিটে টিকেছে তারা কি বাদ যাবে? আমার ছেলের ভাইভার সময় আমি নিজেই ছিলাম না। আমি বোর্ডের চেয়ারম্যান। আমি অফিসের সিকিউরিটির জন্য আরেকজনকে দায়িত্ব দিয়েছি, আমার পরবর্তীতে যিনি আছেন সেই চেয়ারম্যানকে।
বিবার্তা/রাসেল/উজ্জ্বল/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]