জিকির বা যিকর অর্থ হল স্মরণ করা। এই জিকিরের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মীয় লোকেরা আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে। জিকির শব্দটি আরবী ভাষার “ জিকিঅর” থেকে হয়েছে যার অর্থ আল্লার নাম স্মরণ করা। জিকির ইসলাম ধর্মের পবিত্র কাজ হিসেবে গন্য করা হয়।
জিকির আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহতায়ালা বান্দাদের সর্বাবস্থায় অধিকহারে তাঁর জিকির করার নির্দেশ দিয়েছেন।
** জিকিরের মাধ্যমেই মানুষের অন্তর পরিশুদ্ধ হয়।
** শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে মুক্তি পায় মানুষ।
** আল্লাহর দরবারে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
** জিকির বা আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিরা সব সময় জিকিরে মশগুল থাকেন।
আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি যখনই জিকির থেকে গাফেল বা বেখেয়ালি হয় তখনই শয়তান তার কাঁধে চড়ে বসে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেন-
وَ مَنۡ یَّعۡشُ عَنۡ ذِکۡرِ الرَّحۡمٰنِ نُقَیِّضۡ لَهٗ شَیۡطٰنًا فَهُوَ لَهٗ قَرِیۡنٌ وَ اِنَّهُمۡ لَیَصُدُّوۡنَهُمۡ عَنِ السَّبِیۡلِ وَ یَحۡسَبُوۡنَ اَنَّهُمۡ مُّهۡتَدُوۡنَ
‘যে ব্যক্তি পরম দয়াময় আল্লাহর স্মরণে উদাসীন হয়; তিনি তাঁর জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করেন; এরপর সে হয় তাঁর সহচর। শয়তানরাই মানুষকে সৎ পথ থেকে বিরত রাখে। আর মানুষ মনে করে তারা সঠিক পথে আছে। (সুরা যুখরুফ : আয়াত ৩৬ ও ৩৭)
শয়তানের এ আক্রমণ থেকে মুমিন মুসলমানের বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনের অনেক জায়গায় নসিহত পেশ করেছেন। শয়তানের অবিরাম গোমরাহীর প্রচেষ্টার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আর যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন এবং সব জানেন। নিশ্চয় যারা সাবধান হয়, যখন শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আত্মসচেতন হয় এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চোখ খুলে যায়। আর যারা শয়তানের ভাই, শয়তানেরা তাদেরকে ভ্রান্তির দিকে টেনে নেয় এবং এ বিষয়ে তারা কোনো ত্রুটি করে না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২০০-২০২)
এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে বসে-দাঁড়িয়ে-শুয়ে তথা জীবনে প্রতিটি কাজে বেশি বেশি তাঁর জিকির তথা স্মরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর এ জিকির বা স্মরণের ফলে মানুষ প্রথমত শয়তানের গোমরাহী থেকে মুক্তি পায়। জিকিরের মাধ্যমেই বান্দা জাহান্নামের কঠিন আগুন থেকে মুক্তি পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
الَّذِیۡنَ یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِهِمۡ وَ یَتَفَکَّرُوۡنَ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هٰذَا بَاطِلًا ۚ سُبۡحٰنَکَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
‘যারা দাঁড়িয়ে বসে এবং শুয়ে আল্লাহর (জিকির) স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে এবং (বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এ সব নিরর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯১)
শয়তানের আক্রমণ ও ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর স্মরণে বিকল্প নেই। তাছাড়া আল্লাহর স্মরণেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে আপন করে নিয়ে ঘোষণা দেন-
فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ وَ اشۡکُرُوۡا لِیۡ وَ لَا تَکۡفُرُوۡنِ
‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও; মুখ ফিরিয়ে নিও না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)
কখনো জিকির থেকে গাফেল হওয়া যাবে না। জিকির থেকে গাফেল হলে সৃষ্টির ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নানা বিপদাপদ নাজিল হয়ে থাকে। যারা জিকির থেকে গাফেল হয় তাদের দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে এবং যে আল্লাহর জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতদের মতো। (বুখারি : ৬৪০৭, মুসলিম : ৭৭৯)।
জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার যোগসূত্র তৈরি হয়। বান্দা আল্লাহর দয়া ও মাগফিরাত লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা যদি আমার হুকুমের আনুগত্যের মাধ্যমে আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের সওয়াব ও মাগফিরাতদানের মাধ্যমে স্মরণ করব। (সূরা বাকারা : ১৫২)।
শয়তান মানুষকে পাপ কাজে লিপ্ত করে। আর পাপের কারণে মানুষের অন্তরে কালিমা সৃষ্টি হয়। এই কালিমা দূরীভূত হয় আল্লাহর জিকির দ্বারা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, প্রত্যেক বস্তু পরিষ্কার করার উপকরণ আছে। আর অন্তরের ময়লা পরিষ্কার করার উপকরণ হলো আল্লাহর জিকির। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব : ২/৩২৭)।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]