জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় গেট ও এর আশপাশের ফুটপাথের উপর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে লেগুনাস্ট্যান্ড, গাড়ি মেরামতের দোকান ও রিকশা গ্যারেজ। এতে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয় শিক্ষার্থী ও পথচারীদের।
শিক্ষার্থী ও পথচারীদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে এসব গ্যারেজ ও স্ট্যান্ড। যা নষ্ট করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ।
ফুটপাথের দোকান মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব দোকান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে থেকেই এখানে ছিল। তাদের উত্তারাধিকার সূত্রে পাওয়া এসব দোকান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ থেকে ২০১৯ - সময়টা ১৪ বছর হলেও দেশের স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ফটক এখনো অবৈধ লেগুনাস্ট্যান্ডের কাছে জিম্মি। ফটকের সামনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা লেগুনাস্ট্যান্ড কখনই সরাতে পারেনি প্রশাসন। ফলে সহসাই বাহাদুর শাহ পরিবহন এবং লেগুনাস্ট্যান্ড সরানো নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দ্বিতীয় গেট বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি রিকশা মেরামতের গ্যারেজও।
দিনের শুরুতে লেগুনাস্ট্যান্ড
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার একাংশ দখলে থাকায় ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয় শিক্ষার্থী ও পথচারীদের। ফটকের সামনেও এলোপাতাড়িভাবে লেগুনা ও রিকশা রাখা। এ কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এমনকি রেহাই পান না সাধারণ পথচারীরাও। দিন-রাত মিলিয়ে বাহাদুর শাহ পরিবহনের ডজনখানেক মিনিবাস ও মহানগর পরিবহনের লেগুনা চলাচল করছে। এছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পকেট গেটের সামনেও বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে সাভার পরিবহন, স্বজন পরিবহনসহ আরও কয়েকটি বাসের টিকেট বিক্রি ও যাত্রী ওঠানো কার্যক্রম।
প্রধান ফটক সংলগ্ন ফুটপাতে রিকশা গ্যারেজে কাজ করা রায়হান বিবার্তাকে বলেন, আগে ছাত্রী হলের (শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল) পরিত্যক্ত জায়গায় গাড়ি রাখতাম। কিন্তু ওখানে নির্মাণকাজ চলায় এখানে আসছি। রাতে এখানেই রিকশা থাকে, আমি আমার ভাইয়ের সাথে ছাত্রদের হলে (সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল) থাকি।
স্ট্যান্ডে থাকা একটি রিকশার চালক লিটন জানান, তিনি যে রিকশা চালান, তার মালিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ফরিদ আহমদ। তার আটটিট রিকশা এখানেই থাকে। উনার রিকশাই ভাড়ায় চালাই, মাঝে মাঝে মেরামতেও কাজ করি। এছাড়া ফুটপাতের একপাশে কয়েক দশক ধরে ইঞ্জিন মেকানিক্স ও সরঞ্জামের স্থায়ী দোকান বসেছে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা জবির দ্বিতীয় গেট
এ অংশের রাস্তায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক বন্ধ করে বেশ কয়েক বছর ধরে স্ট্যান্ড চালাচ্ছেন মিনিবাস ও লেগুনার মালিকরা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন একাডেমিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের জন্য ফটকটি তারাই বন্ধ রেখেছেন।
ফুটপাতে দোকান বসানোর কারণ জানতেই তাদের কয়েকজনের ঝটপট উত্তর, আমার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ছিলেন। উনার ছেলে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে, তার চাচা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন। এজন্য এখানে দোকান চালাতেও তাদের কোনো ঝুঁকি ও ঝামেলা হয় না।
জাকির হোসেন নামের এক দোকানি বিবার্তাকে বলেন, এখানে আছি ১০-১২ বছর ধরে। কেউ কিছু বলে না, কাউকে দুই পয়সা দিতেও হয় না। এক-দুইবার পুলিশ আসে, তখন দোকান বন্ধ রাখি। তারপর আবার চালাই।
আরেক দোকানদার হাসিবুল ইসলাম বিবার্তাকে জানান, তার বাবা ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কর্মচারী। তখন থেকেই তার দোকান।
জবির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনিকা ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস ছোট। কিন্তু শিক্ষার্থী অনেক বেশি। সে কারণে মাত্র একটা গেট দিয়ে কোনোভাবেই চলে না। আর একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে লেগুনাস্ট্যান্ড থাকবে- এটা ভাবতেও কেমন লাগে ।
জবির গেটে রাতে লেগুনাস্ট্যান্ড ওলেগুনা মালিক শ্রমিকদের একাংশ
চতুর্থ বর্ষের আইনের শিক্ষার্থী সীমান্ত ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, পড়াশোনার খাতিরে প্রায় দিনই রাত করে ক্যাম্পাস থেকে মেসে ফিরতে হয়। এসব লেগুনাস্ট্যান্ড ঘিরে দিন-রাত সব সময়ই মাদকের আড্ডা চলে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। আর এখানকার মাদকাসক্ত লেগুনা চালকরা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য হুমকিস্বরূপও।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গ্যারেজ ও স্ট্যান্ডের বিষয়ে প্রক্টর মোস্তফা কামাল বিবার্তাকে বলেন, এটা নিয়ে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব আমরা। এখানে কোনো লেগুনাস্ট্যান্ড বা অবৈধ দোকান রাখতে দেয়া হবে না। তাদের স্থায়ীভাবে সরানোর জন্য চেষ্টা চলছে।
বিবার্তা/আদনান/উজ্জ্বল/রবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]