ধর্মের নামে মিথ্যাচার করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে জামায়াত: হানিফ
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:২৩
ধর্মের নামে মিথ্যাচার করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে জামায়াত: হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জামায়াতে ইসলামী দেশের অল্প শিক্ষিত মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, বোকা বানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।


তিনি বলেন, যারা জামায়াতে ইসলামী করে এরা কেন করে আমি জানি না। এরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার জন্য সবচেয়ে বড় পাপী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এরা ইসলামিক দল নয়, ধর্মীয় দল নয় বরং তারা রাজনৈতিক দল। দলের নামের সাথে ইসলাম ব্যবহার করে দেশের মানুষকে ধোঁকা দেয়। দেশের অল্প শিক্ষিত মানুষ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, বোকা বানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়।


বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারস্বরূপ শিক্ষার্থীদের মাঝে ট্যাবলেট বিতরণ, পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও কৃষকদের মাঝে পেঁয়াজ ও মাসকালাইয়ের বীজ ও বিনামূল্যে সার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা প্রশাসন।



জামায়াত দেশে কোন ইসলাম কায়েম করতে চায়- এমন প্রশ্ন রেখে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, তারা একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। এ কাজের জন্য আজও তারা দুঃখ প্রকাশ করেনি, ক্ষমা চায়নি এমনকি ভুলও স্বীকার করেনি। এখনো তারা মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। ধর্মের নামে রাজনীতি করে তারা মানুষের হাত-পায়ের রগ কাটে। এটা কোনো ধর্মের কাজ হতে পারে না।


তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী অন্যায় কাজ করে মিথ্যাচার করছে। বেহেশতের যে বিধান আছে সেই বিধান অনুযায়ী কিয়ামতের দিন এই জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। তারা যদি বেহেশতে যায় তাহলে ধর্ম মিথ্যা হয়ে যাবে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম মিথ্যা হতে পারে না।


বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। এ ধর্ম সত্যের প্রতীক, জ্ঞান ও শান্তির প্রতীক। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি আমাদের ধর্ম সমর্থন করে না, বলেন তিনি।



আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পরে ইসলামের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন শেখ হাসিনা। একসময় মাদ্রাসা শিক্ষা মানে ছিল এতিমদের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে, ধর্ম নিয়ে অনেক রাজনীতি হয়েছে। যদিও ধর্ম রাজনীতির জায়গা নয়; ধর্ম মানুষের ঈমানের জায়গা, অন্তরের জায়গা, উপাসনার জায়গা। কিন্তু ধর্মকে রাজনীতির মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এক সময় এরকমও প্রচার ছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ধর্ম থাকবে না।


হানিফ বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল ২০০৪ সালের খালেদা জিয়া নিজে বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে এই দেশের মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে। এরকম সব কথা হয়েছে অথচ অনেকে জানে না এদেশে ইসলামের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা আইন হয়েছিল ১৯৭২ সালে, সেটাও বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি করা। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে ট্যাবলেট তুলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।


বাংলাদেশে তাবলীগের বিশ্ব ইজতেমা হয়। পৃথিবীর মধ্যে পবিত্র হজের পরের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত হয় বিশ্ব ইজতেমায়। ইজতেমার সেই জায়গাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া। কাকরাইলের মসজিদ সেটাও বঙ্গবন্ধুর দেয়া। যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করার কাজ হয় সেটিও বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া- বলেন তিনি।


হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পরে অনেকে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেছেন কিন্তু কোন কাজ করেনি। তারা শুধু মুখে বলেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ করেছেন। পৃথিবীর কোন মুসলিম দেশে একসাথে একশ' মসজিদ করেছে এরকম নজিরও নেই কিন্তু শেখ হাসিনা করেছেন।


দেশের সবচেয়ে বড় সফলতা উদাহরণ কৃষি খাত- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, কৃষি খাতে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এই সফলতার পিছনে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সত্তরের দশকে দেশে যখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল তখনও খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল। মানুষ দু'বেলা খেতে পারত না। আর এখন হোক মানুষ হয়ে গেছে ১৮ কোটি কিন্তু মানুষ তিন বেলাই খাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। কৃষি খাতের এই অভাবনীয় উন্নয়ন দেশের সবচেয়ে বড় সফলতা। এই সফলতার পিছনে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।


হানিফ বলেন, ১৯৭৪ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছিল। আমাদের দেশের পরিস্থিতি ও খাদ্য উৎপাদনেও সমস্যা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সরকার সেই সময়ে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম কিনেছিলেন। কিন্তু সেই সময়ে মার্কিন সরকার আমাদের দেশে গম না দিয়ে পাঠিয়েছিল উগান্ডায়। আমরা তখন একটা ভয়াবহ সংকট এর মধ্যে পড়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেই সময়ে কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে কিভাবে খাদ্য ঘাটতি পূরণ করা যায়, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যায় সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। যার কারণে আজকে আমরা ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছি।


আগামীতে কখনো বাংলাদেশে পেঁয়াজ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা পেয়াজ আমদানি করে আর যখন থেকে সংকট তখনই সুযোগ পেয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। বর্তমান সরকার পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণ করার জন্য নতুন বিজ আমদানি করা হয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশ কখন পেঁয়াজ নিয়ে কখনো ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।


আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদের সহায়তা করছেন। একসময় সারের জন্য কৃষকরা ঘুরতে হয়েছে, নিদারুণ কষ্ট করতে হয়েছে। এখন ডিলার বাদ দিয়ে সরকারিভাবে সার দেয়া হচ্ছে, সার এখন মানুষের দোঁরগোড়ায়।


আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ১৯৭৩-৭৪ সালে দেশে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হতো। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হতো আর এখন ৪ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। কৃষকদেরকে সঠিক সময়ে সার, বীজ এবং কীটনাশক সরবরাহ করার কারণে এ ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।


বিবার্তা/সোহেল/শরীফুল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com