
আল্লাহর অন্যতম গুণবাচক নাম গফুর বা ক্ষমাশীল। তিনি বান্দার অপরাধের বিচার সঙ্গে সঙ্গে করতে সক্ষম; কিন্তু তিনি বান্দার অপরাধ ক্ষমা করেন, পাপীকে অবকাশ দেন এবং তওবাকারীর তওবা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মার্জনাকারী ও ক্ষমাশীল।' (সুরা নিসা ৪৩)
জুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণ ও শাস্তিদানের পূর্ণ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি কাউকে সহজে শাস্তি দেন না। তিনি যদি অসীম ক্ষমার মালিক না হতেন, তাহলে পৃথিবীতে কোনো জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের সীমা লঙ্ঘনের জন্য পাকড়াও করতেন, তাহলে পৃথিবীতে কোনো প্রাণীকেই তিনি ছাড়তেন না। কিন্তু একটি নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত তিনি তাদের অবকাশ দেন।’ (সুরা নাহল ৬১)
আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, আবার যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর আল্লাহর জন্য নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব। তিনি যাকে চান ক্ষমা করেন ও যাকে চান শাস্তি দেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।' (সুরা আহযাব ১৩-১৪)
বান্দার জন্য আল্লাহর ক্ষমা অবারিত। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে ক্ষমার আশা রাখবে, তোমার অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আমি কারও পরোয়া করি না, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে, আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কারও পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী ভর্তি গুনাহ নিয়ে আমার কাছে হাজির হও এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরিক না করা অবস্থায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করো, আমি পৃথিবীব্যাপী ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে হাজির হবো। (তিরমিজি ৩৫৪০)
আল্লাহ তাআলা কাকে ক্ষমা করেন?
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, ‘আল্লাহ ওইসব মানুষ দেখতে চান; যারা গুনাহ করে আবার ক্ষমা চায়। অন্যায় করার পর তার কাছে ফিরে আসার আকুতি জানায়। আল্লাহ তা‘আলা ওইসব ক্ষমাপ্রার্থনাকারী মানুষদের ক্ষমা করে দেন।’
মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। প্রতিনিয়ত তার কোনো না কোনো গোনাহ হয়ে থাকে। মানুষের পাহাড়সম গোনাহ হয়ে গেলেও ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তার দোষত্রুটি গোপন রেখে তাকে করেন নিরাপদ। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সে সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন। যদি তোমরা গুনাহ না কর; তবে আল্লাহ তোমাদেরকে নিয়ে যাবেন এবং এমন এক সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন, যারা গোনাহ করবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করবে। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন। (মুসলিম)
মানুষ যখনই কোনো অন্যায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন দেন মর্মে ঘোষণা করেন, ‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা আয়াত ১১০)
কাউকে ক্ষমা করলে আল্লাহ যে পুরস্কার দেবেন
আল্লাহ ক্ষমাকারীর মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। একবার এক বেদুইন পেছন থেকে শক্ত করে নবীজির চাদর টেনে ধরায় গলায় ফাঁস লাগার উপক্রম হয়, দাগ পড়ে যায়। সে কিছু চাচ্ছিল নবীজির কাছে। নবীজি পেছন ফিরে মুচকি হাসিতে বললেন তাকে কিছু দিয়ে দিতে। রাগ করেননি। বিরক্তি ভাবও প্রকাশিত হয়নি তাঁর থেকে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘সদকা করাতে সম্পদের ঘাটতি হয়না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার সম্মান প্রতিষ্ঠিত করে দেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৮)
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]