চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি
প্রকাশ : ২৮ জুন ২০২৩, ১৪:২৩
চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি
মো. ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

এক দফা চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে গত ছয় মাস নানা কর্মসূচি পালন করলেও দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম দ্রুত সময়ের মধ্যে এক দফা আন্দোলনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শরিক দলগুলোর সাথেও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। জুলাই মাসের মাঝামাঝি রাজধানীতে বড় সমাবেশ করে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। ‘একদফা’ চূড়ান্ত আন্দোলন হলেও কর্মসূচিতে কয়েকটি দাবি থাকবে। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহারের দাবি মিলিয়ে এই ‘একদফা’ হতে পারে।



বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাদানকারী ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না দেয়ার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে দলটি। এতে সরকার চাপে পড়েছে বলে মনে করছে তারা। এ পরিস্থিতিতেই সরকারবিরোধী একদফা চূড়ান্ত আন্দোলনের সঠিক সময় বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তাই স্থায়ী কমিটির সভায় একদফা আন্দোলন শুরু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। সভায় একদফা আন্দোলনে নামার পাশাপাশি রাষ্ট্র সংস্কারের ‘যৌথ রূপরেখা’ চূড়ান্তকরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব এ আন্দোলন শুরু করতে হবে। এর অংশ হিসেবে ঈদের ছুটি শেষে জুলাইয়ের মাঝামাঝি এ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।



জানা গেছে, এক দফার আন্দোলনকে সামনে রেখে বেশ কিছুদিন ধরে দলের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, দলের সাবেক এমপি-মন্ত্রী এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রাথমিক ও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের সাথে বৈঠক করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এর বাইরে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথেও কয়েক দফা সমন্বয় বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে সবাইকে দ্রুত এক দফার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ চূড়ান্ত করেই একদফার আন্দোলনে যেতে চায় প্রধান শরিক বিএনপি। তার আগে আলোচনার মাধ্যমে এ ইস্যুতে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সৃষ্ট মতানৈক্য দূর করতে চান নীতিনির্ধারকরা। তবে ঘোষণাপত্র নিয়ে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য না হলে দলটি নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকেও একদফার আন্দোলন ঘোষণা করতে পারে। আর সেক্ষেত্রে দাবি আদায়ে মিত্ররা যার যার অবস্থান থেকে সেই আন্দোলন চালিয়ে যাবে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমরা আন্দোলনের মধ্যেই রয়েছি। সব কিছুতেই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এখন আন্দোলন করছি, যখন একদফা আন্দোলনে যাব, তখন যেভাবে করতে হয় সেভাবেই করব। পরিস্থিতি সেটা বলে দেবে। একদফা আন্দোলনের ধরনটা এখনো বলা যাচ্ছে না- কিন্তু দ্রুত একদফা আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।


চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া সর্বোচ্চ প্রস্তুতির জন্য আমরা কাজ করছি।


আন্দোলনের ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্দোলনের ধরন এখনও বলা যাচ্ছে না কিন্তু সরকারের আচরণের ওপর আমাদের আন্দোলনের নির্ভর করবে। সরকার যদি দাবি না মানে তাহলে আমাদের অলআউট মুভমেন্ট ছাড়া কোন পথ নেই। এ সরকার যে ভোট চোর, তারা যে আবার নতুন করে আগের মতো নির্বাচন করতে চাচ্ছে- সম্প্রতি মন্ত্রীদের বক্তব্য এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এটাই প্রমাণ হচ্ছে। সরকার একগুঁয়েমি করতে গিয়ে, তাদের একরোখা মনোভাব দেখাতে গিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক খেলার মাঠে পরিণত করেছে। যেটা দেশের জন্য অশনি সংকেত, ভয়াবহ পরিস্থিতি। জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি; কারণ বাংলাদেশকে তারা অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে অতি দ্রুত সময়ে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য বলছি। কিন্তু দাবি মেনে না নিয়ে তারা দেশকে আন্তর্জাতিক খেলার মাঠে পরিণত করেছে। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকেই দায় দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। আমরা অচিরেই চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছি।


জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের (১১ দল) সমন্বয়ক এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বিবার্তাকে বলেন, এক দফা আন্দোলনের বিষয়ে আমরা সকলেই একমত হয়েছি। কবে নাগাদ এই আন্দোলন হতে পারে সেটা বিএনপি সিদ্ধান্ত নিবে। কিন্তু জুলাইয়ের মাঝামাঝি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এক দফা আন্দোলন হবে এটা সিদ্ধান্ত হয়েছে।


সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফার ভিত্তিতে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত যুগপৎভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। ওই সময় পর্যন্ত গণমিছিল, গণঅবস্থান, মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণসমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে ঈদের পর থেকে বিএনপি এককভাবে কর্মসূচি করছে। সর্বশেষ গত ১৭ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত দেশব্যাপী পদযাত্রা ও জনসমাবেশ করে দলটি। এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গত ৮ জুন জেলায় জেলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। আর ঘন ঘন লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগর ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ সারা দেশের মহানগরগুলোতে পদযাত্রা করেছে দলটি।


যুব, ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ছয় বড় শহরে চলছে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, বগুড়া ও বরিশালে সমাবেশ শেষ করেছে। এবার বিএনপির চার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কৃষক দল, শ্রমিক দল, তাঁতি দল ও মৎসজীবী দলের যৌথ উদ্যোগে ৬ বিভাগে পালন করবে পদযাত্রা। ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগের পদযাত্রা নোয়াখালীতে, ১৯ জুলাই রংপুর বিভাগের পদযাত্রা দিনাজপুরে, ২৮ জুলাই রাজশাহী, ৫ আগস্ট খুলনা বিভাগের পদযাত্রা যশোরে, ১২ আগস্ট সিলেট বিভাগের পদযাত্রা হবিগঞ্জে ও ১৯ আগস্ট বরিশালে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।


এর আগে ছয় বড় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শুরু করেছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। চট্টগ্রাম, বগুড়া ও বরিশালে সমাবেশ শেষ করেছে। আগামী ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনা এবং সর্বশেষ ২২ জুলাই ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তা শেষ হবে। আর ঢাকায় তারুণ্যের ওই সমাবেশ ঘিরে সরকারকে বড় ধাক্বা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।


বিবার্তা/এমই/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com