সঙ্কট আর সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পরিবহন খাত। ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ১৯৮০ সালে ৭টি বাস দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসের সংখ্যা ১৮টি থাকলেও এর মধ্যে সাময়িকভাবে অচল রয়েছে ৪টি। তবে বিআরটিসি হতে ভাড়া করা বাস রয়েছে ৩৫টি। এগুলো রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশের ১৯টি রুটের শিক্ষার্থীদের বহন করে থাকে। যার মধ্যে পাঁচটি রুটে একতলা বাকি ১৪টি রুটে দ্বিতল বাস চলাচল করে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সে তুলনায় বাড়ছে না পরিবহন। বিআরটিসির ভাড়া করা কিছু বাস থাকলেও, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। ফলে গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মাঝে-মাঝে অবস্থা এমন হয় যে, বাসে উঠতে-নামতে শিক্ষার্থীদের যেন যুদ্ধ করতে হয়। প্রয়োজনের তুলনায় বাসের ট্রিপের সংখ্যা কম হওয়ার ভোগান্তিও রয়েছে।
তাছাড়া এ বাসগুলোর অধিকাংশ লক্কর-ঝক্কর। ছাদ ফুটো থাকা, ইঞ্জিন খারাপ হওয়া, চাকায় গ্যাটিস মারা থাকা, গ্লাস-সিট ভাঙা থাকা এসব বাসের নিত্যদিনের ঘটনা।ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিবছর তাদের নিকট থেকে পরিবহন ও উন্নয়ন ফি বাবদ যে টাকা বিশ্ববিদ্যালয় পায়, তার পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। এ টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিবছর নতুন কয়েকটি বাস কিনতে পারে। এটা করলে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসের সংখ্যা বাড়বে। আর ভোগান্তিও কমবে। অথচ তা করা হচ্ছে না।
এদিকে, বিআরটিসিকে ভাড়া বাবদ বছরে সাড়ে ৮ কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। ভালো পরিবহন সেবা পেলে এ ব্যয়ে শিক্ষার্থীদের কোন আপত্তি থাকতো না বলে জানান তারা। এসব বাসে পরিবহন সেবার পরিবর্তে উল্টো ভোগান্তির শিকার হওয়ার কথাও জানালেন তারা।
হেমন্ত বাসে যাতায়াতকারী নুর উদ্দিন অনিক বিবার্তাকে বলেন, বাসগুলোতে এমনিতে আসন সঙ্কটের কারণে গাদাগাদি। তার উপর আবার ফ্যানের কোনো ব্যবস্থা নেই। দু-একটা বাসে ফ্যান থাকলেও তা চলে না ঠিক মতো। বেশীরভাগ বাসের সিটেরই করুণ দশা। কোনটার তো সিটই উঠে গেছে, আর যা আছে তাতে বসার মত অবস্থা নেই। কোনটার হাতল ভাঙ্গা, আবার কোনটার পায়া-ই নেই। এমনিতে রাস্তায় জ্যাম থাকে, তার উপর বেশ কিছু বাস ফিটনেসহীন হওয়ায় ধীরগতিতে চলে । ফলে সময় মতো পৌঁছাতে পারে না। যার কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস মিসসহ নানাবিধ ভোগান্তি হচ্ছে।
বাসে যাতায়াতকারী ঢাবি শিক্ষার্থী আসমা জাহান বিবার্তাকে বলেন, বাসের ট্রিপ সংখ্যা নিয়ে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দেখা যায়, সকাল ৭টার পর আর আপ ট্রিপ নেই। কাজেই ১২ টায় ক্লাস থাকলেও আমাদের সকাল ৭টার বাসে আসতে হচ্ছে। আবার দেখা যায়, ডাউন ট্রিপ ১ টা থাকে ২ টায়, আরেকটা সাড়ে ৫টায়। এক্ষেত্রে অনেকের ক্লাস ৩টায়, কারো সাড়ে ৩টায়, আবার কারো ৪টায় শেষ হয়। ফলে তাদেরকে সাড়ে ৫টার বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর যদি তারা ২ টার বাসে যেতে চান, তাহলে তাদেরকে ক্লাস মিস দিতে হবে। আপ-ডাউন ট্রিপ সংখ্যা বাড়ালে শিক্ষার্থীদের এ ভোগান্তিতে পড়তে হতো না বলে জানান তিনি।
আনন্দ বাসে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থী মিলন আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, বাসে প্রতিদিন ৮-১০ জন স্টাফ যাওয়া আসা করে, যদিও তাদের জন্য আলাদা পরিবহন ব্যবস্থা আছে। তারা আমাদের বাস ব্যবহার করায়, আমাদের অনেককে পুরো রাস্তা দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া নির্দিষ্ট নামের বাসগুলোতে বিভিন্ন রুটের বাসের স্টিকার লাগানো দেখা যায়, তাতে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়ে। অথচ এসব ব্যাপারে তদারকি করা হচ্ছে না।
উয়ারী বটেশ্বর বাস কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর বাদশা বিবার্তাকে বলেন, বিআরটিসির সবচেয়ে লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলোকে সম্ভবত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হয়। এমনিতে শিক্ষার্থীর তুলনায় বাস সঙ্কট। তার উপর আবার এবাসগুলোর বিভিন্ন রকম সমস্যার যেন লেগেই থাকে। এসব বাসের ইঞ্জিনগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় কয়েকদিন পরপর নষ্ট হয়। আবার এসব বাসের অধিকাংশগুলো ফিটনেসবিহীন। যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ঢাবির নিজস্ব বাসের সংখ্যা না বাড়ালে এ সঙ্কট দূর হবে না বলে মনে করেন তিনি।
পরিবহন সঙ্কটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ম্যানেজার কামরুল হাসান বিবার্তাকে বলেন, ঢাবির নিজস্ব বাসগুলোর জন্য বরাদ্দ হয়েছে। কাজেই যেগুলোতে ফ্যান বৃদ্ধি করা দরকার, সেগুলোতে ফ্যানের ব্যবস্থা করা হবে।
নতুন বাস কেনার বিষয়ে তিনি বলেন, বাস কেনার জন্য নতুন অর্থবছরের বাজেটে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আর এটা দিয়ে নতুন দুইটা বাস কেনার প্রস্তাবনা হয়েছে। আর এ দুইটার মধ্যে একটা যাবে লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে, আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হবে।
পরিবহন সঙ্কটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিবার্তা/রাসেল/উজ্জ্বল/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]