'জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে আওয়ামী লীগ'
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩, ১১:২৪
'জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে আওয়ামী লীগ'
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

এক দশক পর প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে রাজধানীতে প্রকাশ্যে সমাবেশ করেছে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশে অংশ নিয়ে দলটির নেতারা সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছে।


এদিকে দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতি থেকে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসলামী দলের নেতারা। তারা বলছেন, স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি সময়ের ব্যাপার বলেও নানা সময়ে মন্তব্য করেছেন। এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে সরকার ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। অনুমতি দেয়ার এ ধারা অব্যাহত থাকলে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।


জানা যায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ রাজধানীতে প্রকাশ্যে জনসভা করেছিল জামায়াত। এরপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালে দেশজুড়ে বাসে অগ্নি সংযোগ, ভাঙচুরসহ নাশকতা চালায় দলটির নেতা-কর্মীরা। ফলে জামায়াতে ইসলামীকে প্রকাশ্যে সমাবেশ করার অনুমতিও দেয়নি সরকার। অন্যদিকে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয়ভাবে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেনি দলটি।


২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠের রাজনীতিতে আবারো প্রকাশ্যে এসেছে জামায়াত। গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশের পরদিন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চারজন মন্ত্রী জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশ করতে দেয়ার পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন।


নির্বাচনের ছয় মাস আগে সরকারের অনুমতি নিয়ে দলটির এমন সমাবেশ ঘিরে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী মূলবোধ নিয়ে গড়ে ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে। দলগুলোর নেতারা বলছেন, জামায়াতকে আবারো প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার এমন সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি।


দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনীতি থেকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট। জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, জামায়াতের যে রাজনৈতিক দর্শন আমরা তা সমর্থন করি না। তাদের দর্শন ছিল উগ্রবাদিতা। সময়ে সময়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তারা সশস্ত্র ঘটনাবলী ঘটিয়েছে।


তিনি বলেন, যারা ২০১৩, ২০১৪, ও ২০১৫ সালে অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত ছিলেন, রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস করেছেন। এখনো শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। যারা তাদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে- তাদের হত্যা করবেন, নিজেদের মত চাপিয়ে দিবেন এবং নানামুখী ষড়যন্ত্র করবেন, এদেরকে রাস্তায় নামতে দেয়া সরকার ও জনগণের জন্য কতটা কল্যাণের সেটা সরকার বিবেচনা করবে।


২০০৯ সালে জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন ব্যক্তি। এরপর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।


তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বিবার্তাকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল চেয়ে তরিকত ফেডারেশন রিট করেছিল। এরপর তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগেও আমরা মামলা করেছিলাম। সেই কারণে তাদের গ্রেফতারও করা হয়েছিল।


তিনি বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরোধীতা করেছে। এদেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে মুক্তিযুদ্ধে যারা রাজাকার, আল শামস ছিল- তাদের মন্ত্রী বানিয়েছে। সেই জামায়াতে ইসলামী এখন প্রকাশ্যে সমাবেশ করছে। সরকার কি জন্য অনুমতি দিয়েছে জানা নেই। তবে সরকারের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না যাতে করে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেজামে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা হারিসুল হক বিবার্তাকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। সরকার সমাবেশের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে এতোটা সহযোগিতা করলে সরকার ভুল করবে।


জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিল ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সভা-সমাবেশ অংশ নিয়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতারা। জানতে চাইলে ইসলামি গণতান্ত্রিক পার্টির মহাসচিব নুরুল ইসলাম খান বিবার্তাকে বলেন, জামায়াত স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। এ অপশক্তিকে রুখতে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। যেহেতু তারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে অন্যায় করেছে। পরে এ নিয়ে তারা অনুতপ্ত হয়নি এবং ক্ষমাও চায়নি। তাই এ দেশে তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না।


তিনি বলেন, কিছুদিন আগে হঠাৎ করে তারা অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করল। তাদের অনুমতি দিয়ে সরকার ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com