আন্তর্জাতিক নির্ভরশীলতা নয়, কঠোর আন্দোলনে মনোযোগী বিএনপি
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৯
আন্তর্জাতিক নির্ভরশীলতা নয়, কঠোর আন্দোলনে মনোযোগী বিএনপি
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।


রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে, নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনের উপর অর্থাৎ বিদেশ নির্ভরতা রয়েছে বিএনপির। এমন আলোচনা থাকলেও আন্দোলনেই জোর দিচ্ছে বিএনপি।


শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় না হলে 'ডু অর ডাই' লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।



নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও চলমান ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে কেউ নমনীয় নয়। প্রতিদিন ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক, পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।


আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে অনড়। অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের কাটাছেঁড়া করা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে।



বিএনপি নেতারা বলছে, আওয়ামী লীগের অধীনে কোন নির্বাচন নয়। নির্বাচনের পূর্বে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তাদের চলমান আন্দোলনে যদি দাবি আদায় না হয় তাহলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে বাধ্য হবে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো।



এদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার( ৯ অক্টোবর) ঢাকায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি। বনানীর হোটেল শেরাটনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।


ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সমঝোতার পথ বিএনপি বন্ধ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটা বাতিল বিষয়কে সামনে নিয়ে এসে- সংসদ বিলুপ্ত করার দাবি করে তারা সমঝোতার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।


বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে দফায় দফায় নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপকভাবে প্রতিনিধিত্বতা জোরদার করার চেষ্টা করে বিএনপি। এজন্য ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে দলটি।


সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ নেতারা চেয়েছেন যে সকল রাষ্ট্র বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় সেসকল দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে দলের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলকে একটি ভাল অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে দলটি। এখন আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে ঘরে ফিরতে চায় বিএনপির হাই কমান্ড।


ঢাকা মহানগরের কয়েকজন নেতা জানান, গত ১০ ডিসেম্বরের পূর্বে বিভাগীয় সমাবেশ গুলোতে বাধা ধরপাকড় সহ নানা ধরনের জটিলতায় পরে বিএনপি। এরপর বিদেশীদের চাপে আন্দোলনের মাঠ তৈরি হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ থাকলেও তারা কখনোই বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। তারা আন্দোলনের মাঠ তৈরি করে দিয়েছে। এখন আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায় বাধ্য করার দায়িত্ব বিএনপিকেই নিতে হবে। সরকার পতনের এক দফা যপ আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। চলমান আন্দোলনে দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে করা হবে মনে করেন তারা।


রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকেই বিদেশ নির্ভরতা রয়েছে বিএনপির। যদিও এমন আলোচনার বিষয়ে কর্ণপাত না করে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকে জোর গলায় বলছেন, বিএনপি দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করে, বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে নয়।


শেষ ধাপের সব কর্মসূচি ঢাকাকেন্দ্রিক হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে ৯ থেকে ১৮ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১৮ অক্টোবর রাজধানীতে জনসমাবেশ ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেছেন, 'এর মধ্যে সরকার পদত্যাগ না করলে ওই জনসমাবেশ থেকে শেষ কর্মসূচি দেওয়া হবে। শেখ হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী) পরিষ্কার বলতে চাই অনেক রোডমার্চ করেছি, সমাবেশ করেছি। এরপর রোডমার্চ নেই, সমাবেশও নেই। সব কর্মসূচি হবে রাজধানী ঢাকায়। এবার রাজধানীর পতন ঘটাতে হবে।'


বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্র ঐক্যের ছাত্র কনভেনশনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। সময় শেষ হয়ে গেছে। তাই বাইরের দেশে দৌড়ে লাভ হবে না।


মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে। তাই কোনো জায়গায় আর ধরনা দিয়ে লাভ হবে না। আপনারা আর থাকতে পারবেন না। তাপরও শেষ সময়ে দৌড়াচ্ছেন কোনোভাবে টিকে থাকা যায় কি না। কিন্তু দেশের জনগণ আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) আর ক্ষমতায় রাখবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।


বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, বিএনপি কোনো বিদেশিদের উপর নির্ভরশীল নয়, আমরা জনগণের উপর নির্ভরশীল। আন্দোলন শুধু হরতাল অবরোধের মধ্যে নয়। জনগণের যে আন্দোলন সেটা হচ্ছে। আমরা কোনো সংঘাতে যেতে চাই না। সরকার যদি কোনো কর্ণপাত না করে আন্দোলন বলতে আপনারা যেটা বুঝাচ্ছেন সে আন্দোলনে যেতে আমাদের কোন দ্বিধা থাকবে না।



বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিবার্তাকে বলেন, ওরাই (আওয়ামী লীগ) তো বলছে দিল্লি আমাদের সাথে রয়েছে। তলে সব আপস হয়ে গেছে। দেশ বিদেশে গণতন্ত্র একটি সার্বজনীন দর্শন, একটি পদ্ধতি। গণতন্ত্রের জন্য যে লড়াই আমরা করছি সেই লড়াই যে-কোন গণতন্ত্রকামী মানুষ সমর্থন করতে পারে। এখানে আমরা যারা লড়াই করছি, সংগ্রাম করছি তারা জনগণের ওপর নির্ভর করেই করছি।



বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমরা কখনো বিদেশিদের কাছে ধরনা দেই না। বিদেশিদের নিকট আওয়ামী লীগই ধরনা দেয়। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন দেশে দেশে দৌড়ঝাঁপ করে আর তাদের সাধারণ সম্পাদক বলেন- বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়। এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা। আমাদের বিদেশিদের নিকট দৌড়ঝাঁপ করার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ বিএনপি জনগণের দল, জনগণ নিয়েই বিএনপি রাজনীতি করে। বিএনপির চলমান আন্দোলনে দিন দিন সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাড়ছে। সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ততা করেই এই সরকারের পতন নিশ্চিত করবো।


বিবার্তা/এমই/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com