গত ১৬ আগস্ট মিরপুর-১০ নম্বরের অবস্থিত চলন্তিকা বস্তিতে আগুন লেগে প্রায় ১০ হাজার ঘর পুড়ে যায়। ঘর ছাড়া হয় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। শুরুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, এনজিওসহ ব্যক্তি উদ্যোগে ভুক্তভোগী মানুষদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসে।কিন্তু সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি।এদিকে সময় যাওয়ার সাথে সাথে আড়ালে চলে যাচ্ছে চলন্তিকা বস্তির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কথা।
শুরুতে রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন আশ্বাস দেয়া হয়।আশ্বাস কতটুক বাস্তবায়ন হবে? আদৌ কি বাস্তবায়ন হবে? বাস্তবায়ন হলে কবে হবে? এই সব প্রশ্ন নিয়ে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে নানান জটিলতা।সব মিলিয়ে ভুক্তভোগী মানুষের মধ্যে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে শঙ্কা। তবে এখনো আশায় বুক বাঁধছেন তারা। প্রত্যাশা করছেন সরকার তাদের থাকার একটা ব্যবস্থা করে দেবেন।
বস্তি পুড়ে যাওয়ার পরে আশপাশের স্কুলে আশ্রয় নেয় ঘরহারা মানুষেরা। ধাপে ধাপে স্কুল ঘরে থেকে তাদের চলে আসতে হয়েছে। প্রথমে সবাইকে বের করে কয়েকজন শিশু সন্তানসহ মাকে রাখা হয়েছিল। সবশেষ গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সেখান থেকেও তাদের বের করে দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছেন। কেউ কেউ নতুন বাসা নিয়েছেন। তবে কিছুসংখ্যক ভুক্তভোগী এখনো দুর্ঘটনাস্থলে রয়ে গেছেন। তাদের অধিকাংশই রাতে রাস্তায় খোলা আকাশের নীচে ঘুমাতে হচ্ছে। কেউ আশপাশের গলি ও গ্যারেজে ঘুমান। দিনে পুরুষেরা নিজেদের কর্মস্থলে কাজ করে সময় কাটান। তবে যেসব নারীরা গৃহে থাকছেন তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। তাদের দিন কাটছে রাস্তায় রাস্তায়।
অগ্নিকাণ্ডে বস্তিতে অবস্থিত কয়েকটি স্কুলও পুড়ে যায়। যার কারণে স্কুলের সকল ক র্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অনিশ্চয়তায় রয়েছে এইসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বস্তিতে নিজেদের পোড়া ভিটায় তাবু টানিয়ে রয়েছে কয়েকটি পরিবার। তাদের কাছে যেয়ে জানতে চাওয়া হয়, আর কতদিন এখানে থাকবেন? এরপরও কোথায় যাবেন? জবাবে তারা বিবার্তাকে বলেন, যদি কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকতো তাহলে কি আর এই রোদের মধ্যে তাবু টানিয়ে থাকতাম? কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে এখানে পড়ে আছি। আমাদের অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দিলে চলে যেতাম।
বস্তির আশপাশে বাসা ভাড়া নিতে গেলেও দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। বাসা ভাড়া নিতে গেলেও বাড়ির মালিকরা তাদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। আশরাফুল ইসলাম নামের এক অভিযোগকারী বিবার্তাকে বলেন, আমাদের কোনো মালামাল (গৃহস্থালি আসবাবপত্র) নেই। এ জন্য বাসা ভাড়া দিতে বাড়ির মালিকরা সাহস পান না।
রুমা বেগম বিবার্তাকে বলেন, ছোট বাচ্চা থাকলে মালিকরা বাসা ভাড়া দিতে চান না। বাসা ভাড়া নিতে গেলে আগে জানতে চান বাচ্চা আছে কিনা। বাচ্চা থাকলে দেন না। তারা বলেন জামাই-বউ (স্বামী-স্ত্রী) দুইজন থাকলে বাসা ভাড়া দিবেন। তাছাড়া ভাড়া দিবেন না।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার দুইডা বাচ্চা আছে, এ কারণে আমার কাছে বাসা ভাড়া দেয় নাই। বাচ্চা দুইডা এখন কই থুমু? বাচ্চার জন্য যদি বাসা ভাড়া না দেয় তাহলে কি আমারা বাচ্চা ম্যাইরা ফেলুম?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগুন লাগার পর থেকেই বস্তির আশপাশের বাসা ভাড়া বেড়ে গেছে। আগে যে রুম ভাড়া ৪ হাজার টাকা ছিল, সেই রুম এখন ৬ হাজার হয়ে গেছে। ৫ হাজার টাকার রুম ৭ হাজার টাকা হয়ে গেছে। গড়ে প্রায় ২ হাজার টাকা বাসা ভাড়া বেড়েছে।
রুবিনা নামের এক নারী বিবাতার্কে বলেন, দেশে (গ্রামে) খাউন পায়তাম না। দুই-বেলা খাউনের জন্য ঢাকা আইছিলাম। একটু সুখের জন্য আইছিলাম। দুই কাপড় নিয়ে দেশ থ্যাইক্যা ঢাকা আইলাম, এখন এক কাপড় পইড়া দেশে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর থানার পেছনে চলন্তিকা মোড়ে অবস্থিত একটি বস্তিতে ১৬ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে ভয়াবহ আগুন লাগে। পরে রাত সোয়া ১০টার দিকে ২১টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস।
বিবার্তা/আকরাম/উজ্জ্বল/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]