শিরোনাম
অযত্ন-অবহেলায় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ
‘টাকা না দিলে দোকান নিয়ে ঢুকতেই দেয় না আনসার’
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১০:৪৭
‘টাকা না দিলে দোকান নিয়ে ঢুকতেই দেয় না আনসার’
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যদের ঘুষ দিয়ে দোকান বসানোসহ ব্যবসা চালিয়ে যায় হকাররা
আকরাম হোসেন
প্রিন্ট অ-অ+

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতি স্মারক। এ স্মৃতিসৌধটি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রায়েরবাজার এলাকায় অবস্থিত। ৩ দশমিক ৫১ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে অযত্নে আর নানা অনিয়মে জর্জরিত।


অভিযোগ রয়েছে, টাকার বিনিময়ে হকারদের ঢুকতে দেন আনসার সদস্যরা। এসব অভিযোগ স্বীকার করলেও দায় নিচ্ছেন না কেউ। কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য এখানে সব ধরনের খাবারের দোকান, হকার ও খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে নিয়ম অমান্য করে বধ্যভূমির ভেতর ১০ থেকে ১২টি স্থানে প্রতিদিন ক্রিকেট খেলা চলে। প্রতিটি গ্রুপে ১২ থেকে ১৮ জন করে খেলোয়াড় রয়েছে।


এদিকে একজন স্মৃতিস্তম্ভের দেয়ালে ক্রিকেট বল ছুড়ে মারছে। দেয়ালে বল লেগে ফিরে আসছে। বল ধরে আবারো দেয়ালে ছোড়া হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে এভাবেই চলছে তার ক্রিকেট প্র্যাকটিস।



বধ্যভূমির ভেতর সব ধরনের খেলাধুলায় নিষেধ থাকলেও তা মানে না কেউ


সরেজমিন স্মৃতিসৌধের চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, স্মৃতিস্তম্ভের সামনে জলাধার। জলাধারের দেয়ালের উপরে দাঁড়ানো ও বসা নিষেধ। এ ব্যাপারে দেয়ালের দুই পাশে লিখিত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। নিষেধ উপেক্ষা করে পা ঝুলিয়ে বসে আছেন কয়েকজন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বাদাম খাচ্ছেন, কেউ কেউ ছবি তুলছেন।


রবিউল নামের একজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, এখানে বসা নিষেধ আমাদের সেটা জানা ছিল না। এ কারণে বসছি। এরপর থেকে আর বসবে না।


আলী হোসাইন নামে আরেকজন বিবার্তাকে বলেন, এখানে বসা নিষেধ। তারপরও বসছি। সবাই তো বসে। এ কারণেই আমরা বসছি।


স্মৃতিসৌধের চত্বরে বাদাম বিক্রি করছিলেন জোবায়ের। তাকে এখান থেকে বের হয়ে যেতে বলছেন এক আনসার সদস্য। আনসার সদস্যকে জোবায়ের বলেন, মতি নামে এক আনসার সদস্য আমাকে এখানে বাদাম বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। তারপরও জোবায়েরকে বের হতে বলায় তিনি বেশ বিরক্ত।


জোবায়ের সাথে কথা হলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, মতি নামে এক আনসার সদস্যকে নিয়মিত টাকা দিয়ে আমি এখানে বাদাম বিক্রি করি। গত দুদিন ধরে টাকা নিতে আসছেন না মতি। তারপর থেকে আনসাররা আমাকে বাদাম বিক্রয় করতে দিচ্ছেন না।


স্মৃতিসৌধ চত্বরে ঝালমুড়ি, আমড়া, বাদাম, ছোলা-বুট, নানা রঙের বেলুন, প্লাস্টিকের খেলনা, চা বিক্রেতাসহ ২৫ থেকে ৩০টির মতো দোকান ও হকার আসে নিয়মিত। প্রত্যেক হকারের কাছ থেকেই টাকা নেন আনসার সদস্যরা।


মো. জলিল মিয়া নামে এক আমড়া বিক্রেতা বিবার্তাকে বলেন, এখানে দোকান দিলে আনসারদের টাকা দিতে হয়। এখানে যারা দোকান দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের কাজ থেকে টাকা নেয়া হয়। দোকান দেয়া নিষেধ। তবে টাকা দিলে সব ঠিক, তখন নিষেধ বলে কিছু নেই। এখানে টাকাই সব।



বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বরে


জীবিকার সন্ধানে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন ইব্রাহিম মিয়া। কয়েক বছর ধরে বুদ্ধিজীবী কবর স্থানে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। তিনি জানান, মতি নামে একজন আনসার সদস্য আমাদের কাছ থেকে টাকা নেন। মতির সাথে আরো একজন আছেন, তারা দুজনে মিলে টাকা তোলেন। টাকা না দিলে দোকান নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকতে দেন না। শুক্রবার মানুষজন বেশি ঘুরতে আসেন, এদিন বেশি টাকা দিতে হয়।


তবে অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করেন আনসার সদস্য মতি। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি এখানের সব চেয়ে পুরনো নিরাপত্তাকর্মী। এজন্য সবাই আমাকে চেনেন, অভিযোগের কোনো কিছু হলেই সবাই আমার নাম বলেন। হকারদের কাজ থেকে নিজে টাকা না নিলেও অন্যরা টাকা নেন বলে স্বীকার করেন তিনি।


কারা টাকা নেন জানতে চাইলে মতি বলেন, নেতারা আছেন। তাদের লোক এসে টাকা তোলেন। টাকা তুলে সবাই ভাগ করে নেন। তবে নেতাদের নাম বলেননি তিনি।


চত্বরে ক্রিকেট খেলা প্রসঙ্গে জমিরউদ্দিন নামে আরেক আনসার সদস্য বিবার্তাকে বলেন, এখানে সব ধরনের খেলাধুলা নিষেধ। কিন্তু স্থানীয় ছেলেরা সেই নিষেধ মানে না। বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়। ব্যাট-স্ট্যাম্প দিয়ে মারতে আসে। কিছুদিন আগে এ ব্যাপারে এক আনসার সদস্যকে তারা মারধর করেছে।


বিবার্তা/আকরাম/উজ্জ্বল/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com